হোটেলে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু রহস্যের কূল-কিনারা হয়নি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

রাজধানীর ফার্মগেটে আবাসিক হোটেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধারের ঘটনার কোনো কুল-কিনারা হয়নি। পরিবার দাবি করছে, তাদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, যৌন উত্তেজক ওষুধ সেবনে তারা মারা গেছে।

তবে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকগণ বলছেন, পুরুষের সেবন করা যৌন উত্তেজক ওষুধে নারীর মৃত্যুর কোনো নজির নেই।বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ইত্তেফাকের পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন জামিউল আহসান সিপু 

গত ২ এপ্রিল ফার্মগেটের আবাসিক হোটেল সম্রাটের ৮০৮ নম্বর কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয় ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্রী মরিয়ম চৌধুরী (২০) ও তেজগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র আমিনুল ইসলাম সজলের (২২) মরদেহ। সজলের বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থানার হরিপুর গ্রামে। আর মরিয়মের গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ জেলায়।

লাশ উদ্ধারের সময় পুলিশ ও হোটেল কর্তৃপক্ষ দাবি করে, যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট সেবন করে দুই জন মারা গেছেন। সজলের পকেটে যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট পাওয়া গেছে। তা দেখেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে পুলিশ। পুলিশের করা সুরতহাল প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুজনের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। আত্মহত্যাও করেননি তারা।

গতকাল মরিয়ম চৌধুরীর বাবা মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমার মেয়েকে পরিকল্পিকভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের অভিযোগ পুলিশ কোনো আমলে নেয়নি। উল্টো ঘটনার দিন পুলিশ বিনা ময়নাতদন্তে লাশ আমাদের কাছে দিতে চেয়েছিল। থানায় অন্তত তিন ঘণ্টা বসে ছিলাম।

আমি ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ নেইনি। আমার মেয়ের সঙ্গে ওই ছেলের কোনো পরিচয় ছিল না। তাহলে কিভাবে আমার মেয়ে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে হোটেলে উঠল? আর তাদের কাছে তো বিবাহের কোনো কাগজপত্রই ছিল না। এমনকি হোটেল কর্তৃপক্ষ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যন্ত দেখায়নি। আমরা হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করতে চেয়েছি। কিন্তু সেটা না করে পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা নিয়েছে।’

মরিয়ম ঝিগাতলার মুন্সীবাড়ি রোডের একটি মেসে ভাড়া থাকতেন। ওই নারী হোস্টেলের পরিচালক আমেনা বেগম জানান, গত ১ এপ্রিল রাতে মরিয়ম তার খালার বাসায় যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হন। কিন্তু বিষয়টি তার মা-বাবাকে জানানো হয়নি। যাওয়ার সময় মরিয়ম জানান, রাতে সে ফিরবে না।

সজলের বাবা মোশারফ হোসেনও তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে বলেন, ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে তাদের কোনো শত্রু নেই। সজল-মরিয়ম স্বামী-স্ত্রী ছিল না। তাহলে তাদের কী পরিচয়ে সেখানে রুম ভাড়া দিয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষ?

সজল একই এলাকার হাজি আব্দুল হাই রোডের একটি মেসে ভাড়া থাকতেন। সজলের সহপাঠী ও রুমমেট কামরুল হাসান জানান, ১ এপ্রিল রাতে আত্মীয়ের বাসায় যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হন সজল। পরের দিন তার মৃত্যু সংবাদ পান।

সম্রাট হোটেলের ব্যবস্থাপক রাসেল আহমেদ সুমন জানান, হোটেলটির মালিক জসিম উদ্দিন চৌধুরী কচি। সজল-মরিয়ম স্বামী-স্ত্রী না হয়েও কীভাবে কক্ষ ভাড়া পেল জানতে চাইলে কোনো জবাব দিতে পারেননি সুমন। তার দাবি, পুলিশ এসে ৮০৮ নম্বর রুমের দরজা ভেঙে লাশ বের করেছে।

ভিডিও ফুটেজ নিয়ে লুকোচুরি: এদিকে সজল-মরিয়মের মৃতদেহ উদ্ধারের পর সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ নিয়েও লুকোচুরি করছে হোটেল কর্তৃপক্ষ আর পুলিশ। হোটেল সম্রাটের তত্ত্বাবধায়ক আহমেদ হোসেনের দাবি, হোটেলের সিসিটিভি ক্যামেরা সচল নয়। হোটেলের অভ্যর্থনা, লিফটের সামনে, করিডোরে সিসি ক্যামেরা আছে। তবে পুলিশ একটি ভিডিও ফুটেজ থেকে ওই হোটেলে সজল-মরিয়মের প্রবেশের দৃশ্য দেখতে পেয়েছে।

হোটেল সম্রাটে সজল-মরিয়ম উঠেছিল ৮০৮ নম্বর কক্ষে। পাশের ৮০৯ নম্বর কক্ষে টয়লেটের ওপর ফাঁকা জায়গা রাখা আছে, যা দিয়ে অনায়াসে ৮০৮ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করা যায়। তবে হোটেল কর্তৃপক্ষের দাবি, গিজার বসানোর জন্য সেই ফাঁকা জায়গা তৈরি করা হয়েছে।

এসব বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সেন্টু মিয়া বলেন, তারা যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট সেবন করে মারা গেছেন কি না তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে নিশ্চিত হওয়া যাবে। আমরা এখনও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাইনি।

মুগদা জেনারেল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চর্ম ও যৌন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এম এ হামিদ বলেন, ‘ডুমেক্স-৬০ নামে যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট সেবনে কারো মৃত্যু হয়েছে এমন কোনো নজির নেই। আর পুরুষ এটি সেবন করেন। কিন্তু নারী তো এটা সেবন করেন না। তাহলে ওই নারী মারা যাবে কেন?’

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, নিহতদের লাশ ময়নাতদন্ত ও ভিসেরার জন্য পাঠানো হয়েছে। ভিসেরা ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে হত্যা নাকি অপমৃত্যু, তা নিশ্চিত হওয়া যাবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা - dainik shiksha শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029149055480957