২০ বছর বয়সেই শত শত পিএইচডি!

মিথিলা মুক্তা |

পাঁচ বছর আগে ভারতে পিয়ন পদে চাকরি পেতে ৩ হাজার ৭০০ জন পিএইচডি ডিগ্রিধারীর আবেদন সর্ব মহলে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছিলো। এবার চমকে দিয়েছে বাংলাদেশ। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের দেশে এখন পিএইচডিধারীর সংখ্যা ৫১ হাজার ৭০৪।  গত ২৮ নভেম্বর প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২-এর ‘ন্যাশনাল রিপোর্টে’ এমনটাই উঠে এসেছে। আর প্রশ্ন তোলার সুযোগ করে দিয়েছে ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৭৮৩ জনের পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে। এদের মধ্যে আবার এগিয়ে আছেন নারীরা। ২৪ বছর বয়স হওয়ার আগেই ৪০৩ জন নারী এখন এই ডিগ্রি নিয়েছেন।

বাংলাদেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থীকে পিএইচডি করার যোগ্যতা অর্জন করতে হলে তাকে আগে অবশ্যই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করতে হবে। সেক্ষেত্রে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে খুব ভালো ফল অর্জন না করতে পারলে তাকে এমফিলও করে আসতে হয়। আবার স্নাতকোত্তরের আগে স্নাতক এবং মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে আসতেও অনেক সময় প্রয়োজন। আছে একাডেমিক বিড়ম্বনা, সেশন জট। সব মিলিয়ে একজন শিক্ষার্থীর ৩০ বছর বয়সের আগেই যেখানে পিএইচডি অর্জন অতীব কঠিন, সেখানে ২৪ বছরের নিচে ৭৮৩ জনের এই ডিগ্রি অর্জন অনুসন্ধান ও তদন্তের দাবি রাখে।  

বিবিএস প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরো দেখা যাচ্ছে, চল্লিশোর্ধ্ব—২৯ হাজার ৯৯৮,  ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সী ১৫ হাজার ১১৪ ও  ২৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী ৫ হাজার ৮০৯ জন পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। পিএইচডিধারীদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৩৭ হাজার ৫১৭। নারী আছেন ১৪ হাজার ১৮৭ জন। 

পিএইচডির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে, ৩০ হাজার ১৬৬ জন। চট্টগ্রাম বিভাগে ৭ হাজার ১৪৪, রাজশাহী বিভাগে ৪ হাজার ১৬৪, খুলনা বিভাগে ২ হাজার ৯৩৮, রংপুরে ২ হাজার ১২০, ময়মনসিংহে ২ হাজার ৩৯, সিলেটে ১ হাজার ৯৯০  এবং বরিশাল বিভাগে ১ হাজার ১৪৩ জন পিএইচডিধারী রয়েছেন। 

বিগত বছরগুলোর মধ্যে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সবচেয়ে বেশি পিএইচডি দিয়েছে করোনার বন্ধের মধ্যে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ৬৪১ জন পিএইচডি অর্জন করেছেন। ওই বছর পিএইচডি পেতে চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়েছিলেন ৮৯০ জন। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে পিএইচডি অর্জনের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৩৫৩ জনে। 

ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে পিএইচডি অর্জন করেন ২৩৩ জন। ২০১৮ তে ৪০০ জন। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে পিএইচডি দেয়া হয় ৪৪১ জনকে। এর আগে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে ৪৭৪ জন, ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে ৩৫২, ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে ৪৮৮ ও ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে ৩৭০ জনকে পিএইচডি ডিগ্রি দেয়া হয়। 

