১০ মাসেও এমপিওভুক্ত হলো না শিক্ষক প্রফুল্ল চন্দ্র

বরিশাল প্রতিনিধি |

এনটিআরসিএ কর্তৃক শূন্য পদে মনোনীত  প্রফুল্ল চন্দ্র পাইক নামে এক হিন্দু ধর্ম শিক্ষক দীর্ঘ ১০ মাস ধরে এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে প্রতি ৩ মাস পর পর নিয়ম মেনে এমপিওভুক্তির আবেদন করতে গেলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বরিশাল আঞ্চলিক অফিস তাকে নানাভাবে হয়রানি করছে।

জানা যায়, এনটিআরসিএ কর্তৃক মনোনীত হয়ে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ১লা নভেম্বর বরিশাল নগরীর মানিক মিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে হিন্দু ধর্ম শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। কিন্তু এই দীর্ঘ ১০ মাসেও তাকে এমপিওভুক্ত করা হয়নি।

জানা যায়, বেতন ভাতা না পেয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। পাশাপাশি শুরু হয়েছে পারিবারিক কলহ।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১৪ই সেপ্টেম্বর) ৮ বছর আগে মৃত সহকারী প্রধান শিক্ষকের নাম এখনও এমপিওতে রয়ে গেছে এ অজুহাত কারণ দেখিয়ে ৩য় বারের মত তার এপিভুক্তির কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে উপ পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান অস্বীকার করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রফুল্ল পাইক, শিক্ষক নিবন্ধনের ৪নং ব্যাচ। সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শূন্য পদে প্রথমবারের মত নিয়োগ দেয় এনটিআরসি। প্রফুল্ল পাইককে ( রোল ১১৯১০৮৩৫ ) দেয়া হয় মানিক মিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ( আইএনএন নং ১০০৭৫৪)।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক আ, ব, তোফাজ্জল হোসেন জানান, অনলাইনে শূন্যপদ চাওয়া হয়েছে বিষয় ভিত্তিক হিসাবে। এ স্কুলে বাংলা, ব্যবসায় শিক্ষা, কৃষি ও হিন্দু ধর্মের জন্য চাহিদা দেয়া হয়। বাংলা শিক্ষক ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে, কৃষি শিক্ষক ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে, ব্যবসায় শিক্ষা ২০১২ খ্রিস্টাব্দে এবং হিন্দু ধর্মের শিক্ষক ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে অবসরে যান। বর্তমানে স্কুলে প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ মাত্র ৮জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। অবশেষে শূন্য পদে চারজন শিক্ষককে এনটিআরসিএ মনোনীত করে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের জুলাইতে। এদের এক মাসের মধ্যে যোগদানের ব্যবস্থা গ্রহনেরও নির্দেশ দেয়া হয়। সে মোতাবেক তিনজন যোগদান করেন। কৃষি শিক্ষায় যাকে নিয়োগ দেয়া হয় তিনি অন্য বিদ্যালয়ে যোগদান করেন।

বেতনভাতার বিল বা এমপিওর নতুন নিয়ম অনুযায়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে যাবতীয় কাগজপত্র জমা দেয়া হয়। সেখান থেকে জেলা শিক্ষা অফিস হয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বরিশাল অফিসে। সেখানে প্রথমে তিন জনকেই বাদ দেয়া হয় শিক্ষক কোটা না থাকার অজুহাত দেখিয়ে।

২০১০ খ্রিস্টাব্দের জনবল কাঠামোর অজুহাতে স্কুলে সমাজ বিজ্ঞান কোটা পূর্ণ থাকায় ব্যবসায় শিক্ষা ও বাংলা শিক্ষক এবং হিন্দু ধর্মের কোটা না থাকায় হিন্দু ধর্মের শিক্ষককে বাদ দেয়া হয়। কিন্তু ২ মাস পরে আরও একজন শিক্ষক অবসরে যাওয়ায় ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষকের কাগজে সই করেন উপ পরিচালক।

 তবে এ জন্য ওই শিক্ষককে বিপুল অংকের অর্থ দিতে হয়েছে বলে একটি বিশ্বস্ত সূত্র অভিযোগ করেছে। এদিকে হিন্দু ধর্মের শিক্ষক প্রফুল্ল চন্দ্র পাইক বিলের জন্য ছুটোছুটি করতে থাকেন।

