কলেজে জাগুক প্রাণ২৮ বছর ধরে ছাত্র সংসদ নেই কারমাইকেল কলেজে

মেরিনা লাভলী |

রংপুর কারমাইকেল কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচন নেই ২৮ বছর। এতে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটছে না ছাত্রদের মাঝে। শিক্ষা নিয়ে সাধারণ ছাত্রদের অধিকার বাস্তবায়নে কোনো সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে জোরালো আওয়াজ তুলতে পারছে না ছাত্ররা। তবে কলেজ প্রশাসন দায়ী করেছে রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের জটিলতাকেই। এদিকে প্রতি বছর ভর্তিসহ বিভিন্ন বিভাগের ফরম পূরণে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ছাত্র সংসদ বাবদ ফি। 

কলেজ সূত্রে জানা যায়, উত্তরের অক্সফোর্ড খ্যাত কারমাইকেল কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক, সম্মান, পাস কোর্স ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ২৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যয়ন করে। ছাত্র নেতৃত্ব বিকাশে ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৯৯০ সালে শেষবারের মতো ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়। পরবর্তীকালে ছাত্র সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর আর নির্বাচন হয়নি।

কী কারণে নির্বাচন দেওয়া সম্ভব হয়নি এমন তথ্য অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক দলের হস্তক্ষেপ। যখন যে দলীয় সরকার ক্ষমতায় এসেছে, সেই দলীয় শিক্ষার্থীদের সংগঠন ও স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাদের হস্তক্ষেপের কারণে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়নি। ছাত্র সংসদের ক্ষমতা অন্য রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের হাতে চলে যাবে- এমন আশঙ্কায় ছাত্র সংগঠনগুলো নির্বাচনের বিরোধিতা করে এসেছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন  না হওয়ার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দখলদারিত্বের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার পরিবেশও বিঘ্নিত হচ্ছে বলে একাধিক ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন। 

কলেজের অনার্স পড়ূয়া ছাত্র আল-আমিন হোসেন বলেন, 'ছাত্র সংসদের মূল উদ্দেশ্য হলো নেতৃত্বের বিকাশ। ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা বলা। কিন্তু এখন ছাত্রদের অধিকার নিয়ে ক্যাম্পাসে কথা বলা যায় না। কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা সাধারণ ছাত্রদের ওপর চড়াও হয়, মারধর করে। এতে শিক্ষিত নেতা তৈরি হচ্ছে না। আর ছাত্রদের অধিকার নিয়েও কথা বলার কেউ থাকছে না। আমরা চাই দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিয়ে ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং কলেজে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় রাখার ব্যবস্থা করা হোক।' 

কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি সাইদুজ্জামান সিজার বলেন, 'অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ, শিক্ষক পরিষদকে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য চাপ দিচ্ছি। অধ্যক্ষ আমাদের জানিয়েছেন, ডাকসু নির্বাচন শেষ হলে কারমাইকেল কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে কলেজ প্রশাসন।' 

কারমাইকেল কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মো. রবিউল ইসলাম বলেন, 'একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে অধ্যক্ষ জানিয়েছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না কলেজ কর্তৃপক্ষের।' 

১৯৯০ সালের শেষ ছাত্র সংসদের জিএস মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম মিজু বলেন, 'কলেজ কর্তৃপক্ষকে ছাত্র সমাজের চাহিদার গুরুত্ব দিতে হবে। ছাত্র সংসদ না থাকার কারণে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে কলেজ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় আমরা হতাশ।' 

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনি বলেন, 'শিক্ষাঙ্গন থেকে জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দেবে- এমন রাজনৈতিক নেতা উঠে আসে ছাত্র সংসদ থেকেই। ছাত্র রাজনীতির সূতিকাগার হিসেবে পরিচিতি কারমাইকেল কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া জরুরি।' 

কারমাইকেল কলেজ সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক অসীমা রায় লিপি বলেন, '২৮ বছর ধরে এখানে ছাত্র সংসদ নেই। আমাদের দাবি, দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়া হোক।' 

বাসদ মার্ক্সবাদী জেলা নেতা পলাশ কান্তি নাগ বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে আমরা দাবি করে আসছি ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য কিন্তু এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না কলেজ কর্তৃপক্ষ, যা খুব দুঃখজনক।'

কারমাইকেল কলেজ জাসদ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সাব্বির আহমেদ বলেন, 'ছাত্র সংসদ যখন ছিল, তখন কলেজে একটি গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত ছিল। এরপর কোনো রাজনৈতিক চর্চা না থাকায় যোগ্য তরুণ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি।'

এ ব্যাপারে কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষ ড. শেখ আনোয়ার হোসেন বলেন, 'ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত লিখিত কোনো আবেদন আমার কাছে আসেনি। আবেদন পেলে শিক্ষক পরিষদ নেতা, প্রত্যেক সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নিয়ে যে উপদেষ্টা কমিটি রয়েছে, তাদের নিয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা করা হবে।' 

এদিকে দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হলেও ছাত্র সংসদের জন্য প্রতি বছরই ভর্তি এবং বিভিন্ন বিভাগের ফরম পূরণের সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২৫ টাকা করে ফি নেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়। এ পর্যন্ত ছাত্র সংসদ ফান্ডে ২ কোটি টাকারও বেশি তহবিল জমা পড়েছে বলে কলেজের একটি সূত্র জানায়। 

সুত্র: সমকাল


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034670829772949