২০ মিনিট আগে এসএসসির প্রশ্ন ফাঁস করা সেই প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি |

অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে দণ্ডিত হওয়ায় টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন খালিদকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড  গত ২৯ ডিসেম্বর তাকে এ বহিষ্কার আদেশ প্রদান করেন।

বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক স্বাক্ষরিত চিঠি থেকে জানা যায়, সাগরদিঘী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন খালিদ ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় সাগরদিঘী কেন্দ্রের কেন্দ্রসচিব ছিলেন। সে সময় টাকার বিনিময়ে গণিত প্রশ্ন ফাঁস করায় পুলিশ তাঁকে আটক করে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাঁকে এক মাসের কারাদণ্ড প্রদান করে। এ ছাড়া অষ্টম ও নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন বাবদ অর্থ আত্মসাৎ এবং জালিয়াতির মাধ্যমে নিজের স্ত্রীকে তিনি এমপিওভুক্ত করেন।

২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি দৈনিক শিক্ষায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রশ্নফাঁস  ও হলের ভেতর বহু নির্বাচনী প্রশ্নের উত্তর বলে দেয়ার আশ্বাসে বাণী শুনাতেন পরীক্ষার্থীদের। এসব শুধু কথায় নয় কাজেও প্রমাণ দিতেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সাগরদিঘী এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব হুমায়ুন খালিদ। আর এ কাজে সব বিষয়ে প্রশ্নফাঁসের জন্য প্যাকেজ ধরা হয়েছিলো পরীক্ষার্থী প্রতি ২৫ হাজার টাকা। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, এ বছর কেন্দ্রটিতে ১১টি প্রতিষ্ঠানের তিন বিভাগে মোট সাতশ ২০ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে।

সাগরদিঘী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাকে বলেন,  গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি কেন্দ্রে প্রশ্নফাঁসের মতো ঘটনা ঘটে। যার কারণে আমি নিজেই নজর রাখতে থাকি। এসএসসি পরীক্ষার শুরু থেকেই তারা এ কাজ করে আসছিলো। জানতে পারি সব বিষয়ে প্রশ্নফাঁসে প্রতি পরীক্ষার্থী বাবদ ২৫ হাজার টাকার প্যাকেজ ছিল। এ কাজের সাথে শুধু কেন্দ্র সচিব নয় কেন্দ্রের অন্যান্য কর্মকর্তারাও জড়িত। এরই ধারাবাহিকতায় সচিব গত ৯ তারিখের গণিত পরীক্ষার প্রশ্ন পরীক্ষা শুরুর ২০ মিনিট আগেই ফাঁস করেন’।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সাগরদিঘী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশেই শ্যামল চন্দ্র সাহার শ্যামল কোচিং সেন্টার। আর এ কোচিংয়ের অর্ধেক শেয়ারে আছেন প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন খালিদ। একদিকে নিজ কোচিংয়ের পরীক্ষার্থীদের ভালো ফলাফল করানো অন্যদিকে জনপ্রতি ২৫ হাজার টাকার লোভ সামলাতে না পেরে পরীক্ষা শুরুর ২০ মিনিট আগেই দপ্তরির হাত হয়ে গণিত প্রশ্ন চলে যায় শ্যামল চন্দ্র সাহার হাতে। বিষয়টি গোপনে পুলিশ জানতে পেরে কোচিংয়ের শিক্ষক শ্যামল ও দপ্তরি আব্দুর রহমানকে প্রশ্নসহ হাতে-নাতে আটক করে। কথা হয় স্কুলের দপ্তরি আব্দুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন খালিদ আমার হাতে প্রশ্নপত্র দিয়ে কেন্দ্রের বাহিরে রাকিব লাইব্রেরিতে নিয়ে যেতে বলেন।

আমি তার কথামতো দোকানে দাঁড়িয়ে থাকা কোচিং মাস্টার শ্যামল বাবুর কাছে প্রশ্নপত্রটি দেই। আমি তার অধীনে চাকরি করি। তিনি যা বলবেন আমার তো তাই করতে হয়। আমার কোনো দোষ ছিলো না। এ ঘটনায় কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আল মামুন কোচিং শিক্ষক শ্যামল ও কেন্দ্র সচিব হুমায়ুন খালিদকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে এক মাসের কারাদ- প্রদান করেন। পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইন ১৯৮০ এর ৪ ধারা অনুযায়ী প্রশ্নপত্র ফাঁস বা বিতরণ করার অপরাধে চার বছর পর্যন্ত কারা- অথবা অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-িত করার বিধান আছে। 

গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসসহ পরীক্ষার হলে বহু নির্বাচনী প্রশ্নের উত্তর বলে দেয়ায় তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন, সচিবের পদ থেকে হুমায়ুন খালিদকে বহিষ্কার এবং সাগরদিঘী কেন্দ্রটি বাতিল করার জন্য শিক্ষা বোর্ডকে সুপারিশ করেন। পরবর্তীতে বোর্ডে তদবির করে হুমায়ুন খালিদ কেন্দ্রটি বহাল রাখেন।

জানা যায়, উপজেলা সদর কেন্দ্র থেকে বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রায় ৩০ কি.মি. দূরে হওয়ায় পরীক্ষার্থীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে বোর্ড ২০১০ সালে কেন্দ্রটির অনুমোদন দেয়। অনুমোদন পাওয়ার পর থেকেই নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। ২০১৬ সালে হঠাৎ করেই চলমান এসএসসি পরীক্ষার উচ্চতর গণিতের প্রশ্ন স্থানীয় জনতা ব্যাংকের লকার থেকে উধাও হয়ে যায়।

যা পরবর্তীতে আধাঘন্টা পর প্রশ্ন ফটোকপির মাধ্যমে পরীক্ষা নেয়া হয়। একই কেন্দ্রে গত বছর জেএসসি পরীক্ষায় নকল সরবরাহ করেন মুরাইদ গরোবাজার স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু ইছহাক। এ কাজের জন্য হাতেনাতে তাকে ধরে প্রশাসন এক লাখ টাকা জরিমানা করেন। পরে শিক্ষক সমিতির মধ্যস্থতায় দশ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে তিনি মুক্তি পান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রধান শিক্ষক বলেন নিজ কেন্দ্রে ভালো ফল দেখাতে হবে এমন অসুস্থ প্রতিযোগিতাই প্রশ্ন ফাঁসের মূল কারণ। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032339096069336