১১ মাস ধরে বেতন পান না হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীরা

দিনাজপুর প্রতিনিধি |

দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা ১১ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার-উপাচার্য বরাবর আবেদন করেও কোনো সুরাহা হয়নি। এ অবস্থায় গত শনিবার থেকে বিদ্যালয় করিডরে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছেন তাঁরা।

শিক্ষকদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষকের উদাসীনতা ও অদক্ষতায় স্কুলটির শিক্ষা কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়েছে। এ অবস্থায় ছাড়পত্র নিয়ে অভিভাবকেরা ছেলেমেয়েদের অন্য স্কুলে ভর্তি করাচ্ছেন। 

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে প্রাথমিক শাখা চালু হয়। পরে মাধ্যমিক শাখার পাঠদানের অনুমতি পায় ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রাথমিক শিক্ষা শাখা জাতীয়করণ করা হলেও মাধ্যমিক শিক্ষা শাখা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত থেকে যায়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে শিক্ষকসংখ্যা ৯ জন (প্রধান শিক্ষকসহ) আর কর্মচারী রয়েছেন ৩ জন। অন্যদিকে কাগজে-কলমে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ১৮৩ জন।

শিক্ষকদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষকের অদক্ষতায় স্কুলটির শিক্ষা কার্যক্রম হুমকির মুখে পরেছে। এ অবস্থায় স্কুলে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমছে।

গত মঙ্গলবার বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম প্রান্তে তিনতলা ভবন। নিচতলায় প্রাথমিক শাখা। ওপরের দুটি তলায় মাধ্যমিক শাখার ক্লাস হয়। ভবনের সামনে বিশালাকৃতির মাঠ। প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই দেখা গেল, করিডরে বেঞ্চে বসে আছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা। পেছনে সাঁটানো ব্যানারে লেখা ‘চাকরি নিশ্চিতকরণ, বকেয়া বেতন ও পরীক্ষার পারিতোষিক প্রদানের দাবিতে অবস্থান ধর্মঘট’। দ্বিতীয় তলায় ওঠার সিঁড়ির গোড়ায় ফটকসহ প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে তালা মেরে চাবি নিয়ে চলে গেছেন প্রধান শিক্ষক।

শিক্ষকেরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি অর্থবছরে ২০-২২ লাখ টাকা থোক বরাদ্দ দেওয়া হতো। তার সঙ্গে বিদ্যালয়ের আয় যোগ হয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন হতো। গত অর্থবছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থোক বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়ায় বেতন পাচ্ছেন না তাঁরা। বিদ্যালয়ের তহবিলে যা টাকা, আছে তাতে শিক্ষক–কর্মচারীদের দুই মাসের বেতন দেওয়া যাবে। প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে অন্য শিক্ষকদের সমন্বয়হীনতায় সেটাও হয়ে উঠছে না।

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে শিক্ষকেরা বলেন, প্রধান শিক্ষক আব্বাসুজ্জামানকে একাধিকবার এমপিওভুক্তির জন্য তাগাদা দিলেও তিনি কর্ণপাত করেননি। দাপ্তরিক কাজের সব সুযোগ বিদ্যালয়ে থাকার পরও প্রধান শিক্ষক সেসব কাজ বাইরের দোকানে করান। বিল ভাউচার বানিয়ে প্রতিষ্ঠানের সামান্য আয় নিজের মতো খরচ করেন।

সহকারী শিক্ষক নুরুল আলম বলেন, কয়েক বছর আগেও বিদ্যালয়ে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী ছিল। শুধু প্রধান শিক্ষকের অদক্ষতার কারণে স্কুলটি বেহাল অবস্থায় পরেছে। এমপিওভু্ক্তর সুযোগ থাকলেও প্রধান শিক্ষক তা করেননি। কারণ, এমপিওভুক্ত হলে প্রধান শিক্ষক হওয়ার যে শর্ত সেটা বর্তমান প্রধান শিক্ষকের নেই। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে তাঁরা কয়েকজন শিক্ষক আছেন। ইতিমধ্যে ৮-১০ জন শিক্ষক বিদ্যালয় ছেড়ে অন্যত্র চাকরি নিয়ে চলে গেছেন। চাকরি শেষ হলে পেনশনসহ অন্য ভাতা পাবেন না জানেন। তাই বলে বেতনটাও ঠিকমতো পাবেন না। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তাঁরা কীভাবে সংসার চালাচ্ছেন তা কেউ জানে না।

মুঠোফোনে প্রধান শিক্ষক আব্বাসুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরাদ্দ না থাকায় শিক্ষকদের বেতন বন্ধ রয়েছে। এখানে তাঁর করার কিছু নেই। গত বছর এমপিওভুক্ত করার জন্য আবেদন করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। বরং অন্য শিক্ষকদেরই কোনো সহযোগিতা পান না বলে বিদ্যালয় ঠিকমতো চলছে না।

পদাধিকারবলে এই বিদ্যালয়ের সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য। তবে কয়েক বছর আগে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কোষাধ্যক্ষ বিধান চন্দ্র হালদার। সেই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ৬ মাস আগে। বিধান চন্দ্র বলেন, গত অর্থবছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বিদ্যালয়ের জন্য থোক বরাদ্দ বন্ধ করে দিয়েছে। বিষয়টি মঞ্জুরি কমিশনে জানানো হয়েছে। সারা দেশে মোট ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত স্কুল আছে। সব কটিতেই বরাদ্দ বন্ধ আছে। তবে এ বিষয়ে মঞ্জুরি কমিশন একটি কমিটি গঠন করেছে। আশা করা যায়, খুব দ্রুতই বিষয়টির সমাধান হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025908946990967