হিট স্ট্রোকের চিকিৎসা জানা নেই কারও

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো গত সোমবার রিকশা নিয়ে বাসা থেকে বের হন রাজধানীর বকশীবাজারের আবদুল আওয়াল (৪৫)। প্রচন্ড গরমে বকশীবাজারের কাছেই ঢাকা নার্সিং কলেজের পেছনের রাস্তায় অচেতন হয়ে পড়ে যান তিনি। পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তাদের ধারণা তিনি হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন।

বগুড়ার শেরপুরে গত ২৪ এপ্রিল দুপুরে গরম উপেক্ষা করে জীবিকার তাগিদে বাড়ির পাশের জমিতে ঘাস কাটতে যান কৃষক মো. আবদুস ছালাম (৬০)। কাজ শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি জমিতেই জ্ঞান হারান এবং তার মৃত্যু হয়। স্থানীয় চিকিৎসকরা তার মৃত্যুর জন্য হিট স্ট্রোককে দায়ী করেন।

আবদুল আওয়াল কিংবা আবদুস ছালামই নন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্র (১৯ এপ্রিল) থেকে বুধবার (২৪ এপ্রিল) পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রায় সারা দেশেই তাপপ্রবাহ বইছে। নয়টি অঞ্চলে বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এসব অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর। এমতাবস্থায় দেশে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) থেকে আরও তিন দিনের হিট অ্যালার্ট বা ‘তাপ সতর্কতা’ জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। চলতি মাসে এ নিয়ে টানা চতুর্থ দফায় ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করা হলো। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘বড় পরিসরে বৃষ্টি হয়ে তাপপ্রবাহ দূর হওয়ার সম্ভাবনা আপাতত নেই। এপ্রিল মাসের শেষেও তাপপ্রবাহ দূর হওয়ার সম্ভাবনা নেই বরং এ প্রবাহ মে মাসের ২-৩ তারিখ পর্যন্ত চলবে। এরপর হয়তো বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু বৃষ্টি হতে পারে। স্থানীয়ভাবে কোথাও কোথাও বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টি হতে পারে।’

তাপপ্রবাহের কারণে বাইরে বেরিয়ে অনেকেই হিট স্ট্রোক (তাপাক্রান্ত) হয়ে মারা যাচ্ছেন। কেউ কেউ তাপাক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গরমের কারণে ডায়রিয়া, পেটের পীড়া, ঠান্ডা, জ্বর-কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, পানিশূন্যতা প্রভৃতি রোগে আক্রান্তদের ভিড় বাড়ছে হাসপাতালে। গত কয়েক বছরে দেশে হিট স্ট্রোক বেশ পরিচিতি পেয়েছে। তবে বছরে কত মানুষ হিট স্ট্রোকে পড়েন বা তাপাক্রান্ত হন, এ কারণে কত মানুষ মারা যান তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। চলতি তাপপ্রবাহে কত মানুষ মারা গেছেন সে বিষয়েও সরকারি বা বেসরকারি ডেটাবেজ তৈরি হয়নি। হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়েও স্বচ্ছ ধারণা নেই চিকিৎসকদের। কী কী উপসর্গ নিয়ে মানুষ হিট স্ট্রোকে মারা যায় বা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে গেলে তাকে কী চিকিৎসা দেওয়া দরকার, সে বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা নেই অনেক চিকিৎসকের।

সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক ডা. মাহবুব হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেউ হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তাকে ঠিক কীভাবে চিকিৎসা দিতে হবে সে বিষয়ে আমাদের ধারণা নেই। এমনিতে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিই, তারপর সুস্থ না হলে তাকে বিভাগীয় হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক চিকিৎসক বলেন, ‘আমরা মেডিকেলে পড়ার সময় দেশে হিট স্ট্রোকের বিষয়টি ছিল না। ফলে আমাদের এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই। আমরা ধারণাবশত প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থাকি, এতে বেশিরভাগ রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন।’ 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের অভিমত অনুযায়ী, তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি হলে মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি হলে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

প্রচণ্ড গরম আবহাওয়ায় শরীরের তাপনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে ঘাম বন্ধ হয়ে যায় এবং আক্রান্ত ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে, এ অবস্থাকেই হিট স্ট্রোক বলে। শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে ত্বকের রক্তনালি প্রসারিত হয় এবং অতিরিক্ত তাপ পরিবেশে ছড়িয়ে দেয়। ঘামের মাধ্যমেও শরীরের তাপ কমে। কিন্তু প্রচণ্ড গরম ও আর্দ্র পরিবেশে বেশি সময় অবস্থান করলে বা পরিশ্রম করলে তাপনিয়ন্ত্রণ আর সম্ভব হয় না। তখন শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বিপদসীমা ছাড়িয়ে যায় এবং হিট স্ট্রোক হয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে - dainik shiksha কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা - dainik shiksha ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন - dainik shiksha সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল - dainik shiksha ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে - dainik shiksha নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003978967666626