১৩০০ বছর ধরে পাহাড়ের গায়ে গাঁথা। বয়স আরও বেশি। ফ্রান্স থেকে শেষমেশ গায়েবই হয়ে গেলো সে দেশের ‘জাদু’ তরোয়াল।
তবে ফ্রান্সের মানুষের বিশ্বাস, পবিত্র কোনো যোদ্ধা নিজের শেষ চিহ্ন হিসাবে সেটি পাহাড়ের গায়ে গেঁথে দিয়েছিলেন। ১৩০০ বছর ধরে যা এক ইতিহাস বহন করে চলেছে। আবার অনেকের বিশ্বাস, তরোয়ালটির এমন সব ‘জাদু’ ক্ষমতা রয়েছে, যা ব্যাখ্যাতীত।
নদী দিয়ে ঘেরা এবং পাহাড় কেটে তৈরি রোকামাদুর, ফ্রান্সের এক প্রাচীন নগরী। তরোয়ালটি এত দিন গাঁথা ছিল সেই শহরেরই একটি পাহাড়ে।
ফ্রান্সের নাগরিকদের বিশ্বাস, রোকামাদুরের ওই তরোয়ালটি ছিলো ‘ডুরান্ডাল’। ফরাসি মহাকাব্য অনুযায়ী, ডুরান্ডাল রোমান সম্রাট শার্লেমেনের সেনাদলের সবচেয়ে সাহসী এবং শক্তিশালী নাইট রোল্যান্ডের তরোয়াল।
কিংবদন্তি অনুযায়ী, সম্রাট শার্লেমেনই এই তরোয়ালের মালিক ছিলেন। অষ্টম শতাব্দীতে এক দেবদূত নাকি রোমান সম্রাটকে তরোয়ালটি দিয়েছিলেন। তবে পরবর্তী কালে তা তিনি উপহারস্বরূপ রোল্যান্ডের হাতে তুলে দেন।
ফরাসিদের বিশ্বাস, ডুরান্ডাল অবিনশ্বর এবং পৃথিবীর সবচেয়ে ধারালো তরবারি। এটি নাকি বিশাল বড় পাথরও এক কোপে ফালা ফালা করে দিতে পারে।
এ-ও মনে করা হয়, তরোয়ালটির ক্ষমতা সম্পর্কে রোল্যান্ড এতটাই অবগত ছিলেন যে, যুদ্ধক্ষেত্রে মারা যাওয়ার আগে তিনি সেটি নষ্ট করে দিতে চেয়েছিলেন।
রোল্যান্ড চাইতেন, তরোয়ালটি যেনো কোনোভাবেই শত্রুপক্ষের হাতে না পৌঁছয়। যদিও তিনি ওই তরোয়ালটি ভাঙতে সক্ষম হননি।
কথিত রয়েছে, তলোয়ারটি ভাঙতে না পেরে হতাশাগ্রস্ত হয়ে সেটি শূন্যে ছুড়ে দেন, যা কয়েকশো কিলোমিটার দূরে গিয়ে রোকামাদুরের ওই পাহাড়ে গিয়ে গেঁথে যায়।
ফ্রান্সের প্রাচীনতম সাহিত্যে এই তরোয়ালটির ‘জাদু’ ক্ষমতার উল্লেখ রয়েছে। ‘দ্য গান অফ রোল্যান্ড’ নামের সেই কবিতার পুঁথি বর্তমানে অক্সফোর্ডের বোদলিয়ান লাইব্রেরিতে রাখা।
ব্রিটেনের পুরাণ অনুযায়ী, ‘এক্সক্যালিবার’ একটি কিংবদন্তি তরোয়াল। যার মালিক ছিলেন রাজা আর্থার। ব্রিটেনের লোককথা অনুযায়ী, ‘এক্সক্যালিবার’ ছিলো পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী তলোয়ার। ব্রিটেনের সংস্কৃতিতেও বার বার এই তরোয়ালের উল্লেখ পাওয়া যায়।
ফ্রান্সের মানুষের বিশ্বাস, রোকামাদুর শহরের পাহাড়ে গাঁথা ওই তরোয়ালটির শক্তি এক্সক্যালিবারের চেয়ে কিছু কম ছিলো না। এমনটি ওই তরোয়ালটিকে ‘ফ্রান্সের এক্সক্যালিবার’ও বলা হয়।
তবে সম্প্রতি তরোয়ালটি পাহাড়ের গা থেকে রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে গিয়েছে।
পুলিশের অনুমান, মাটি থেকে ১০০ ফুট উপরে পাহাড়ে গেঁথে থাকা ওই তরোয়াল চুরি করেছেন কেউ। তবে কী ভাবে ওই চোর তা সম্ভব করল, তা তদন্তকারীদের ভাবাচ্ছে।
যদিও স্থানীয়দের একাংশের বিশ্বাস, কোনও বিশেষ কারণে জাদুবলে নিজে থেকেই অদৃশ্য হয়েছে তরোয়ালটি।
উল্লেখ্য, রোকামাদুর শহরের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিলো ওই তরোয়াল। বহু জায়গা থেকে মানুষ ওই রহস্য সেটির দর্শনের জন্য আসতেন।
রোকামাদুরের মেয়র ডমিনিক লেনফ্যান্ট এ প্রসঙ্গে বলেন, তরোয়ালটি আকস্মিক ভাবে উধাও হয়ে যাওয়ায় স্থানীয়েরা বিচলিত। উত্তেজনা ছড়িয়েছে। বিশ্বাস করা হয়, এই তরোয়ালের সঙ্গে শহরের মানুষের ভাগ্য জড়িয়ে রয়েছে। বিশ্বাস করতে পারছেন না অনেকে।