তিনি এসএসসি পাসই করেননি। কিন্তু আরেকজনের এসএসসির সনদ ব্যবহার করে প্রথম নাম ও পরে বয়স সংশোধন করিয়ে পুরোদস্তুর এসএসসি গ্রাজুয়েট বনে গিয়েছিলেন। এই কীর্তিমতি যুক্তরাষ্ট্র গমনেচ্ছু শামীমা আক্তার।
এদিকে নাম ও বয়স সংশোধনের যে নীতিমালা রয়েছে তা থোড়াই কেয়ার করে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে বোর্ডের সচিব আজাদ হোসেন চৌধুরী।
ঢাকা শিক্ষাবোর্ড কর্মচারী ইউনিয়নের একজন নেতা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, নেম ও এইজ কারেকশন সভায় নানা ছলচাতুরি করে হুদাই শামীমা আক্তারকে এসএসসি পাসের সনদ দেয়ার সব ব্যবস্থা চূড়ান্ত করা হয়েছিল। একথা বোর্ডের প্রায় সবাই জানেন। কিন্তু দৈনিক শিক্ষাডটকম থেকে অনুসন্ধান শুরুর পর তড়িঘড়ি করে সেই আদেশ স্থগিত করা হয়। বলা হয় শামীমাকে সনদ দেয়ার প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়ছে।
নাম প্রকামে অনিচ্ছুক ওই নেতা বলেন, এখন বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা বলে বেড়াচ্ছেন, শামীমার জন্ম তারিখ সংশোধন করে নতুন সনদ দেয়া সংক্রান্ত আদেশটি বাতিল করা হয়েছে।
জানা যায়, বয়স ও নাম সংশোধনের আবেদনকারী জালিয়াত শামীমা আক্তারের আবেদনটি গত মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত বোর্ডের জন্ম তারিখ ও বয়স সংশোধন সভায় অনুমোদন পায়। বোর্ডের বৃত্তি শাখার উপ-সচিব মীর আশরাফ আলী স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ তথ্য জানা যায়্।
বোর্ডের সভায় শামীমার নতুন জন্ম তারিখ করে দেয়া হয়, ১ জানুয়ারি ১৯৬৯। আর আগে ছিলো ১ সেপ্টেম্বর ১৯৬৭। রহস্যময় আবেদনে শামীমা এসএসসি পরীক্ষার পাসের সন দেখিয়েছিলেন ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দ। যার নিবন্ধন নম্বর ৫৩৬০৭ ও রোল ৯৫৬৬১। অথচ তিনি এসএসসি পাসই করেনি। ঢাকা শিক্ষাবোর্ড হুদাই একজনকে এসএসসি পাসের সনদ দিয়ে দেয়ার সব আয়োজন চূড়ান্ত করেছিল।
দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায়, একইভাবে ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড থেকে প্রথমে দাখিল সনদ ও পরে আলিম সনদ বের করেছিলেন মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত জামাত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাইদী। মাত্র ৮ বছর বয়সে কথিত দাখিল পাস করার ৪৩ বছর পর সনদে জন্ম তারিখ ও নাম বদলে ফেলেছিলেন সাঈদী। বাস্তবে পুরোটাই জালিয়াতি। নির্বাচনী হলফনামায় সনদ দেখাতে হয়েছিলো সাঈদীকে। সনদ জালিয়ায়াতিতে সহায়তা করেছিলো মাদরাসা বোর্ডে কর্মরত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা মো. ইউসুফ, আবদুন নূর ও সালেহউদ্দিনসহ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কয়েকজন কর্মকর্তা। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে ধরা পড়ে সেই জালিয়াতি। এরপর আন্ত শিক্ষাবোর্ড কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয় পাবলিক পরীক্ষায় পাস করার দুই বছর পার হয়ে গেলে কারো সনদের জন্ম তারিখ বদলানো যাবে না। জন্ম তারিখ বদলাতে হলে পাস করার দুই বছরের মধ্যে আবেদন করতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও বোর্ডের ওই নিয়ম অনুমোদন করে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শামীমার আবেদন আইডি ৫৮২৩৭। এর পুরো তথ্যই সাজানো এবং বাস্তবে কোনো জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেয়া হয়নি। রাজধানীর বকসি বাজারে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড অফিসের গেটের পাশে চেয়ার টেবিল নিয়ে অপেক্ষমান দালালদের দিয়ে এসব আবেদন করানো হয়। বয়স সংশোধনের এসব আবেদন যাচাই করলে আরো অনিয়ম ধরা পড়বে বলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান।
হুদাই একজনকে এসএসসি পাসের সনদ দেয়ার এই পদ্ধতির বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, অভিযোগ পেয়ে বিষয়টা স্টপ করিয়েছি। কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বোর্ড সচিব আজাদ হোসেন চৌধুরী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এমন অনেক আছে সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। শামীমারটাও বাতিল করা হয়েছে।