২৫ কিলোর পিঠে ১২ কিলো জ্ঞান

নিজস্ব প্রতিবেদক |

…প্লে, নার্সারি, কেজি ওয়ান, কেজি টু, ক্লাস ওয়ান অতঃপর এখন ছেলেটা ক্লাস টু-এ পড়ে। তার ওজন হয়েছে ২৫ কিলো।

সকালে উঠে হাইতোলা মুখে ব্রাশ করতে করতে স্কুল ড্রেস পরে স্কুলের ব্যাগটা যখন পিঠে নেয়, সেটার ওজন ১২ কিলো। মোট ১৪টি বই। এর মধ্যে প্রতিদিনের জন্য ৮টা , আরো ৮টি খাতা, রাফ খাতা, পেন্সিল বক্স, রং পেন্সিল বক্স, টিফিন বক্স, পানির বোতল, স্ক্র্যাব বুক, স্কুল ডায়েরি, সিজার আরো কত কী মিলিয়ে সাত সকালে ওর ছোট নরম পিঠে লেখাপড়ার বিরাট সভ্যতা চাপিয়ে দিয়ে হিমালয় সমান প্রত্যাশায় গন্তব্যে পাঠাই। গন্তব্যটা ঠিক ছেলের না অভিভাবকের সেটাও ঠিক করে বলতে পারি না। স্কুলগেট অবধি ওই ব্যাগখানা টানতে টানতে মনে হয়, আহা! ওরা এই বয়সে কত কী শিখছে!

ছেলেটা আবার ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে। বাংলা মাধ্যেমের হাতেগোনা বই কতক দিয়ে বিশ্বের অজানা দুনিয়ার কতটুকুই বা জানবে। এই ভাবতে ভাবতে যখন ছেলে আমার ‘হোয়াটস আপ মাম্মি, ইটস পেইন’ বলে ব্যাগখানা নিজের কাঁধে তুলে স্কুল গেট পেরিয়ে যেতে থাকে, আমার আত্মাভিমান ভবিষ্যতের হিমালয়সমান প্রত্যাশাকে কোথায় যেন ঘা মেরে বলে, আর কত! কতটা পথ পেরোলে তব, জুড়োবে তোমার মন! এ মন সহজে জুরায় না। স্কুল থেকে ফিরে এসে দম দেয়া ঘড়ির তালে তালে স্নান-আহার সেরে কিছু সময় বাদেই টিউটর আসেন বাড়িতে পড়াতে। কিংবা বাচ্চা যায় টিউশনি পড়তে।

তারপরে কোচিং শেষে ঘরে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে পেরিয়ে যায়। পথের যানজট প্রতিদিনের সময় থেকে বাড়তি আরো ২/৩ ঘণ্টা কেড়ে নেয়। মাঝে মাঝে বাচ্চাটি যানজটের সময়টুকুই বিশ্রাম ভেবে গা এলিয়ে দেয়। রাস্তার ঝাঁকুনি, গাড়ির হুইসেল, ট্রাফিক মানা না মানার লাল বাতি, নীল বাতি, শব্দ দূষন সবকিছুই ওর ঘুম জগতের অংশে মিশে যায়।

রাতে স্কুলের, টিউশনির, কোচিং এর পড়া তৈরি করতে ব্যস্ততা। প্রতিমাসে প্রতি বিষয়ের সিটি (ক্লাস টেস্ট) পরীক্ষা, মা-বাবা আর স্বজনের প্রত্যাশামাফিক প্রতিটি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ + পাবার তাড়া শিশুটির শৈশব কেড়ে নিয়ে কবে যে প্রতিযোগিতার দৌড়ে একজন প্রতিযোগী করে তোলে তা আর কারো জানা হয় না। এ যেন রেসের মাঠে ছেড়ে দেওয়া বাজির ঘোড়া। ওরা ছুটে চলে আমরা চিৎকার করে বাহবা দেই আরো..আরো.. জোরে। থামলে তো হারলে! হার মানে পরাজয়।

পঞ্চম শ্রেণি, অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, সম্মান, স্নাতকোত্তর পরীক্ষার কোথও এ+ পেলে না তো সেখানেই ভবিষ্যৎ অন্ধকার। সুতরাং ভবিষ্যত গড়তে এই ক্ষুদে ভবিষ্যতের কাঁধে, পিঠে আর মনোজগতে বর্তমানের সমস্ত চাহিদা, প্রত্যাশা আর প্রতিযোগিতার বোঝা চাপিয়ে আবারো চিৎকার করে বলি….জোরে..আরো ..জোরে..’থেমে গেলে তো হেরে গেলে’।

লেখক : নিবেদিতা রায়, সহকারী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

 

সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033791065216064