১১ বছরেও ভবন পায়নি রাঙামাটি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

১১ বছর কেটে গেলেও স্থায়ী ভবনসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের কাজই শুরু করতে পারেনি রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বারবার সংশোধন এবং কয়েক দফায় মেয়াদ বাড়িয়েও স্থায়ী ভবন নির্মাণ না হওয়ায় অস্থায়ী ভবনে চলছে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও নিয়োগ দেওয়া হয়নি পর্যাপ্ত শিক্ষক-কর্মকর্তা। এমনকি তৈরি হয়নি মাস্টারপ্ল্যানও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে দুটি অস্থায়ী ভবনে। বিশ্ববিদ্যালয়টির অস্থায়ী ভবনগুলো ইউজিসির আর্থিক সহায়তায় তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। অবকাঠামোগত সংকটের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রায় প্রতিটি বিভাগেই ক্লাসরুম ও ল্যাব সংকট। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য নেই প্রয়োজনীয় কক্ষ। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।

পার্বত্য অঞ্চলে উচ্চশিক্ষা সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে ‘রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৩ সালে একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। সাড়ে ৫ বছর মেয়াদি প্রকল্পটির কাজ ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন করে প্রশাসনিক একাডেমিক, ছাত্রছাত্রীদের আবাসিক হল, উপাচার্যের বাংলো, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ডরমিটরি, মেডিকেল সেন্টারসহ বেশ কয়েকটি অবকাঠামো নির্মাণের কথা ছিল। ইতোমধ্যে ১১ বছর পার হলেও ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়া কোনো কাজই হয়নি। কয়েক দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে বর্ধিত সময়ের মধ্যেও কোনো ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করতে না পারায় প্রকল্পটি দ্বিতীয়বার সংশোধনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সংশোধনী প্রস্তাব সূত্রে জানা গেছে, আলোচ্য প্রকল্পটি নির্ধারিত মেয়াদে শেষ না হওয়ায় প্রথমে এক বছর বাড়িয়ে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। তাতেও না হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। সেই সময়ের মধ্যেও কাজ শুরু করতে না পারায় প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে নতুন করে আরও ৩ বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়।

কিন্তু দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে এবং প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করেও নির্মাণকাজ শুরু করতে পারেনি বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ। ফলে চতুর্থবার নতুন করে আরও তিন বছর মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয় ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত। অর্থাৎ সাড়ে ৫ বছরের প্রকল্পের মেয়াদ গিয়ে ঠেকছে সাড়ে ১৩ বছরে।

এদিকে মেয়াদ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্পের খরচও বাড়ানো হয়েছে কয়েক ধাপে। ১১৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে মূল অনুমোদিত ব্যয়ের চেয়ে ২৯ কোটি ১১ লাখ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা করা হয়। এরপর দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবে আরও ১৯ কোটি ৬ লাখ টাকা বাড়ানোর আবদার করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ১১৬ কোটি টাকার প্রকল্পের খরচ দাঁড়াবে ১৬৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

জানা গেছে, প্রকল্পটি নেওয়ার সময় কোনো প্রকার সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি অধিগ্রহণে দেখা দেয় জটিলতা। এ কারণে জমি অধিগ্রহণ করতেই লেগে গেছে ৬ বছরের অধিক সময়।

বর্তমানে প্রকল্পটির প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য সেলিনা আখতার। তিনি বলেন, আমি খুব বেশিদিন এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত নই। এর আগে কী কারণে দেরি হয়েছিল জানি না, তবে দ্রুত কাজ শুরু করার চেষ্টা করছি।

বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক কাঞ্চন চাকমা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য প্রথমে ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে ঝামেলা ছিল। এ ছাড়া পরবর্তী সময়ে করোনার কারণে কাজ করা যায়নি। তবে এখন প্রয়োজনীয় জায়গা অধিগ্রহণ হয়ে গেছে। মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদন হয়ে গেলে দ্রুত কাজ শুরু হবে।

তিনি আরও বলেন, এখনো মাস্টারপ্লান হয়নি। তবে আমরা কাজ করছি আগামী জুন-জুলাইয়ের মধ্যে মাস্টারপ্লান তৈরি হয়ে যাবে। শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ২৮ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আরও ২০-২৫টি সার্কুলার রয়েছে। এগুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আশা করছি দ্রুত এগুলো হয়ে যাবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সরকার প্রতিটি নাগরিকের অধিকার রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ - dainik shiksha সরকার প্রতিটি নাগরিকের অধিকার রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ কারিগরির এসএসসি ও দাখিলের রেজিস্ট্রেশনের সময় ফের বাড়লো - dainik shiksha কারিগরির এসএসসি ও দাখিলের রেজিস্ট্রেশনের সময় ফের বাড়লো প্রাথমিকের ডিজির অপসারণ ছাড়া কাজে ফিরবেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা - dainik shiksha প্রাথমিকের ডিজির অপসারণ ছাড়া কাজে ফিরবেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘তুমি কে আমি কে? আদুভাই আদুভাই’ স্লোগান শেকৃবি শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ‘তুমি কে আমি কে? আদুভাই আদুভাই’ স্লোগান শেকৃবি শিক্ষার্থীদের মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতে একগুচ্ছ প্রস্তাব - dainik shiksha মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতে একগুচ্ছ প্রস্তাব ঢাবির নতুন প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদ - dainik shiksha ঢাবির নতুন প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদ কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.006587028503418