দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক: ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টনে সমাবেশ করে বিএনপি। সেদিনের সংঘর্ষের পর থেকে গত ২৪ দিনে ১৮৫টি যানবাহন ও ১৫টি স্থাপনায় আগুন দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সোমবার (২০ নভেম্বর) পর্যন্ত এই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
ফায়ার সার্ভিস বলছে বেশি যানবাহন পুড়েছে ঢাকা শহরে। আর জেলা হিসেবে বেশি আগুন দেওয়া হয়েছে গাজীপুরে। এদিকে মঙ্গলবার ফায়ার সার্ভিসের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সারা দেশে ১৯৭টি (যানবাহন ও স্থাপনাসহ) অগ্নি নাশকতার খবর পেয়েছে তারা।
এর মধ্যে ২৮ অক্টোবর ২৯টি, ২৯ অক্টোবর ১৯টি, ৩১ অক্টোবর ১২টি, ১ নভেম্বর ১৪টি, ২ নভেম্বর সাতটি, ৪ নভেম্বর ছয়টি, ৫ নভেম্বর ১৩টি, ৬ নভেম্বর ১৩টি, ৭ নভেম্বর দুইটি, ৮ নভেম্বর নয়টি, ৯ নভেম্বর সাতটি, ১০ নভেম্বর দুইটি, ১১ নভেম্বর সাতটি, ১২ নভেম্বর সাতটি, ১৩ নভেম্বর আটটি, ১৪ নভেম্বর চারটি, ১৫ নভেম্বর ৬টি, ১৬ নভেম্বর সাতটি, ১৮ নভেম্বর ছয়টি, ১৯ নভেম্বর ১৩টি, ২০ নভেম্বর ছয়টি আগুন দেয়া হয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে আগে ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে সমাবেশের ঘোষণা দেয় বিএনপি। একইদিন জামায়াতে ইসলামী সমাবেশের ঘোষণা দেয় মতিঝিলে। আর বায়তুল মোকাররম এলাকায় ‘শান্তি ও উন্নয়ন’ সমাবেশের ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ।
তিন দলের এই সমাবেশ ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই উৎকণ্ঠা ছিল জনমনে। পুলিশের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক অনুমতি না পেলেও সেদিন আরামবাগে সমাবেশ করে জামায়াত। পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের পর সেদিন বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালানো হয়। পরদিন ২৯ অক্টোবর থেকে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি দেয় বিএনপি। দফায় দফায় বিএনপির হরতাল-অবরোধ চলাকালে নাশকতার আগুনে পুড়েছে শতাধিক যানবাহন ও স্থাপনা। গত ২৪ দিনে যেসব যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে বাসই ১১৮টি।
এছাড়া ২৬টি ট্রাক, ১৩টি কভার্ড ভ্যান, আটটি মোটরসাইকেল, দুটি প্রাইভেটকার, তিনটি মাইক্রোবাস, তিনটি পিকআপ, তিনটি অটোরিকশা, দুটি ট্রেন, একটি নছিমন, তিনটি লেগুনা, ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি, পুলিশের একটি গাড়ি, একটি অ্যাম্বুলেন্স, বিএনপির পাঁচটি অফিস, আওয়ামী লীগের একটি অফিস, একটি পুলিশ বক্স, একটি কাউন্সিলর অফিস, দুটি বিদ্যুৎ অফিস, একটি বাস কাউন্টার, দুটি বাণিজ্যিক শোরুমসহ আরও দুটি স্থাপনা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঢাকা নগরে ৯৫টি, ঢাকা বিভাগে ৩৭টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ২২টি, রাজশাহী বিভাগে ২৪টি, বরিশাল বিভাগে সাতটি, রংপুর বিভাগে সাতটি, খুলনা বিভাগে দুটি, ময়মনসিংহ বিভাগে দুটি, সিলেট বিভাগে একটি আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
এলাকাভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ঢাকার মিরপুর এলাকায় আগুন দেওয়ার ঘটনা সবচেয়ে বেশি। মিরপুরে ১৭টি, গুলিস্তানে নয়টি, নয়াপল্টন-কাকরাইল এলাকায় সাতটি, খিলগাঁও-মুগদা এলাকায় সাতটি, পোস্তাগোলা-যাত্রাবাড়ী এলাকায় সাতটি, মতিঝিল-আরামবাগ এলাকায় পাঁচটি, মোহাম্মদপুর চারটি, বারিধারায় চারটি আগুনের ঘটনা ঘটে।
জেলা হিসেবে গাজীপুরে ১৬টি, চট্টগ্রামে ১৪টি, বগুড়া ১৩টি, নারায়ণগঞ্জ ছয়টি, মানিকগঞ্জে চারটি, ফরিদপুরে চারটি, লালমনিরহাট চারটি, নাটোরে চারটি আগুনের খবর পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসে ৩৪১টি ইউনিট ও ১ হাজার ৮৮৮ জন কর্মী কাজ করেছে।