বাংলা ভাষার নিরন্তর সংগ্রামী অভিযাত্রী ছিলেন প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদ। দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেল এই সত্যনিষ্ঠ সংগ্রামীর চলে যাওয়ার ১৯ বছর। আজ ১২ আগস্ট তার ১৯তম প্রয়াণ দিবস।
২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে উগ্রপন্থি জঙ্গিরা তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে, যা এই লেখককে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। হামলার পর তিনি ২২ দিন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) এবং ৪৮ দিন ব্যাংককে চিকিৎসা নেন। একই বছরের ৭ আগস্ট জার্মানের প্রতিবাদী কবি হাইনরিশ হাইনের ওপর গবেষণা বৃত্তি নিয়ে তিনি জার্মানিতে যান। এর পাঁচ দিন পর ১২ আগস্ট মিউনিখের নিজ ফ্ল্যাটে তাকে রহস্যজনকভাবে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। যে রহস্যের আজো কোনো কূল-কিনারা হয়নি।
জানতে চাইলে হুমায়ুন আজাদের মেয়ে মৌলি আজাদ ভোরের কাগজকে বলেন, নির্ভয়ে সত্য উচ্চারণ করার মতো সাহসী বুদ্ধিজীবী আমার বাবা। ছিলেন প্রথাবিরোধী, অসা¤প্রদায়িক চেতনা ও মুক্তিবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। তিনি কোনো দলাদলিতে ছিলেন না। সমাজের বাস্তবতা নিয়ে তিনি নিজে যা বুঝতেন, তা-ই প্রকাশ করতেন। এ দেশের ধর্মীয় উগ্রবাদী-মৌলবাদীদের দৈনন্দিন ও পূর্বাপর কীর্তিকলাপ নিয়ে তিনি স্পষ্টভাবে বলতেন। এর জন্য তাকে জঙ্গিরা টার্গেট করেছে। আমরা চিরতরে হারালাম আমাদের প্রিয় বাবাকে।
তিনি বলেন, এই সরকারের আমলেই আমরা বিচার চেয়েছিলাম। বিচারের রায় পেয়েছি। কিন্তু তা কার্যকর হচ্ছে না। এটা দুঃখজনক।
মৌলি আজাদ বলেন, আমার বাবা চলে গেলেও বাংলা সাহিত্যের জন্য তার অসামান্য অবদান রয়ে যাবে ইতিহাসের পাতায়। অথচ সত্যনিষ্ঠ এই সংগ্রামীকে স্বাধীনতা
পুরস্কার দেয়া হলো না আজও। পরিবারের পক্ষ থেকে দাবিটা করলাম।
হুমায়ুন আজাদ ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল বিক্রমপুরের রাঢ়িখাল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ভাষাবিজ্ঞানী, সমালোচক, রাজনীতি-ভাষ্যকার, কিশোরসাহিত্যিক, গবেষক ও শিক্ষক।
হুমায়ুন আজাদের ৭টি কবিতার বই, ১৩টি উপন্যাস ও ২২টি সমালোচনা গ্রন্থ, ৭টি ভাষাবিজ্ঞানবিষয়ক, ৮টি কিশোরসাহিত্য ও অন্যান্য প্রবন্ধ-সংকলন মিলিয়ে ৬০টিরও বেশি বই তার জীবদ্দশায় এবং মৃত্যু-পরবর্তী সময়ে প্রকাশ হয়।
হুমায়ুন আজাদের প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে- বাংলা ভাষা (প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড), অলৌকিক ইস্টিমার, ৫৬ হাজার বর্গমাইল, সবকিছু ভেঙে পড়ে, রাজনীতিবিদগণ, একটি খুনের স্বপ্ন, পাক সার জমিন সাদ বাদ, রাষ্ট্র ও সমাজচিন্তা, নারী, প্রতিক্রিয়াশীলতার দীর্ঘ ছায়ার নিচে, আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম, বাঙলা ভাষার শত্রæমিত্র, ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধু, জ্বলো চিতাবাঘ, সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে, যতই গভীরে যাই মধু যতই ওপরে যাই নীল, শামসুর
রাহমান : নিঃসঙ্গ শেরপা, কাফনে মোড়া অশ্রæবিন্দু, বাক্যতত্ত্ব, তুলনামূলক ও ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান, শিল্পকলার বিমানবিকীকরণ ও অন্যান্য প্রবন্ধ, দ্বিতীয় লিঙ্গ, আমি বেঁচেছিলাম অন্যদের সময়ে উল্লেখযোগ্য।কর্মসূচি : প্রয়াণ দিবসে হুমায়ুন আজাদ স্মরণে আজ শনিবার বিকাল ৪টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা সেমিনার হলে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। আলোচনা করবেন কবি মারুফুল ইসলাম, কবি কামরুল ইসলাম, ড. প্রতিভা রানী কর্মকার ও মৌলি আজাদ। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। স্বাগত বক্তব্য দেবেন আগামী প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী ওসমান গনি। আলোচনা শেষে রয়েছে কবিতা পাঠ।