নতুন এমপিওভুক্ত হওয়া মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক স্কুলগুলোর শিক্ষক কর্মচারীদের নিয়োগের কাগজপত্র আবেদন উপজেলা কমিটির মাধ্যমে সরেজমিনে যাচাই-বাছাই হবে। উপজেলা কমিটির প্রত্যয়ন নিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওর আবেদন অনলাইনে করতে হবে। একইভাবে নতুন এমপিওভুক্ত বা স্তর পরিবর্তন হওয়া উচ্চমাধ্যমিক ও ডিগ্রি কলেজগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগের কাগজ জেলা কমিটি যাচাই-বাছাই করবে। জেলা কমিটির প্রত্যয়ন নিয়ে অনলাইনে শিক্ষক কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির আবেদন করতে হবে।
ইতোমধ্যে নতুন এমপিও কোড পেয়েছে ২ হাজার ৫১টি স্কুল-কলেজ। নতুন এমপিওভুক্তি ও এমপিওর স্তর পরিবর্তনের জন্য নির্বাচিত হওয়া নিম্নমাধ্যমিক স্কুল, মাধ্যমিক স্কুল, স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উচ্চমাধ্যমিক কলেজ ও স্নাতক কলেজগুলোকে এমপিও কোড দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।
বৃহস্পতিবার এমপিওর কোড প্রকাশ করা হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো এ কোড ব্যবহার করে যোগ্য শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির আবেদন করতে পারবেন। একইসঙ্গে জারি করা আদেশে নতুন এমপিওভুক্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো যোগ্য শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির আবেদন যেভাবে নিষ্পত্তি করা হবে তা জানিয়েছে অধিদপ্তর।
গত জুলাই মাসে এ প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন এমপিওভুক্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছিলো। নির্বাচিত ২ হাজার ৫১টি স্কুল ও কলেজের মধ্যে ৬৬৬টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১ হাজার ১২২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৩৬টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১০৯টি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ও ১৮টি ডিগ্রি কলেজ রয়েছে।
নতুন এমপিওভুক্ত স্কুলের এমপিওর আবেদন যেভাবে :
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, নতুন এমপিওভুক্ত নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও এমপিও স্তর পরিবর্তন হওয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগ সংক্রান্ত সব কাগজপত্রসহ প্রতিষ্ঠানের সব কাগজপত্র উপজেলা কমিটি সরেজমিনে যাচাই-বাছাই করবে। যাচাই-বাছাই শেষে উপজেলা কমিটি এমপিওভুক্তির যোগ্য ও অযোগ্য উল্লেখপূর্বক মন্তব্যসহ একটি প্রত্যয়নপত্র সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে পাঠাবেন। প্রতিষ্ঠান প্রধান ওই প্রত্যয়ন পত্রসহ যোগ্য শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিওভুক্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করবেন। জেলা ও অঞ্চল পর্যায়ের কমিটি অনলাইনে পাওয়া আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করে মন্তব্য-সুপারিশসহ সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের উপপরিচালক বরাবর পাঠাবেন। অনলাইনে পাওয়া আবেদনগুলো উপপরিচালকের কার্যালয় বিধি মোতাবেক নিস্পত্তি করবে।
নতুন এমপিওভুক্ত কলেজের এমপিওর আবেদন যেভাবে :
নতুন এমপিওভুক্ত উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ, স্নাতক (পাস) কলেজ ও এমপিওস্তর পরিবর্তন হওয়া প্রতিষ্ঠানের উচ্চ মাধ্যমিক এবং ডিগ্রি স্তরের শিক্ষক-কর্মচারীরদের নিয়োগ সংক্রান্ত সব কাগজপত্রসহ প্রতিষ্ঠানের সব কাগজপত্র জেলা কমিটি সরেজমিনে যাচাই-বাছাই করবে। যাচাই-বাছাই শেষে জেলা কমিটি এমপিওভুক্তির যোগ্য ও অযোগ্য উল্লেখ করে মন্তব্যসহ একটি প্রত্যয়নপত্র সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে পাঠাবেন। প্রতিষ্ঠান প্রধান ওই প্রত্যয়ন পত্রসহ যোগ্য শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিওভুক্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করবেন। অঞ্চল পর্যায়ের কমিটি অনলাইনে পাওয়া আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করে মন্তব্য-সুপারিশসহ সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের পরিচালকে পাঠাবেন। অনলাইনে পাওয়া আবেদনগুলো পরিচালকের কার্যালয় বিধি মোতাবেক নিষ্পত্তি করবে।
