১৩ হাজার পদে ২৪ লাখ প্রার্থী, নিয়োগ পরীক্ষায় রেকর্ড

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

দীর্ঘ সাত মাস ধরে ঝুলে আছে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা। কর্মকর্তারা দফায় দফায় পরীক্ষা আয়োজনের আশ্বাস দিয়ে সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করলেও শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখছে না পরীক্ষা। এদিকে শিক্ষা সপ্তাহের অনুষ্ঠানের কারণে আগামী ১৫ মার্চ সম্ভাব্য তারিখেও অনুষ্ঠিত হচ্ছে না পরীক্ষা। কর্মকর্তারা বলছেন, ১৩ হাজার পদের বিপরীতে আবেদন করা ২৪ লাখের বেশি চাকরি প্রার্থীর অপেক্ষার অবসান হতে পারে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে। সোমবার (৪ মার্চ) দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে  এ কথা জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন বিভাষ বাড়ৈ।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এফ এম মনজুর কাদির রবিবার সন্ধ্যায় বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা আগামী ১৫ মার্চ থেকে শুরু করার প্রাথমিক একটি সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছিলাম। আবেদনকারী বেশি হওয়ায় কয়েকটি ধাপে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করার প্রস্তুতি শুরুও করা হয়। এ পরীক্ষার জন্য আমাদের শতভাগ প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও আগামী ১৩ মার্চ শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৯ পালন করার সিদ্ধান্ত হওয়ায় তা আবারও পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ২৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা সপ্তাহ পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও প্রধানমন্ত্রী এদিন সময় দিতে না পারায় তা পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল। এখন প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পাওয়ায় আগামী ১৩ মার্চ তা পালনের প্রস্তুতি চলছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থেকে শিক্ষা সপ্তাহের উদ্বোধন করবেন।

তাহলে পরীক্ষা কবে হচ্ছে? জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, ‘আপাতত শিক্ষা সপ্তাহ আয়োজন নিয়ে সবাই ব্যস্ত রয়েছে। এ অনুষ্ঠান শেষে মন্ত্রণালয়ের সভা করে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার সময় পুনরায় নির্ধারণ করা হবে। ১৫ তারিখ হচ্ছে না আপাতত সেই সিদ্ধান্তই নেয়া হয়েছে। আসলে পরীক্ষা আয়োজনের জন্য কেবল আমাদের প্রস্তুত হলেই হবে না। এর সঙ্গে জড়িত আছেন ৬৪ জেলার ডিসিসহ সরকারের অনেক কর্মকর্তা। প্রস্তুতি নিতে তাই সময় একটি লাগবেই। পরীক্ষা সেক্ষেত্রে চলে যেতে পারে আগামী মাস অর্থাৎ এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে। তবে চেষ্টা করব যাতে মার্চের শেষ সপ্তাহে নেয়া যায়। সম্ভব না হলে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে পরীক্ষা নেয়া হবে।

সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা আগামী ১৫ মার্চ থেকে শুরু করতে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ১৫ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ের এক সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে লিখিত পরীক্ষা আয়োজনে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে অধিদফতরকে নির্দেশনাও দেয়া হয়। এর আগে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পরীক্ষা শুরুর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মন্ত্রণালয়। তবে এসএসসি পরীক্ষার কারণে তাও পিছিয়ে মার্চে আনা হয়।

জানা গেছে, প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার পর গত বছরের ১ আগস্ট থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত অনলাইনে ২৪ লাখের বেশি আবেদন জমা পড়েছে। নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন করা হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। এ পরীক্ষায় লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হবে। কর্মকর্তারা বলছেন, পরীক্ষায় অংশ নিতে ১৩ হাজার ১০০ পদের বিপরীতে আবেদন জমা পড়েছে ২৪ লাখের বেশি। যে সংখ্যা দেশের যে কোন নিয়োগ পরীক্ষায় রীতিমতো একটি রেকর্ড।

এত বিপুল পরিমাণ আবেদন জমা পড়ার কারণে নিয়োগ পরীক্ষা নিতে ভাবতে হচ্ছে বলেও বলছেন কর্মকর্তারা। কারণ বিপুল পরিমাণে আবেদনকারীর পরীক্ষা এক দিনে নেয়া সম্ভব নয়। তাই জেলাগুলোকে কয়েকটি ধাপে ভাগ করে পরীক্ষা নেয়া হবে।

লিখিত পরীক্ষার পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে মৗখিক পরীক্ষা শেষ করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। লিখিত পরীক্ষার পর নতুন করে আরও ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে জানা গেছে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবার নিয়োগ পরীক্ষা সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড পদ্ধতিতে নেয়া হবে। নির্ধারিত জেলায় পরীক্ষা আয়োজনের আগের রাতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রশ্নপত্রের সকল সেট পাঠানো হবে। পরীক্ষার দিন সকাল ৮টায় প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে তা কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়া হবে।

লিখিত পরীক্ষা কয়েকটি ধাপে হবে। এবার একসঙ্গে সব জেলার ফল প্রকাশ করা হবে না। যে জেলার পরীক্ষা আগে শেষ হবে সেখানে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে আগেই মৌখিক পরীক্ষার আয়োজন করা হবে। এভাবে যে জেলার পরীক্ষা আগে শেষ হবে পর্যায়ক্রমে আগেই মৌখিক পরীক্ষা আয়োজন করে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে।

মহাপরিচালক মনজুর কাদির বলেন, স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত ও প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে নিয়োগ পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে। পরীক্ষার দিন প্রতিটি কেন্দ্রের বাইরে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। যদি কেউ কোন ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হয় তাহলে পরীক্ষা কেন্দ্রেই তাকে বহিষ্কার করে প্রার্থীর খাতা বাতিল করা হবে। পরীক্ষা পদ্ধতি ডিজিটালাইজড করতে আমরা বুয়েটের সহায়তায় একটি আধুনিক সফটওয়্যার তৈরি করেছি। সেই সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীর সিট বিন্যাস, পরিদর্শক নির্বাচনসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় সার্টিফিকেট বিক্রির দোকান হতে পারে না ॥ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেছেন, দেশের সকল বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় মানসম্মত শিক্ষা দানে সক্ষম হচ্ছে না। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে। মনে রাখতে হবে, কোন বিশ্ববিদ্যালয় সার্টিফিকেট বিক্রির দোকান হতে পারে না। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সিটি ইউনিভার্সিটির তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সমাবর্তনে মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনাজনিত দুর্বলতা রয়েছে। অনেকের ভাল গ্রন্থাগারসহ যোগ্য শিক্ষকের অভাব বিদ্যমান। ফলে শিক্ষার মান কাক্সিক্ষত স্তরে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য আরও আন্তরিক চেষ্টা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়কে হতে হবে জ্ঞান সৃষ্টি ও জ্ঞান ধারণের একটি মূল্যবান প্রতিষ্ঠান। নিজেদের স্বার্থেই এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের সকল সমস্যার সমাধান করে আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হতে হবে।

অনষ্ঠানে আরও ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সিটি ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক শাহ-ই আলম, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আলহাজ মকবুল হোসেন, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য, সিন্ডিকেট সদস্য, একাডেমি কাউন্সিলর, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028069019317627