বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এন্ট্রি লেভেলে শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য মাস তিনেক আগে নির্বাচিত প্রায় সাড়ে ৩২ হাজার নিবন্ধিত প্রার্থী এখনো চূড়ান্ত সুপারিশ পাননি। কবে তাদের নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হবে সে বিষয়ে এখনই কিছু বলতে পারছেন না এই নিয়োগের দায়িত্বে থাকা বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যায়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কর্তারা। তারা বলছেন, ওইসব প্রার্থীকে নির্ভুলভাবে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে সনদ যাচাই বাছাই চলছে। পাশাপাশি চলছে পুলিশ ভেরিফিকেশনের ভি রোল ফরম পূরণ। এই ফরম পূরণ ও সনদ যাচাই শেষ হলে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া চলমান রেখে প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশ করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চাওয়া হবে। মন্ত্রণালয়ের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ মিললেই প্রার্থীদের চূড়ান্ত সুপারিশ করে তাদের যোগদানের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
এই দ্রুত চূড়ান্ত সুপারিশ বা যোগাদানের ব্যবস্থা করতে এনটিআরসিএর কাছে আবেদন জানিয়েছেন প্রার্থীরা। বিভিন্ন এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৬৮ হাজারের বেশি শিক্ষক পদ শূন্য থাকায় শিক্ষক সংকটে নিয়মিত কাজ ব্যহত হচ্ছে।
গত বছরের ২২ ডিসেম্বর বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬৮ হাজারের বেশি শিক্ষক শূন্যপদে নিয়োগে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে এনটিআরসিএ। তারপর অনলাইনে নিবন্ধিত প্রার্থীদের আবেদন নিয়ে গত ১২ মার্চ ৩২ হাজার ৪৩৮ জন প্রার্থীকে নির্বাচিত করে । প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য গত ২৬ এপ্রিল থেকে এসব প্রার্থীর ভি-রোল ফরম অনলাইনে পূরণের সুযোগ দেয়া হয়। পরে আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। এমপিও নীতিমালা মেনে নির্ভুলভাবে প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশ করতে এখন তাদের শিক্ষা সনদ যাচাই করা হচ্ছে। এজন্য প্রথম থেকে পঞ্চম শিক্ষক নিবন্ধনে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের শিক্ষা সনদ ইতোমধ্যে জমা নেয়া হয়েছে। ষষ্ঠ থেকে একাদশ নিবন্ধনে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের সনদ যাচাই হচ্ছে।
এ বিষয়ে এনটিআরসিএর সচিব মো. ওবায়দুর রহমান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমরা ১৫ মে পর্যন্ত অনলাইনে ভি-রোল ফরম জমা নিচ্ছি। আর ২৬ জুন পর্যন্ত প্রার্থীদের সনদ জমা নেয়া হচ্ছে। সেগুলো যাচাই বাছাই করার পর কারা কারা চূড়ান্ত নিয়োগ সুপারিশের যোগ্য সে বিষয়ে ধারণা পাওয়া যাবে। ভি-রোল ফরম পূরণ শেষে বোঝা যাবে কারা কারা যোগদান করতে চাচ্ছেন। আমরা ভেরিফিকেশন কার্যক্রম চলমান রেখে সুপারিশ করার বিষয়ে ভাবছি। ভি-রোল ফরম পূরণ ও সনদ যাচাই শেষ হলে প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চাওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এমপিও নীতিমালা অনুসারে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও সঠিক বয়সের প্রার্থীরা যাতে চূড়ান্ত নিয়োগ সুপারিশ পান তা নিশ্চিত হতে সনদ যাচাই হচ্ছে। তবে এ কাজে কতো দিন লাগবে সে বিষয়টি স্পষ্ট নয়। যোগদানের বিলম্ব নিয়ে নতুন শিক্ষকরা উদ্বিগ্ন।
সম্প্রতি এনটিআরসিএ কার্যালয়ের সামনে কথা হয় সিরাজগঞ্জের একটি স্কুলে নিয়োগ সুপারিশ পাওয়া এক প্রার্থীর সঙ্গে। দৈনিক আমাদের বার্তাকে তিনি বলেন, তিন মাসে ভি-রোল ফরমপূরণই শেষ হয়নি। কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে মনে হলো, আগস্টেও সুপারিশ পাবো কি-না তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
রংপুরের মো. গোলজার হোসেন সুজন দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমরা যারা শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য নির্বাচিত হয়েছি তারা চলতি জুন মাসেই চূড়ান্ত সুপারিশ চাই। জুলাই মাসে ঈদের ছুটির পর প্রতিষ্ঠানে যোগদান করে ভোগান্তি ছাড়া এমপিওভুক্ত হতে চাই।
প্রসঙ্গত, ৬৮ হাজার শূন্যপদে তথ্য গত বছরের শেষের। গত ছয় মাসে আরো অনেক শিক্ষক অবসরে গেছেন। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্লাস চালাতে হিমশিম খাচ্ছে বলে দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানিয়েছেন মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও রাজধানীর বিটিসিএল আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমান বাবুল। দৈনিক আমাদের বার্তাকে তিনি বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানে চারজন শিক্ষকের চাহিদা দিয়েছিলাম, বছর পার হলেও এখনো শিক্ষকরা যোগদান করেননি। ফলে পদগুলো খালিই আছি। শিক্ষক নিয়োগের দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় আমাদের শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চারটি শিক্ষক পদ শূন্য রেখে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কষ্টকর বলে আমরা খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে কাজ চালাচ্ছি। তবে, সরকারের নির্বাচিত ও নিবন্ধিত শিক্ষকরা আর খণ্ডকালীন শিক্ষকরা এক হবে না। আমরা ভাবছি আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে এনটিআরসিএর কর্তাদের সঙ্গে দেখা করে এ ভোগান্তির কথা তুলে ধরাবো।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।