দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সব স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলসহ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ অবস্থায় গত ২৯ মার্চ সকাল থেকে সংসদ টিভিতে ‘আমার ঘরে আমার ক্লাস’ শিরোনামে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের ক্লাস সম্প্রচার শুরু হয়েছে। গত ৭ এপ্রিল ‘ঘরে বসে শিখি’ শিরোনামে সংসদ টেলিভিশনে শুরু হয়েছে প্রাথমিক স্তরের ক্লাস সম্প্রচার। সকাল ৯টা থেকে শুরু বেলা ১১টা পর্যন্ত সংসদ টিভিতে প্রাথমিকের ক্লাস এবং ১১টা থেকে দুপুর ২টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত মাধ্যমিকের ক্লাস প্রচার করা হচ্ছে।
করোনার বন্ধে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে টিভিতে পাঠদান চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধায়নে মাধ্যমিকের ক্লাস প্রচারের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। সহযোগিতা করছে এটুআই, ব্যানবেইসসহ অন্যান্যরা। প্রাথমিকের ক্লাস প্রচারের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে টিভিতে এই পাঠদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। দীর্ঘ ছুটিতে লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে পড়াশোনার মধ্যে রাখার সরকারি এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, বুধবার (১৫ এপ্রিল) সকাল ৯টা থেকে শুরু বেলা ১১টা পর্যন্ত প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম এ ছয় শ্রেণির ক্লাস সংসদ টিভিতে প্রচার করা হবে। প্রতিটি ক্লাস হবে ২০ মিনিটের। সকাল ৯টা থেকে ৯টা ২০মিনিট পর্যন্ত প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির ক্রিয়ালাপ ভিত্তিক আনন্দদায়ক শিখন ক্লাস প্রচার করা হবে।
৯টা ২০ মিনিট থেকে ৯টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত প্রথম শ্রেণির ইংরেজি ক্লাস ও ৯টা ৪০ মিনিট থেকে ১০টা পর্যন্ত দ্বিতীয় শ্রেণির গণিত ক্লাস প্রচার করা হবে।
১০টা থেকে ১০টা ২০ মিনিট পর্যন্ত তৃতীয় শ্রেণির ইংরেজি ক্লাস ও ১০টা ২০ মিনিট থেকে ১০টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত চতুর্থ শ্রেণির বিজ্ঞান ক্লাস পুনঃপ্রচার করা হবে। আর ১০টা ৪০ মিনিট থেকে ১১টা পর্যন্ত পঞ্চম শ্রেণির গণিত ক্লাস পুনঃপ্রচার করা হবে।
জানা গেছে, সংসদ টিভিতে বুধবার (১৫ এপ্রিল) বেলা ১১টা থেকে মাধ্যমিকের ক্লাস সম্প্রচার করা হবে। ১১টা ৫ মিনিট থেকে ১১টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ষষ্ঠ শ্রেণির গণিত ও ইংরেজি ক্লাস প্রচার করা হবে।
১১টা ৪৫ মিনিট থেকে ১২টা ২৫মিনিট পর্যন্ত সপ্তম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং বিজ্ঞান ক্লাস প্রচার করা হবে।
১২টা ২৫মিনিট থেকে ১টা ৫ মিনিট পর্যন্ত অষ্টম শ্রেণির ইংরেজি ও বাংলা ক্লাস প্রচার করা হবে।
১টা ৫ মিনিট থেকে ১টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত নবম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং হিসাব বিজ্ঞান ক্লাস প্রচার করা হবে।
১টা ৫ মিনিট থেকে ১টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত দশম শ্রেণির বাংলা ও উচ্চতর গণিত ক্লাস প্রচার করা হবে।
শিক্ষার্থীরা সংসদ টিভিতে এসব ক্লাস দেখতে পারবেন। এছাড়া দৈনিক শিক্ষা ডটকমের অরিজিনাল ফেসবুক পেজ এবং দৈনিক শিক্ষা ডটকমের অফিশিয়াল ফেসবুক গ্রুপে সরাসরি ক্লাস সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটুআইয়ের ফেসবুক পেজে ক্লাস সম্প্রচার করা হবে।
টেলিভিশনে মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য পরিচালিত বিষয়ভিত্তিক ক্লাস দেখলেই কাজ শেষ নয়। টিভিতে প্রচারিত প্রতিটি ক্লাসের পর দেয়া হবে বাড়ির কাজ। আর প্রতিটি বিষয়ের আলাদা খাতায় সেই বাড়ির কাজ শেষ করতে হবে। করোনার তাণ্ডব শেষ হলে যখন স্কুল খোলা হবে তখন শিক্ষকদের সেই বাড়ির কাজের খাতা দেখাতে হবে। বাড়ির কাজের প্রাপ্ত নম্বর ধারাবাহিক মূল্যায়নের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের পাঠকের জন্য সংসদ টিভিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ক্লাস প্রচারের নতুন রুটিন তুলে ধরা হলো।
যতদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে ততদিনই টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে। দীর্ঘসময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে বাসায় অবস্থান করেই ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারে সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই সংসদ টেলিভিশনে রেকর্ড করা শিক্ষা কার্যক্রম সম্প্রচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
যদিও অভিভাবকরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, বিশ্বের ১৮৫ দেশে জাতীয়ভাবেই বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৫৪ কোটি ২৪ লাখ ১২ হাজার শিক্ষার্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না। তবে প্রায় সব দেশই অনলাইনে শিক্ষাব্যবস্থা চালু রেখেছে। গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আমাদের দেশে টেলিভিশনে ক্লাস প্রচার করা হলেও বিশ্বের অন্য দেশে গুগল ক্লাসরুম, জুম, হ্যাংআউট, স্কাইপের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে লাইভ ক্লাসরুমের মাধ্যমে পাঠদান পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পেজ বা গ্রুপে সব সময়ের জন্য চলে লেখাপড়া।
দৈনিক শিক্ষার পাঠকেরা বলেছেন, বাংলাদেশে যেভাবে টিভিতে ক্লাস সম্প্রচার করা হচ্ছে তাতে শিক্ষকের সঙ্গে কথাবার্তা আদান-প্রদান সম্ভব নয়। শিক্ষক যা বোঝালেন তা না বুঝলেও কিছু করার নেই। কিন্তু গুগল ক্লাসরুম, জুমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে শিক্ষককে প্রশ্ন করার সুযোগ আছে। এরপর শিক্ষক বিষয়টি বুঝিয়েও দিতে পারেন। গত কয়েকবছরে দেশের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে ল্যাপটপ প্রজেক্টরসহ সব সুবিধা রয়েছে। সেগুলো ব্যবহার করলেই লাইভ ক্লাস প্রচার করা সম্ভব।