প্রসঙ্গত, পিএইচডির অর্থ হল ডক্টর অফ ফিলোসফি। এটি উচ্চতর শিক্ষাগত ডিগ্রি। বিজ্ঞান ও কলার বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য স্নাতক উত্তীর্ণ গবেষককে এই ডিগ্রি দেওয়া হয়। সাধারণত একজন গবেষককে গবেষণার বিষয়ে অভিজ্ঞ কোনো অধ্যাপকের অধীনে গবেষণা করতে হয়। যিনি ডক্টর অফ ফিলোসফি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি নামের আগে 'ড.' বসাতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক পদ পেতে হলে অবশ্যই এই ডিগ্রি অর্জন করতে হয়। তাই আগে শিক্ষক ও গবেষকদের মধ্যেই মূলত পিএইচডি গ্রহণের বিষয়টি সীমাবদ্ধ ছিলো। কিন্তু, কয়েক বছর ধরে দেশের নন-একাডেমিক পেশাজীবীদের মধ্যেও উচ্চতর এ ডিগ্রির প্রতি ঝোঁক বাড়ছে। বিশেষ করে সব ধরণের আমলাদের পিএইচডি ডিগ্রি গ্রহণের হার চোখে পড়ার মতো। তাছাড়া সরকারের তরফে আর্থিক সুবিধা পাওয়ার সুযোগ থাকায় সরকারি কলেজে কর্মরত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের এই ডিগ্রি অর্জনের হারও চোখে পড়ার মতো। 

হালে পিএইচডি গবেষণা নিয়ে নানা অনিয়মের এন্তার অভিযোগ উঠছে । ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে ছয় শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানায় ঢাকার বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়। অনুমোদনহীন নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থের বিনিময়ে ভুয়া পিএইচডি সনদ অর্জনের অভিযোগ ছিলো তাদের বিরুদ্ধে। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তার গবেষণা অভিসন্দর্ভের ৯৮ শতাংশই নকল। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট থেকে গত বছর পিএইচডি গবেষণায় জালিয়াতি রোধে সাত সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। 

চলতি বছরের গোড়ার দিকে গবেষণা জালিয়াতির দায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষকের পদাবনতি হয়। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক ওমর ফারুকের পিএইচডি ডিগ্রি বাতিল করে সহকারী অধ্যাপক থেকে লেকচারার পদে অবনমন করা হয়। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সামিয়া রহমানকে সহযোগী অধ্যাপক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে অবনমন করা হয়। এ ছাড়া অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানকে ২ বছর পদোন্নতি থেকে বিরত রাখা হয়। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এমন জালিয়াতির ঘটনা অনেক ঘটছে। দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ল্যাব ও গবেষণার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই। এমনকি কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি বা এমফিল শিক্ষার্থীদের তত্ত্বাবধানের জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকও নেই। পিএইচডি দেয়ার জন্যই দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় কিছু বিভাগের জন্ম হয়েছে হয়েছে বলেও সমালোচনা আছে।  

 

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সরকার পরিচালনায় ভুলত্রুটি থাকলে ধরিয়ে দিন, সম্পাদকদের ড. ইউনূস - dainik shiksha সরকার পরিচালনায় ভুলত্রুটি থাকলে ধরিয়ে দিন, সম্পাদকদের ড. ইউনূস এইচএসসি ফল তৈরি: পরীক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়েছে বোর্ড - dainik shiksha এইচএসসি ফল তৈরি: পরীক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়েছে বোর্ড শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য ও হেনস্তা নয়: শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য ও হেনস্তা নয়: শিক্ষা উপদেষ্টা স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের আগস্ট মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের আগস্ট মাসের এমপিওর চেক ছাড় এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ডিজি হলেন - dainik shiksha এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ডিজি হলেন ছাত্রী হয়রানির অভিযোগ, উত্তরা ইউনিভার্সিটি উত্তপ্ত - dainik shiksha ছাত্রী হয়রানির অভিযোগ, উত্তরা ইউনিভার্সিটি উত্তপ্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের হাত ভাঙলেন বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক - dainik shiksha ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের হাত ভাঙলেন বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক সাংবাদিক নিপীড়নের আইনগুলো এখনই বাদ দেয়ার প্রস্তাব - dainik shiksha সাংবাদিক নিপীড়নের আইনগুলো এখনই বাদ দেয়ার প্রস্তাব মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব দিতে আবেদন আহ্বান - dainik shiksha মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব দিতে আবেদন আহ্বান শিরীন শারমিনের পদত্যাগে স্পিকার পদে কি শূন্যতা তৈরি হলো - dainik shiksha শিরীন শারমিনের পদত্যাগে স্পিকার পদে কি শূন্যতা তৈরি হলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024039745330811