শিক্ষক প্রফুল্ল জানান, তিনি এসেছেন শূন্য পদে। এ স্কুলের এমপিওতে সুস্পষ্ট উল্লেখ আছে দিবা রানী রায় নামের শিক্ষিকা ছিলেন ঐজঞ বা হিন্দু ধর্মের শিক্ষক। তার স্থলে তিনি যোগ দিয়েছেন। কিন্তু বরিশালের শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক অফিস থেকে বার বার হিন্দু ধর্মের কোটার কাগজ দেখতে চাওয়া হয় আমার কাছে।

এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক জানান, এমপিওতে পদ পদবী মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করেছে অনেক আগে। দিবা রানীকে স্কুল ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে সমাজ বিজ্ঞানে নিয়োগ দেয়া হয়। ২০১০ খ্রিস্টাব্দের পরে এক জরিপ সম্পন্ন হয়। এরপরে এমপিওতে দিবা রানীকে হিন্দু ধর্মের শিক্ষক হিসাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় উল্লেখ করে। এ পদে থেকেই তিনি অবসরে যান।

বেতন ভাতা না পেয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করায় শেষ পর্যন্ত জেলা শিক্ষা অফিস থেকে মানবিক কারণে  একটি পরিদর্শন করে হিন্দু ধর্মের কোটা সৃষ্টি করে দেয়া হয়।

এরপর আবার উপজেলা শিক্ষা অফিস, জেলা শিক্ষা অফিস হয়ে আঞ্চলিক অফিসে কাগজ যায়। গত বুধবার হঠাৎ করে ঐ অফিস থেকে এমপিওতে দুইজন সহকারী প্রধান শিক্ষকের নাম কেন জানতে চাওয়া হয়।

এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক আ,ব তোফাজ্জল হোসেন জানান, ২০১১ খ্রিস্টাব্দে স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম মারা যান। এরপর তার স্থলে নতুন একজন সহকারী প্রধান শিক্ষক নেয়া হয় ঐ বছরই। এমপিও থেকে নাম কর্তনের জন্য বিষয়টি একাধিকবার জেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে ব্যানবেইজে জানানো হয়। এছাড়া জেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে ঢাকা মাধ্যমিক মাধ্যমিক ও শিক্ষা অধিদপ্তরও একবার একটি নির্দিষ্ট ফরমে যারা মারা গেছেন তাদের তালিকা সংগ্রহ করে। কিন্তু এমপিওতে নামটি এখনও রয়ে গেছে। এটি স্কুলের বা প্রফুল্ল পাইকের কোন বিষয় নয়। মারা যাবার পর থেকেই তার বেতনভাতা উত্তোলন করা হয়নি।

কিন্তু এই অজুহাতে বৃহস্পতিবার প্রফুল্লকে শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক অফিস থেকে জানিয়ে দেয়া হয় দুইজন সহকারী প্রধান শিক্ষকের নাম থাকায় তার বেতনভাতার বিলে স্বাক্ষর করা হবে না। এতে একেবারে ভেঙ্গে পড়েন প্রফুল্ল। দীর্ঘ নয় মাস বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে সে যা শিক্ষা অফিসের কাউকেই স্পর্শ করেনি।

এ প্রসঙ্গে মাউশি অধিদপ্তরের বরিশাল এর উপ-পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রফুল্ল পাইক এর বেতন-ভাতা না পাওয়ার জন্য শিক্ষা অফিস দায়ি নয়। বরং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব অবহেলা এবং বিষয়টি ভালো ভাবে বুঝে উঠতে না পারার কারনেই হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক যতদিন না পর্যন্ত বিষয়টি ভালো ভাবে সমাধান করবেন ততদিন ওই শিক্ষক এমপিওভুক্ত হবেন না।

তিনি বলেন, ওই বিদ্যালয়ের যে শিক্ষক মারা গেছেন প্রধান শিক্ষক তার নাম কর্তনের প্রস্তাব দিচ্ছেন না। শুধুমাত্র একটি রেজিষ্ট্রার দ্বারা কারো মৃত্যুর বিষয়টি প্রমান পায় না। নাম কাটার প্রস্তাবের সাথে মৃত্যুর প্রদানপত্র সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র শিক্ষা অফিসে জমা দিতে হবে। বিষয়টি প্রধান শিক্ষককে বহুবার বুঝিয়ে বলা হয়েছে। কিন্তু তিনি বিষয়টি বুঝতে চাচ্ছেন না বলে অভিযোগ মাউশি অধিদপ্তরের কর্মকর্তার।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! শিক্ষককে পিটিয়ে হ*ত্যা, চাচাতো ভাইসহ গ্রেফতার ৩ - dainik shiksha শিক্ষককে পিটিয়ে হ*ত্যা, চাচাতো ভাইসহ গ্রেফতার ৩ কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0072250366210938