কর্মজীবনের ২৫ বছরের শিক্ষকতায় সরকার নির্ধারিত’র বাইরে একদিনও নেননি ছুটি মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন। কাটাননি অসুস্থতাজনিত ছুটিও। মাদরাসার এই শিক্ষক পুরো চাকরিজীবন কাটিয়েছেন ‘আরবি’ পড়িয়ে। আর কদিন বাদেই যাবেন অবসরে। রোদ কিংবা ঝড়-বৃষ্টি, যাই হোক না কেন, মাদ্রাসায় আসেননি এমন রেকর্ড নেই তার। জীবনের পুরোটা সময়ই কাটিয়েছেন প্রিয় শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে।
জয়নাল আবেদীন মুরাদনগর উপজেলার ধামঘর গ্রামের মৃত ওয়াছি উদ্দিন খাঁনের ছেলে ও শুশুন্ডা ইসলামিয়া আলিম মাদরাসার ‘আরবি’ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।
মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন জানান, তিনি ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন মুরাদনগর উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নের শুশুন্ডা ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসায়। তবে চাকরিতে বেতনভুক্ত হন ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে। পরে ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ চলে যাওয়ায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষর দায়িত্ব পান তিনি। তখন মনে মনে সিদ্ধান্ত নেন কর্মজীবনে কখনো ফাঁকি দেবেন না, এই ব্রত ছিল তার। সে অনুযায়ী কাজ করতে করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই হয়ে ওঠে তার জীবনের ধ্যান-জ্ঞান। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষর দায়িত্বে ছিলেন ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। এরই মধ্যে মাদ্রাসায় তিনি দাখিল বিভাগ (এসএসসি সমমান) চালু করতে সক্ষম হন।
মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন বলেন, মূলত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষর দায়িত্ব পালন করার সময় প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এতটাই মনোযোগী হয়েছিলাম যে, ছুটি কী জিনিস সেটা ভুলেই গিয়েছিলাম। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষর দায়িত্ব ছেড়েছি ঠিকই, প্রতিষ্ঠানের প্রতি যে ভালোবাসা তৈরি হয়েছে, তা আর ছাড়তে পারিনি। তাই সে ভালোবাসার টানে মাঝেমধ্যে রাতে শরীরটা অসুস্থ হলেও সকালে মাদ্রাসায় যাওয়ার কথা ভাবতেই নিজেকে মানসিকভাবে সুস্থ মনে হতো। এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি এখন এতটাই মায়ায় পড়েছি, চাইলেই এখানে না এসে থাকতে পারি না।
শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা গর্ববোধ করি স্যারের কাছ থেকে কিছুটা হলেও শিখতে পেরেছি। স্যার শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি সবসময় আমাদের মাদ্রাসা বন্ধ না করতে উৎসাহিত করেন।
শুশু- ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, জয়নাল আবেদীন সাহেব চাইলেই অন্য শিক্ষকদের মতো প্রতিবছর ২১ দিন করে ছুটি কাটাতে পারতেন। অথচ দীর্ঘ ২৫ বছরে তার পাওনা ৫২৫ দিন ছুটি নেননি তিনি। তার কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। তিনি শিক্ষক সমাজের গর্ব।
২০২৯ খ্রিষ্টাব্দের চাকরি জীবনের ইতি টানবেন শিক্ষার্থীদের প্রিয় জয়নাল আবেদীন স্যার। এতদিন যে মাদ্রাসার সঙ্গে আত্মার সম্পর্ক, অবসরের পরদিন থেকে সেই মাদ্রাসার করিডরে আর হাঁটবেন না তিনি। এ কথা মনে আসতেই চোখ ছল ছল করে ওঠে তার। জানালেন, অবসরে গিয়েও বসে থাকবেন না তিনি।