সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সমস্যা সমাধানের আগেই নতুন নিয়োগ

সিলেট প্রতিনিধি |

নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ ও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার কথা বলে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে বেতন-ভাতা বন্ধ রাখা হয়েছে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪২ কর্মকর্তা-কর্মচারীর। অথচ আগে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা দূর না করেই বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ উঠেছে, এ নিয়োগে চাকরি স্থায়ীকরণের কথা বলে পুরনোদের কাছ থেকে দ্বিতীয় দফা অর্থ আদায়ের চেষ্টা চলছে। দীর্ঘদিন বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় বেশ বিপাকে পড়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন বন্ধ থাকলেও নিয়মিত পাচ্ছেন উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার।

নূরুস সোবহান বাবুল নামে এক কর্মচারী জানান, তার বাড়ি ফেনী জেলায়। তিনি অফিস সহায়ক ছিলেন। বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বাধ্য হয়ে বাড়ি চলে যেতে হয়েছে তাকে।

কিশোরগঞ্জের রাসেলও বাড়ি চলে গেছেন। একইভাবে সিলেটের আশপাশের জেলার অনেকেই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাড়ি চলে গেছেন। তবে সবাই এখনো আশায় রয়েছেন চাকরি স্থায়ী হবে, বেতন-ভাতা ফিরে পাবেন।

সৌরভ নামে এক কর্মচারী জানান, তারা উচ্চ আদালতে একটি রিট করেছেন। তবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলতে চাননি।

দেশের চতুর্থ চিকিৎসাবিষয়ক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে যাত্রা করে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। ওই বছরের নভেম্বর ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ মোর্শেদ আহমদ চৌধুরীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হয়। তার মেয়াদ শেষ হলেও এখনো বিশ্ববিদ্যালয়টির নিজস্ব ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজই শুরু করা সম্ভব হয়নি। প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমে গতি না আনতে পারলেও বিতর্কিতভাবে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী অ্যাডহক (অস্থায়ী) ভিত্তিতে নিয়োগ দেয় তৎকালীন কর্তৃপক্ষ। সরাসরি পরীক্ষার মাধ্যমে ও অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ২৪২ কর্মকর্তা-কর্মচারী। তবে সে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তদন্ত করে এর প্রমাণ পেয়েছে ইউজিসি। এরপর তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ ও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার কথা বলে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর।

অন্যদিকে লোকবল নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তের স্বার্থে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ডা. মো. মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. নাঈমুল হককে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। গত ২২ জুন মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র স্পেশাল জজ একিউএম নাছির উদ্দীন এ আদেশ দেন। এর আগে ২০ জুন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন সিলেট মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও রেজিস্টারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। অন্যদিকে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের স্বপ্ন পূরণ হতে চললেও এখনো ঝুলে আছে বিগত ভিসি ও রেজিস্টারের আমলে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভাগ্য।

জানা যায়, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে গড়ে উঠবে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। এজন্য উপজেলার মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের গোয়ালগাঁও ও হাজরাই মৌজায় ৮০ দশমিক ৩১ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। ভূমি উন্নয়নসহ নির্মাণ করা হবে দুটি আবাসিক ও ১০টি অনাবাসিক ভবন। সঙ্গে থাকবে এক হাজার শয্যার হাসপাতাল। সরকারি চতুর্থ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এটি। ২ হাজার ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটি আগামী ২০২৭খ্রিষ্টাব্দের ৩০ জুনের মধ্যে শতভাগ বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করে একনেকে ‘সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (এসএমইউ) স্থাপন’ প্রকল্প অনুমোদন পায়। গত ১৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (সংশোধন) আইন, ২০২৩’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। এ আইনে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন নাম করা হয় ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়’। এরপর পরই নতুন ক্যাম্পাসে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।

অন্যদিকে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেনের যোগদানের পর কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা ছাড়সহ তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের আশ্বাস দেন। এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। কয়েক দফায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বিভাগীয় প্রার্থীদের বিষয়টি উল্লেখ না থাকায় পুনরায় হতাশায় পড়েন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ বিষয়ে সিলেটের সিনিয়র সহকারী কমিশনার আবিদা সুলতানা জানান, ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। অনেকটা শেষ পর্যায়ে। তবে অর্থ প্রদানের পর্যায় এখনো আসেনি।

সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ফজলুর রহমান বলেন, ‘আগের ভিসি ও রেজিস্ট্রার লোকবল নিয়োগসংক্রান্ত জটিলতা সৃষ্টি করে গেছেন, যেটি দূর করা কঠিন হয়ে পড়েছে। দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। তবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রসঙ্গে তিনি কিছু বলতে চাননি।’

সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন বলেন, ‘আমি উপাচার্য পদে নিয়োগ পাওয়ার আগ থেকেই সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। এখন যারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে আছে তাদের বেতন-ভাতা হচ্ছে। বাকিটা রেজিস্ট্রার ভালো বলতে পারবেন।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পুরনো পদ্ধতিতে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা - dainik shiksha পুরনো পদ্ধতিতে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা শিক্ষায় কী হলো তিন মাসে - dainik shiksha শিক্ষায় কী হলো তিন মাসে মাদরাসায় চলে যায় প্রাথমিকের ২৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী - dainik shiksha মাদরাসায় চলে যায় প্রাথমিকের ২৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক অবশেষে কপাল খুললো পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে বাদপড়াদের - dainik shiksha অবশেষে কপাল খুললো পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে বাদপড়াদের শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ১৫তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ১৫তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে গণঅভ্যুত্থানে আহতদের তোপের মুখে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা - dainik shiksha গণঅভ্যুত্থানে আহতদের তোপের মুখে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা দপ্তরসহ সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রীকে চালাতেন পিয়ন! - dainik shiksha দপ্তরসহ সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রীকে চালাতেন পিয়ন! ৬১০ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর শিক্ষা অধিদপ্তরে নিয়োগ চূড়ান্ত! - dainik shiksha ৬১০ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর শিক্ষা অধিদপ্তরে নিয়োগ চূড়ান্ত! দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029058456420898