২০২১ সালেও দেশের সবার জন্য করোনার ভ্যাকসিন মিলবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক |

করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধে সারা বিশ্ব টিকার দিকে তাকিয়ে আছে। বিশ্বের কয়েকটি দেশ সে টিকার চূড়ান্ত পরীক্ষার মধ্যেই আছে। রাশিয়া এরইমধ্যে একটি করোনা টিকার অনুমোদনও দিয়েছে।  

অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও টিকা পাওয়ার অপেক্ষায় আছে। তবে করোনার টিকা বাজারে এলেও বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষকে একসঙ্গে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে না। সরকার তা কিনে আনতেও পারবে না। প্রথম ধাপে দেশের পাঁচ শতাংশ মানুষ টিকা পেতে পারে। সে অনুযায়ী ২০২১ সাল শেষ হলেও দেশের সব মানুষ টিকা পাবে না। এ কথা জানান বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী।

  

বিএমএ মহাসচিব বলেন, কোভিড-১৯ প্রতিরোধে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ পর্যন্ত ১৪১টি টিকা (ভ্যাকসিন) তৈরির কাজ হচ্ছে। এর মধ্যে ২৫টি টিকা মানুষের ওপর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হচ্ছে। মাত্র ছয়টি টিকা পরীক্ষামূলক প্রয়োগের তৃতীয় ধাপে আছে। সেগুলোর গবেষণা কবে নাগাদ শেষ হবে বলা যাচ্ছে না। টিকা যদি ডিসেম্বরে বের হয়ে যায়, তা হলেও আমাদের দেশে আসতে আসতে জানুয়ারি কিংবা ফেব্রুয়ারি লেগে যাবে। তাও সবাই প্রথম ধাপে পাবে না।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, আপনি যদি একটি সুড়ঙ্গের মুখে অবস্থান করেন তাহলে এটার শেষ প্রান্ত কোথায় গিয়ে ঠেকেছে সেটা প্রথমেই বলতে পারবেন না। এই সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তটা সিলেটও হতে পারে, এমনকি ভারতেও হতে পারে। সুড়ঙ্গটা কত লম্বা, সেটা সঠিকভাবে বলা কঠিন। ভ্যাকসিনের ব্যাপারটাও তাই। তারা আগে বলছে, অক্টোবরে এসে যাবে। এখন বলছে ডিসেম্বরে আসবে। কেউ কেউ ভ্যাকসিন ডিসেম্বরেও আনতে পারবেন। তখন আমাদের অবস্থাটা কী হবে।

তিনি আরও বলেন, দেশে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৪৫ থেকে ৫০ জনের মৃত্যু হচ্ছে। আমরা যখন পিক টাইমে ছিলাম, তিন মাস আগেও মৃত্যুর সংখ্যা আরও কম ছিল। তাহলে বলতে হয় আমাদের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। কখন পিক, কোথায় পিক আমরা কিছুই বুঝলাম না। আমরা কোন জায়গায় আছি সে জায়গাটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিংবা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে বলতে হবে। 

মিডিয়ায় এসে সংবাদ সম্মেলন করে ১৬ কোটি মানুষকে জানাতে হবে, সাইন্টিফিকভাবে ডাটা উপস্থাপন করতে হবে এবং সঠিকভাবে বলতে হবে, আমরা কখন পিকে ছিলাম, আমরা এখন কোন অবস্থানে আছি, কিংবা আমরা নিচের দিকে নামছি অথবা আমরা ওপরের দিকে উঠছি।
ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, বইপত্রে বৈজ্ঞানিকভাবে সেকেন্ড ওয়েভ বলতে কোনো শব্দ নেই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আমাদের ঈদের আগে একটা পর্যায়ে ছিল। তখন অনেক মানুষ শহর থেকে গ্রামে গেছেন। ট্রেনে, বাসে চড়েছেন, বাজারে গেছেন, ঈদের কোলাকুলি করেছেন। এটাকে সেকেন্ড ওয়েভ কিংবা থার্ড ওয়েভ বলা যেতে পারে।  

তিনি বলেন, বিশ্বের যেসব দেশে করোনার সংক্রমণ কমেছে, তারা ধাপে ধাপে সবকিছু খুলে দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের এখানে এখন সবকিছু স্বাভাবিক। আমদের কখন প্রথম ওয়েভ গেল, কখন দ্বিতীয় ওয়েভ আসবে কিছুই বোঝা যায় না।

বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ের বিভিন্ন গবেষণা সম্পর্কে মন্তব্য করে বিএমএ মহাসচিব বলেন, এই গবেষণার দিয়ে, এই অল্প সংখ্যক মানুষের ওপর গবেষণা চালিয়ে যদি মনে করে করোনা কমে গেছে, করোনা আটকে ফেলবেন, করোনা চলে গেছে, তাহলে আপনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন। করোনাকে এত অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, ৬৪ জেলার ৮ থেকে ১০ লাখ মানুষের তথ্য নিয়ে যদি গবেষণা করা যেত, তাহলে বোঝা যেত বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থা। ঢাকা শহরের দুই থেকে চার হাজার মানুষের নমুনা নিয়ে স্টাডি করলে সেটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ঢাকা জেলার জনসংখ্যা যেখানে দুই কোটি, সেখানে অন্তত দুই লাখ মানুষের নমুনা সংগ্রহ করে স্টাডি করলে প্রকৃত তথ্য উঠে আসত।

সরকারের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার প্রকোপ কমেছে। এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করতেই তিনি বলেন, ঢাকা, গত তিন মাসের তথ্য উপস্থাপন করে যদি তারা এ কথা বলতেন,তাহলে মানুষ হয়তো তা বিশ্বাস করতো।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025100708007812