২৪ ঘণ্টা পার হলেও ‘বিতর্কিতদের’ বহিষ্কার করেনি ছাত্রলীগ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে থাকা ‘বিতর্কিতদের’ বহিষ্কারে গত বুধবার মধ্যরাতে ২৪ ঘণ্টা সময় নিয়েছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু সেই সময় পার হলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ‘নিরপরাধ’ কারও সঙ্গে যেন ‘অবিচার’ না হয়, তার জন্য ‘বিতর্কিতদের’ বহিষ্কারে তাঁরা সময় নিচ্ছেন। শনিবার (১৮ মে) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

ছাত্রলীগের কমিটি থেকে ‘বিতর্কিতদের’ বাদ দিতে গত বুধবার দুপুরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দেন। পরে রাতে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ‘বিতর্কিতদের’ বহিষ্কারে ২৪ ঘণ্টা সময় নেন ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

সংবাদ সম্মেলনে গোলাম রাব্বানী বলেছিলেন, ‘গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, বিবাহিত, অছাত্র, মামলার আসামিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত ১৭ জনের নাম আমরা প্রাথমিকভাবে পেয়েছি। প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে তাঁদের বহিষ্কারের মাধ্যমে পদশূন্য ঘোষণা ক‌রে বঞ্চিতদের স্থান ক‌রে দেব।’ তবে জানতে চাইলে আজ শনিবার দুপুরে গোলাম রাব্বানী বলেন, যে ১৬ জনের নাম সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা বলেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ৭ জন ইতিমধ্যে দালিলিক অকাট্য প্রমাণ দিয়েছেন যে তাঁদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা। বাকিরাও বলছেন, তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা এবং তাদের কাছে তার প্রমাণ আছে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তাঁরা কথা বলেছেন। আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের সময় নিতে বলেছেন যেন ‘নিরপরাধ’ কারও প্রতি ‘অবিচার’ না হয়।

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী এখনো কেউ আমাদের কাছে আনুষ্ঠানিক লিখিত অভিযোগ দেয়নি। যাঁরা অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছেন; আইনের ছাত্র হিসেবে বলি—অভিযোগ যিনি করেন, অভিযোগকে সত্য প্রমাণ করার দায়িত্বটা তাঁরই। কিন্তু এটি কেউ করেনি।’

তবে পদবঞ্চিত ও কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়া বিক্ষুব্ধ অংশের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রলীগের বিগত কমিটির প্রচার সম্পাদক সাঈফ বাবু বলেন, ‘অভিযুক্তদের কাছে প্রমাণ থাকলে তা তাঁরা প্রকাশ করুক। সন্ধ্যায় আমরা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের কাছে যাব। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলব। ২৪ ঘণ্টা সময় নিয়ে ৪৮ ঘণ্টা পরও কেন তাঁরা পদক্ষেপ নিচ্ছে না, আমরা জানতে চাইব।’

ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি প্রকাশের প্রায় ১০ মাস পর গত সোমবার ঘোষণা করা হয় সংগঠনের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। ওই দিন সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে সংগঠনের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা তাদের ওপর হামলা চালান। এতে কয়েকজন নারী নেত্রীসহ ১০-১২ জন আহত হন।

মধুর ক্যানটিনের সেই ঘটনা তদন্তে মঙ্গলবার তিন সদস্যের কমিটি করে ছাত্রলীগ। কমিটিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। সেই সময়সীমা গত বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। তবে এখনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি কমিটি। আজ শনিবার তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দেওয়ার কথা আছে।

তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মধুর ক্যানটিনের মঙ্গলবারের ঘটনায় পাঁচজনকে বহিষ্কারের সুপারিশ করে প্রতিবেদন প্রায় চূড়ান্ত করেছেন তাঁরা।

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর দাবি, ঘটনার ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা না পাওয়ায় কমিটির প্রতিবেদন দিতে দেরি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটির সদস্যরা আমাদের জানিয়েছেন, অভিযোগকারীদের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা তাঁরা পাচ্ছেন না। সহযোগিতা না পাওয়ায় তদন্তে দেরি হয়েছে। অভিযোগকারীরা উল্টো বলছেন, তদন্ত কমিটির ওপর তাদের আস্থা নেই। তবে তাদের সুর এখন নরম, আগের মতো হামলার অভিযোগ তাঁরা করছেন না। তবু ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য নিয়ে আমরা কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলেছি। আজকে তাঁরা প্রতিবেদন জমা দেবে।’

বিক্ষুব্ধ অংশের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রলীগের বিগত কমিটির প্রচার সম্পাদক সাঈফ বাবু অবশ্য বলছেন, তদন্ত কমিটি তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগই করেনি। তিনি বলেন, ‘এগুলো প্রহসনমূলক কথা-বার্তা। যেখানে তদন্ত কমিটি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগই করেনি, সেখানে তাদের আমরা কীভাবে সাহায্য করব?’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002528190612793