২০ হাজার শিক্ষার্থীর একজন চিকিৎসক!

জবি প্রতিনিধি |

প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই নানা সমস্যায় ধুঁকছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। ক্যাম্পাসে একটি মেডিক্যাল সেন্টার রয়েছে তবে এখানে না রয়েছে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম, না রয়েছে যথেষ্ট চিকিৎসক।

প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র একজন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া মেডিক্যাল সেন্টারে রয়েছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব। মেডিক্যাল সেন্টারের জন্য তিনটি কক্ষ বরাদ্দ থাকলেও এটি পরিচালিত হয় একটি কক্ষে।
মেডিক্যাল সেন্টারের উন্নয়নে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। ফলে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলছেন, হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে এখানে তত্ক্ষণাৎ সেবা পাওয়ার কোনো উপায় নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে একজন চিকিৎসক দিয়েই পরিচালিত হচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টার, যে কারণে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। এ ছাড়া শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে আরো প্রায় দুই হাজার জন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে, এখন সংশ্লিষ্ট অনেকের মনে প্রশ্ন, মেডিক্যাল সেন্টার থাকবে কি না।

মেডিক্যাল সেন্টারসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দিন খোলা থাকে এটি। প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ জন এখানে চিকিৎসা নিতে আসে। মাঝেমধ্যে শিক্ষকরাও আসেন রক্তচাপ মাপাতে। চিকিৎসা সরঞ্জাম হিসেবে আছে প্রেসার মাপা ও একটি ওজন মাপার যন্ত্র, রোগীদের জন্য দুটি শয্যা ও একটি অ্যাম্বুল্যান্স। আছে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য স্যালাইন, নাপা, হিস্টাসিনসহ কয়েক ধরনের ওষুধ। বাকিটা প্রেসক্রিপশনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

অভিযোগ রয়েছে, নামমাত্র যে ওষুধ মেডিক্যাল সেন্টারে রয়েছে তাও শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো দেওয়া হয় না। শুধু প্রেসক্রিপশন দেওয়া হয়। ফলে শিক্ষার্থীদের বাধ্য হয়ে মিটফোর্ড আর ন্যাশনাল হাসপাতালে যেতে হয়।

সপ্তাহখানেক আগে শরীরে ব্যথা নিয়ে মেডিক্যাল সেন্টারে গিয়েছিলেন মাসুম বিল্লাহ আখন্দ নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি জানান, চিকিৎসক বসা থাকলেও তাঁকে সহকারী চিকিৎসক ডেকে নিয়ে একটি করে তিন পদের তিনটি ট্যাবলেট দেন। বাকিগুলো দোকান থেকে কিনে নিতে বলেন। মাসুম বিল্লাহ আখন্দ বলেন, ‘আমি দেখলাম ওষুধ আছে অথচ আমাকে প্রেসক্রিপশন দিয়ে বাইরে থেকে নিতে বলা হলো। ’ মোজাম্মেল নামের এক শিক্ষার্থী জানান, অসুস্থতা নিয়ে একবারের বেশি গেলে বিরক্ত হন চিকিৎসক।

ওষুধ থাকার পরও কেন দিচ্ছে না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেডিক্যাল সেন্টারের চিকিৎসক মিতা সবনম বলেন, ‘আমরা একটির বেশি ওষুধ দেই না, বিষয়টা ঠিক। সব শিক্ষার্থীই যাতে ওষুধ পায় তাই এটা করি। কারণ যে পরিমাণ ওষুধ আমরা পাই তাতে বেশি দেওয়া যায় না। ’

আপনি ছুটিতে থাকলে রোগী কে দেখে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, ‘যেহেতু আমি একা, ছুটিতে থাকলে সহযোগী চিকিৎসকরাই দেখেন। কী করব বলেন, আমি যেহেতু মানুষ, পরিবার আছে, সমাজ আছে, নিজেরও অসুস্থতা আছে সব মিলিয়ে ছুটি নেওয়াই লাগে। ’

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নতুন একাডেমিক ভবনের নিচে পরিচালিত হচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র মেডিক্যাল সেন্টারটি। ভবনের নিচতলায় বাঁ দিকে সামনে গিয়ে প্রকৌশল দপ্তরের বিপরীত পাশেই রয়েছে এটি। মেডিক্যাল সেন্টারের কক্ষে ঢুকতেই সামনে পড়ে একটি ওজন মাপার মেশিন। মেডিক্যালে চিকিৎসা সরঞ্জামের মধ্যে এটি অন্যতম। এ ছাড়া প্রেসার মাপার দু-একটি যন্ত্র ছাড়া তেমন কিছুই দেখা গেল না। পাশের বাথরুমের গন্ধে বসে থাকা যাচ্ছিল না কক্ষটিতে। মেডিক্যালের জন্য তিনটি কক্ষ বরাদ্দ থাকলেও এখন একটি কক্ষে পরিচালিত হচ্ছে। কক্ষটিতে রয়েছে একটি শয্যা ও কয়েকটি চেয়ার। সেগুলো আবার ধুলায় ধূসর হয়ে পড়ে আছে। এখানে কর্মচারীরা খাওয়াদাওয়া করে।

সেখানে কথা হচ্ছিল সিনিয়র চিকিৎসা সহকারী হালিমা আক্তারের সঙ্গে। এ সময় দুজন শিক্ষার্থী সেবা নিতে এসেছেন। একজনের ঠাণ্ডা জ্বর, অন্যজনের পায়ে ব্যথা। এই দুই শিক্ষার্থীকে ওষুধ দিলেন হালিমা আক্তার। কী দেখে বা বুঝে ওষুধ দিলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে হালিমা আক্তার বলেন, ‘আন্দাজের ওপর দিয়ে দিলাম। ভালো হলে তো ভালো, নয়তো অন্য কোথাও ডাক্তার দেখিয়ে নেবে। ’

চিকিৎসক না থাকলে এ অবস্থায় কে চিকিৎসা দেয় বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, ‘আমরাই প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থাকি। আট বছর ধরে এভাবেই চলে আসছে। ’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে মেডিক্যাল নিয়ে আমরা কিছু ভাবছি না। নতুন ক্যাম্পাস যখন কেরানীগঞ্জে নেওয়া হবে, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক মেডিক্যাল নির্মাণ করা হবে। বর্তমানে চিকিৎসক একজন আছেন, কিছুদিনের মধ্যেই চিকিৎসক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। ’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0069320201873779