২৫ নম্বর পেলেই শেকৃবিতে পোষ্য কোটায় ভর্তি নিশ্চিত!

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সাতটি সরকারি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বারের মতো গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে। কিন্তু ভর্তির ক্ষেত্রে পোষ্য কোটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। পোষ্য কোটায় ৩ শতাংশ ভর্তি করছে তারা। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য বাড়তি এই সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। পোষ্য কোটায় ভর্তি পরীক্ষায় পাশের নম্বরও কমানো হয়েছে। যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ১০০ নম্বরের মধ্যে ৪০ নম্বরে পাশ ধরা হয়। সেখানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত কারো সন্তান হলেই ২৫ নম্বর পেলেই চলে। বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন নিজামুল হক। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায় হিসাব করে দেখা গেছে, যেখানে একজন সাধারণ শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় ৭০ নম্বর পেয়েও নিশ্চিত হতে পারে না সে ভর্তির সুযোগ পাবে কি না, সেখানে প্রতিষ্ঠানের কর্মরতদের সন্তানদের ২৫ নম্বর পেলেই ভর্তি নিশ্চিত হয়ে যায়। নিজেদের সন্তানদের এভাবে অযাচিত সুবিধা দেওয়া নিয়ে তীব্র আপত্তিও উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এর বিরোধিতা করছে। এই পদ্ধতির সমালোচনা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকও।

আরিফ নামে এক শিক্ষার্থী জানান, এটা অনুচিত। আমরা মনে করি, অন্যান্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পোষ্য কোটা বাতিল হবে। জানা গেছে, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার চারটি অনুষদে সাধারণ আসনে ৬২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করবে। ২০ জন ভর্তি করা হবে পোষ্য কোটায়। পোষ্য কোটার জন্য পৃথক সার্কুলার হয়। নেওয়া হয় পৃথক ভর্তি পরীক্ষা। যাতে খুব কমসংখ্যকই অংশ নেয়। ফলে প্রায় সবার ভর্তিই নিশ্চিত হয়ে যায়।

বিশ্ববিদ্যালয় একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটায় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম এক শীর্ষ কর্মকর্তার সন্তান ফেল করে। তখন পাশ নম্বর ছিল ৪০। পরে ঐ শীর্ষ কর্তার সন্তানকে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পোষ্যদের পাশ নম্বর ৪০ থেকে কমিয়ে ২৫ নম্বর নির্ধারণ করে। ফলে এখন সন্তানদের ভর্তির অবারিত সুযোগ তৈরি হয়েছে।

শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরতদের সন্তান ভর্তি হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নানা ধরনের সুবিধা পান। পড়াশোনা শেষে চাকরিও মেলে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অযৌক্তিক আবদার মানেন উপাচার্যও। ফলে এখন বিশ্ববিদ্যালয়টি পারিবারিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হচ্ছে। বাবার চাকরির সুবাদে চাকরি পাচ্ছেন তার ছেলে ও মেয়ে। স্বামী চাকরি করেন, এই সুযোগে চাকরি পেয়ে যাচ্ছেন স্ত্রীও।

একাধিক সিনিয়র অধ্যাপক এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, কোটার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করে সন্তানের জন্য চাকরিও নিশ্চিত করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তারা। তবে এ ক্ষেত্রে কর্মচারীদের সন্তানেরা পিছিয়ে আছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত পাঁচ জন সিনিয়র অধ্যাপক এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে পোষ্য কোটা বাতিল প্রয়োজন। কারণ কম নম্বর পেয়ে পোষ্য কোটায় ভর্তি হয়ে তারা আবার একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও হন। কেউ হন কর্মকর্তাও। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যতের জন্য হুকমি স্বরূপ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. শহীদুর রশীদ ভুঁইয়া বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, কোনো পোষ্য কোটার প্রয়োজন নেই। কোটার বিষয়টি আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের দাবির মুখেই এটা করা হয়েছে।’

পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়েই পোষ্য কোটা নেই

সাত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন ১ হাজার ১১৬ জন। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটায় শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার মো. ছাইফুল ইসলাম জানান, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু মুক্তিযোদ্ধা এবং উপজাতি/আদিবাসী কোটা রয়েছে।

পোষ্য কোটা নেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় ও খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও। অবশ্য কোটার ছড়াছড়ি রয়েছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। পোষ্য কোটা থাকলেও এ সংখ্যা ১ শতাংশের সামান্য বেশি। এছাড়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সাত ধরনের কোটা রয়েছে। এর মধ্যে প্রবাসীর সন্তানদের জন্য প্রায় ৩ শতাংশ কোটা রয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0091598033905029