যাচাই-বাছাই যেভাবে :
নতুন এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের পাঠদান-একাডেমিক স্বীকৃতি, অন্যান্য কাগজপত্র ও শিক্ষক কর্মচারীদের সনদ জেলা ও উপজেলার কমিটির মাধ্যমে সরেজমিনে যাচাই করা হবে। জেলা-উপজেলা ও থানা কমিটি শিক্ষকদের সনদ, মার্কশিট, নিবন্ধন-সুপারিশ ও নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্রের মূল কপিসহ প্রতিষ্ঠানটি সরেজমিনে যাচাই করবে। যাচাই শেষে তথ্য সঠিক হলে প্রতিষ্ঠান প্রধান অনলাইনে আবেদন করবেন। আর জেলা ও অঞ্চল পর্যায়ের কমিটি অনলাইনে আবেদনের স্তর যাচাই করবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমিক স্তরের তথ্য উপজেলা বা থানা কমিটি ও জেলা কমিটির মাধ্যমে যাচাই করা হবে। আর উচ্চমাধ্যমিক ও ডিগ্রি স্তর ও শিক্ষক-কর্মচারীদের কাগজপত্র যাচাই হবে জেলা পর্যায়ের অপর একটি কমিটির মাধ্যমে।
জানা গেছে, আগে নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিও কোড পাওয়ার পর মাধ্যমিক স্তর ও শিক্ষকদের কাগজপত্র প্রাথমিকভাবে উপজেলা ও থানা কমিটির মাধ্যমে যাচাই করা হতো। আর উচ্চমাধ্যমিক ও ডিগ্রি স্তর ও শিক্ষকদের নিয়োগের কাগজপত্র যাচাই হতো অঞ্চলের কমিটি মাধ্যমে। জেলা ও অঞ্চলের কমিটি অনলাইন এমপিও আবেদনের স্তর যাচাই করতো। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে জারি হওয়া স্কুল-কলেজের এমপিও নীতিমালায় বিষয়টি উল্লেখ ছিলো। কিন্তু গত ৩০ অক্টোবর নীতিমালার সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদটি সংশোধন করে জেলা-উপজেলা ও থানা কমিটিকে প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক-কর্মচারীদের তথ্য যাচাইয়ের দায়িত্ব দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আবার জেলা ও অঞ্চল পর্যায়ের কমিটিকে অনলাইনে পাওয়া আবেদনের স্তর যাচাইয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
২০২১ খ্রিষ্টাব্দের এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোর ১৭.২ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে জারি করা পরিপত্রে বলা হয়েছে, নতুন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা স্তর এমপিও কোড পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানের পাঠদান, একাডেমিক স্বীকৃতি, এমপিও কোড পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানের পাঠদান, একাডেমিক স্বীকৃতি, এমপিও কোড ও অন্যান্য কাগজপত্র এবং ব্যক্তি এমপিওর ক্ষেত্রে শিক্ষক-কর্মচারীদের সব পরীক্ষার সনদ-মার্কশিট, এনটিআরসিএর নিবন্ধন, এনটিআরসিএর সুপারিশ ও নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র মূল্য কপিসহ উপজেলা-থানা ও জেলা কমিটি প্রতিষ্ঠানটি সরেজমিনে যাচাই করবেন। যাচাই শেষে সঠিকতা থাকলে প্রতিষ্ঠান প্রধান অনলাইনে আবেদন করবেন। জেলা-অঞ্চল পর্যায়ের কমিটি অনলাইনে পাওয়া আবেদনগুলোর সংশ্লিষ্ট স্তর যাচাই করবেন।
কমিটিতে যারা থাকবেন :
নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাধ্যমিক অংশ ও শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগের কাগজপত্র যাচাইয়ে উপজেলা বা থানা পর্যায়ের কমিটিতে থাকবেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক বা তার প্রতিনিধি (অধিদপ্তর মনোনীত) ও সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা থানার এমপিওভুক্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমিক অংশ ও শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগের কাগজপত্র যাচাইয়ে ও আবেদনের স্তর যাচাইয়ে জেলা পর্যায়ের কমিটিতে থাকবেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বা তার প্রতিনিধি (অধিদপ্তর মনোনীত) এবং জেলা সদরের এমপিওভুক্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (অধিদপ্তর মনোনীত)। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ দুই কমিটিতে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বা প্রতিনিধি মনোনয়নের ক্ষেত্রে উপজেলার প্রতিষ্ঠান অগ্রাধিকার পাবে ও জেলার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সীমিত রাখতে হবে।
নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাধ্যমিক অংশের অনলাইন আবেদনের স্তর যাচাইয়ে অঞ্চল পর্যায়ের কমিটিতে আছেন, উপপরিচালক, অঞ্চলে অবস্থিত জেলা শহরে-বিভাগীয় শহরের সরকারি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক (অধিদপ্তর মনোনীত) ও অঞ্চলে অবস্থিত জেলা শহরের বা বিভাগীয় শহরের এমপিওভুক্ত হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক (অধিদপ্তর মনোনীত)।
এদিকে স্কুল অ্যান্ড কলেজের কলেজ অংশ ও উচ্চমাধ্যমিক কলেজ ও স্নাতক কলেজের কাগজপত্র ও শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগের কাগজ যাচাইয়ে জেলা পর্যায়ের কমিটিতে থাকবেন জেলা শিক্ষা অফিসার, সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বা তার প্রতিনিধি (অধিদপ্তর মনোনীত) এবং এমপিওভুক্ত কলেজের অধ্যক্ষ (সংশ্লিষ্ট জেলার)। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কলেজের জন্য উপজেলা বা জেলা পর্যায়ের কোনো কমিটি থাকায় জেলা পর্যায়ের কলেজের জন্য এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আবেদন যাচাই করে অঞ্চলের কমিটির কাছে সুপারিশ পাঠাবেন।
উচ্চমাধ্যমিক-স্নাতক কলেজ ও শিক্ষকদের জন্য অঞ্চল পর্যায়ের কমিটিতে থাকবেন পরিচালক, জেলা বা বিভাগীয় শহরের সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বা প্রতিনিধি (অধিদপ্তর মনোনীত), জেলা বা বিভাগীয় শহরের এমপিওভুক্ত কলেজের অধ্যক্ষ (অধিদপ্তর মনোনীত)।
মন্ত্রণালয় আরও বলছে, ব্যক্তি এমপিওভুক্তি ক্ষেত্রে দাখিলযোগ্য আবশ্যকীয় সনদ ও রেকর্ডপত্র বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (স্কুল-কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১ এর পরিশিষ্ট ঙ অনুসরণ করতে হবে।
এমপিওভুক্তি কার্যকর জুলাই থেকে :
গত ৬ জুলাই নতুন এমপিওভুক্তির জন্য নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের তালিকাসহ আদেশ জারি করেছিলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি আদেশ জারির তারিখ থেকে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে। সে হিসেবে গত জুলাই মাস থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোর এমপিওভুক্তি কার্যকর হচ্ছে।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয়াদি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১ অনুযায়ী কার্যকর হবে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের যোগ্যতা বা অভিজ্ঞতা নিয়োগকালীন বিধি-বিধান ও সংশ্লিষ্ট পরিপত্র মোতাবেক প্রযোজ্য হবে। শিক্ষক নিবন্ধন চালু হওয়ার আগে বিধিসম্মতভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক ও কর্মচারীরা এমপিওভুক্তির সুযোগ পাবেন। পরবর্তীতে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির জন্য অবশ্যই নিবন্ধন সনদ প্রযোজ্য হবে। এমপিওভুক্তির জন্য বিবেচিত হওয়া প্রতিষ্ঠান নীতিমালা অনুযায়ী কাম্য যোগ্যতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হলে, সে প্রতিষ্ঠানের এমপিও স্থগিত করা হবে। পরবর্তীতে কাম্য যোগ্যতা অর্জন করলে স্থগিত এমপিও অবমুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। যেসব তথ্যের ভিত্তি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে, তার কোনোটি ভুল বা মিথ্যা প্রমাণিত হলে এমপিও বাতিলসহ তথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এমপিও কোড :
দৈনিক শিক্ষাডটকমের পাঠকদের জন্য নতুন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর এমপিও কোড তুলে ধরা হলো।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।