২৫ বছর পর বাড়ি ফিরলেন ছোট ভাই, বড় ভাই এখনো নিখোঁজ

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি |

বাবা-মার বিচ্ছেদের পর মা বানেছা বেগমের সঙ্গে ঢাকা পাড়ি জমান দুই ভাই মাইদুল ইসলাম ও মতিয়ার রহমান। মা অন্যত্র বিয়ের পিঁড়িতে বসাতে সেই ঘরে জায়গা হয় না পাঁচ বছর বয়সী মাইদুল ও দশ বছর বয়সী মতিয়ারের। অন্যের বাড়িতে জায়গা হয় তাদের, সেখানেও বিধি-বাম। চুরির অপবাদ দিয়ে সেখান থেকেও তাড়িয়ে দেয়া হয় তাদের। এরপর বড় ভাই মাকে খুঁজতে বের হয়ে তিনিও নিখোঁজ হয়ে যান। সেই থেকে নিরুদ্দেশ দুই ভাই। দুই যুগেরও বেশি সময় পেরিয়ে যায়। পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজাখোঁজির পরও মেলেনি সন্ধান।

এবার দীর্ঘ ২৫ বছর ছোট ভাই মাইদুল ইসলাম বাড়ি ফিরেছেন। মাইদুল ফিরলেও এখনো নিরুদ্দেশ বড় ভাই মতিয়ার রহমান। এতো বছর পর ছোট ভাই মাইদুল ইসলামের আসার খবর পেয়ে বাড়িতে ভিড় জমাতে শুরু করছেন উৎসুক লোকজন। মাইদুল কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের গোপালপুর এলাকার উত্তর সরকারটারি গ্রামের মো. আব্দুস সামাদের ছেলে।

জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপন ঠিকানার সহযোগিতায় মাইদুল ইসলামকে খুঁজে পায় পরিবার। তবে বড় ভাই মো. মতিয়ার রহমানের সন্ধান এখনো মেলেনি। মাইদুল ইসলাম ও মতিয়ার রহমানের বাবা আব্দুস সামাদের আশা নিশ্চয়ই হয়তো একদিন ছোট ছেলের মতো বড় ছেলেকেও খুঁজে পাবেন।

আব্দুস সামাদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, দুই ছেলেকে হারিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ওর মায়ের কাছে লোক পাঠিয়েছিলাম। একবার বলতেন, ছেলে দুটো হারিয়ে গেছে। আবার কখনো বলতেন মারা গেছে। আমি প্রতিদিন নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি। আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন। ছোট ছেলে মাইদুল, বউ মা মাহমুদা ও নাতিদের খুঁজে পেয়েছি। আল্লাহ পাক যদি বড় ছেলে মতিয়ারকে ফিরিয়ে দেন, আমার আর কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই।

  

এদিকে মাইদুল ইসলামের চাচা মো. বদিউজ্জামাল দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, মাইদুল ও মতিয়ার আমার ভাতিজা। ওরা দুজনে ১০-১৫ দিনের ব্যবধানে প্রায় ২৫ বছর আগে হারিয়ে যায়। অনেক খোঁজা-খুঁজি করে আমরা তাদের আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। আল্লাহ পাকের অশেষ মেহেরবান মাইদুলকে ফিরে পেলাম। আশা করি কোন একদিন মতিয়ারকেও খুঁজে পাবো।

দুই যুগ পর বাড়ি ফেরা মাইদুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন,মা আমাদের দুই ভাইকে অন্যের বাসায় রেখেছিলেন। সেখানে চুরির অপবাদ দিয়ে বাড়ির মালিক আমাদের দুই ভাইকে মারপিট অত্যাচার করে বেঁধে রেখেছিলেন। পরে ওই বাড়ির মেয়ে আমাদের ছেড়ে দিয়ে বলেন, তোমরা দুজন চলে যাও। পরে আমি ভাইসহ ওই বাড়ি থেকে বের হয়ে মাকে অনেক খুঁজেছি। মা কোথায় থাকতেন ঠিক মনে পড়ছিলো না। ভাই আমাকে ছেড়ে মাকে খুঁজতে গিয়েছেন, তাকেও হারিয়ে ফেলি।

তিনি আরো বলেন, আমার বড় আশা ছিলো বাবা-মাকে ফিরে পাওয়ার সঙ্গে বড় ভাইকেও দেখতে পাবো। বড় ভাইকে জড়িয়ে ধরবো। কিন্তু বাবা-মাকে পেলাম ভাই কোথায় আছে জানি না। বাবা মাকে ফিরে পেয়ে কি শান্তি পেয়েছি তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।

নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউছার আহাম্মেদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, দীর্ঘ ২৫ বছর সন্তোষপুর ইউনিয়নে আব্দুস সামাদ নামে এক বাবার দুই সন্তান হারিয়ে গেছে।  পর এক ছেলে বাড়িতে ফিরে এসেছে। মাইদুল ইসলাম যদি চায় তাহলে সামাজিক বেষ্টনীর আওতায় আনাসহ পরিবারটিকে সহযোগিতা করা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কমপ্লেইন বক্স বন্ধ - dainik shiksha গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কমপ্লেইন বক্স বন্ধ পদত্যাগে বাধ্য করা অধ্যক্ষকে ফুলেল শুভেচ্ছায় ফেরালেন শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha পদত্যাগে বাধ্য করা অধ্যক্ষকে ফুলেল শুভেচ্ছায় ফেরালেন শিক্ষার্থীরা শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম দামে বিটিসিএলের ইন্টারনেট দেয়া হবে: তথ্য উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম দামে বিটিসিএলের ইন্টারনেট দেয়া হবে: তথ্য উপদেষ্টা শিক্ষকের ছোড়া স্কেলের আঘাতে শিক্ষার্থীর চোখ হারানোর অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষকের ছোড়া স্কেলের আঘাতে শিক্ষার্থীর চোখ হারানোর অভিযোগ দুই শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবিতে বাউবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ - dainik shiksha দুই শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবিতে বাউবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ হলগুলোকে সন্ত্রাসমুক্ত করে ছাড়বো : রাবি উপাচার্য - dainik shiksha হলগুলোকে সন্ত্রাসমুক্ত করে ছাড়বো : রাবি উপাচার্য কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050051212310791