১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয়

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন তুলে দেয়া উচিত নয় এবং ১৮ বছর বয়সের আগে শিশুদের টিকটক, ইনস্টাগ্রাম ও স্ন্যাপচ্যাটের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে দেয়া যাবে না।  ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোর নির্দেশে দেশটিতে এমন এক নীতিমালা তৈরি করেছেন বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা।

গত জানুয়ারিতেই ম্যাক্রো ইঙ্গিত দেন ফ্রান্সের শিশুদের স্মার্টফোন ব্যবহার বন্ধে যে নজিরহীন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তখন তিনি বলেছিলেন, শিশুদের স্মার্টফোনের ব্যবহার নিষিদ্ধ বা সীমিত করা হতে পারে।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে গবেষকেরা বলেছেন, মুনাফালোভী প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মনোযোগ আকর্ষণ করার কৌশল থেকে শিশুদের রক্ষা করতে হবে। কোম্পানিগুলো শিশুদের পছন্দের বিষয়গুলো দেখিয়ে তাদের মনোযোগ স্মার্টফোনে আটকে রাখে। প্রযুক্তি বাজারে শিশুদের ‘পণ্য’ হিসেবে দেখা হয়।

প্রতিবেদনে গবেষকেরা বলেন, আমরা প্রযুক্তি শিল্পকে জানাতে চাচ্ছি যে, তারা শিশুদের সঙ্গে কী করছে, তা আমরা জানি এবং এসব করে তারা পার পেয়ে যাবে না। মূলত পল-ব্রাউস হাসপাতালের মনোরোগ ও আসক্তি বিভাগের প্রধান অ্যামাইন বেনিয়ামিনার এবং স্নায়ু বিশেষজ্ঞ সার্ভেন মাউটনের নেতৃত্বে বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি নিয়ে তিন মাস ধরে এক গবেষণা করেন।

গবেষণাপত্রে বলা হয়, তিন বছরের কম বয়সী শিশুদের স্মার্টফোনে কোনো কিছু দেখানো উচিত নয়। টেলিভিশনেরও ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য। আর ১১ বছর বয়সের আগে কোনো শিশুরই নিজস্ব স্মার্টফোন থাকা উচিত নয়। যদি ১১ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন দিতেই হয়, তাহলে খেয়াল রাখতে হবে সেগুলোতে যেন ইন্টারনেট ব্যবহার করা না যায়। ১৩ বছর হওয়ার পর শিশুদের ইন্টারনেট সংযোগসহ স্মার্টফোন দেয়া উচিত। 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১৫ বছরের শিশুরা মাস্টডোনের মতো শুধু ‘নৈতিক’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যবহার করতে পারে। ১৮ বছরের কম বয়সীরা যেন টিকটক, ইনস্টাগ্রাম ও স্ন্যাপচ্যাটের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করতে না পারে সেদিকেও নজর রাখতে হবে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কিশোর–কিশোরীদের জ্ঞান বৃদ্ধির চেষ্টা করতে হবে। 

সদ্যোজাত শিশুদের কথাও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। অভিভাবকদের সঙ্গে সদ্যোজাত শিশুদের বন্ধন দৃঢ় করতে হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে স্মার্টফোনের ব্যবহার যতটা সম্ভব সীমিত করা উচিত। শিশুদের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদেরও স্মার্টফোন কম ব্যবহার করা উচিত। 

এছাড়া ছয় বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের জন্য সমস্ত ধরনের স্ক্রিনের (স্মার্টফোন, টিভি, কম্পিউটার) ব্যবহার ‘দৃঢ়ভাবে সীমিত’ করা উচিত। প্রাপ্তবয়স্কদের নজরদারিতে শিক্ষণীয় কনটেন্টের দেখানোর জন্য এসব ডিভাইস কম ব্যবহার করা উচিত। ছয় বছরের কম বয়সী শিশুদের নার্সারি স্কুলে স্মার্টফোন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা উচিত। শিশুদের পড়ালেখা জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৃথক ট্যাবলেট বা ডিজিটাল ডিভাইস দেওয়া উচিত নয়। তবে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের কোনো কিছু শেখানোর ক্ষেত্রে এসব ডিভাইস ব্যবহার করা যেতে পারে। 

তবে শিশুদের হাতে স্মার্টফোন তুলে দেয়ার জন্য বিজ্ঞানীরা অভিভাবকের তিরস্কার করেননি। কারণ অভিভাবকেরাও ‘শক্তিশালী প্রযুক্তি শিল্পের শিকার’। শিশুদের সঙ্গে কথা বলা, খাওয়া বা খেলার ক্ষেত্রে স্মার্টফোন অভিভাবকদের মনোযোগ বিঘ্ন করে। গবেষকেরা এই ধরনের ঘটনাকে ‘টেকনো–ফেরেন্স’ হিসেবে নামকরণ করেছেন। গবেষকেরা বলছেন, শিশুদের খাওয়ানোর সময় অভিভাবকদের ফোন স্ক্রল করা বা টেলিভিশন দেখার মতো অভ্যাসগুলো শিশুদের মানসিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

বিজ্ঞানীরা বলেন, এ জন্য অভিভাবকদের পুরোপুরি দোষ দেয়া উচিত নয়। পুরো সমাজকে এর দায়ভার নিতে হবে। এ জন্য অভিভাবকদের অফিসের বাইরে কাজ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন থাকার সুযোগ দিতে হবে, রেস্তোরাঁ বা ক্যাফে খাওয়ার সময় স্মার্টফোন ব্যবহার নিষিদ্ধের জন্য নিয়ম করতে হবে বা বাড়িতে ফিরে যেন অভিভাবকেরা ফোনগুলো আর না ধরে এই অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। 

গবেষণায় আরও বলা হয়, ডিভাইসের ‘প্যারেন্টাল কন্ট্রোল’ ফিচারগুলো শিশুদের সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট নয়। এগুলো বরং অভিভাবকদের বিভ্রান্ত করে। প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো বিভিন্ন অ্যালগরিদম ব্যবহার করে ফোনের প্রতি শিশুদের আসক্তি সৃষ্টি করে। আর এই দায় থেকে রক্ষা পেতেই কোম্পানিগুলো ফিচারটি যুক্ত করেছে যা প্রকৃতপক্ষে অকার্যকর।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জোর করে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের পদত্যাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করা হুঁশিয়ারি - dainik shiksha জোর করে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের পদত্যাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করা হুঁশিয়ারি রাজনীতি করি না, ভবিষ্যতেও করবো না: ঢাবির নতুন ভিসি - dainik shiksha রাজনীতি করি না, ভবিষ্যতেও করবো না: ঢাবির নতুন ভিসি চার তারিখের মধ্যে মাদরাসা শিক্ষকদের এমপিওর আবেদন - dainik shiksha চার তারিখের মধ্যে মাদরাসা শিক্ষকদের এমপিওর আবেদন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য অধ্যাপক আমানুল্লাহ - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য অধ্যাপক আমানুল্লাহ দীপু-টিপু-রতন সিন্ডিকেটের ঘুষের সাম্রাজ্য - dainik shiksha দীপু-টিপু-রতন সিন্ডিকেটের ঘুষের সাম্রাজ্য এনসিটিবির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শাস্তি দাবি বৈষম্যবিরোধীদের - dainik shiksha এনসিটিবির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শাস্তি দাবি বৈষম্যবিরোধীদের কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0043060779571533