নিজের খেয়াল খুশিতে অফিস করা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো কর্মকর্তার নাম মো. আজাদুল ইসলাম। তিনি কারিগরি ও মাদারাসা শিক্ষা বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন। গত তিন বছরে ৩৫৭ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন তিনি। দীর্ঘ অনুপস্থিতির অভিযোগের গতবছরের সেপ্টেম্বর মাসে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
৩৫৭ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত এ কর্মকর্তাকে এবার বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ। প্রজ্ঞাপনটি সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো প্রজ্ঞাপনে তার অনুপস্থিতির হিসেব দিয়েছে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ। জানা গেছে, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ও ৫ নভেম্বর, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১ থেকে ২০ জানুয়ারি, একই বছরের ৪ থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি, ১৪ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর এবং গতবছরের ৪ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৩৫৭ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। এসময় তাকে টেলিফোন করেও পাওয়া যায়নি। তার স্ত্রীও তার কোনো খোঁজ দিতে পারেন নি। এ দীর্ঘ সময় অনুপস্থিত থাকার সরকারি কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আজাদুল ইসলাম বিনা অনুমতিতে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। এ অপরাধে তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩(খ) অনুযায়ী 'অসদাচরণ' এর অভিযোগে বিভাগীয় মামলা রুজু করে তার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানায় অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী পাঠানো করা হয়। গতবছরের ৩ সেপ্টেম্বর তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। নির্ধারিত সময়ে জবাব না দিলে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বিভাগীয় মামলা নিষ্পত্তির জন্য তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্তে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
মন্ত্রণালয় আরও বলছে, তিনি নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের জবাব দাখিল করেন। জবাবে তিনি ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে অঙ্গীকার করেন, 'আমি পূর্বের ন্যায় অপরাধ আর করব না, করলে এ অঙ্গীকারনামাই আমার চাকরিচুত্যির প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হবে।’ কিন্তু এর পরেও তিনি গতবছরের ৪ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ও আগের ৪৬ দিনসহ সর্বমোট ৩৫৭ দিন কর্মস্থলে বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকেন। তার অনুপস্থিতির কারণে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৪(৩)(ঘ) অনুযায়ী কেন তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে না এ মর্মে দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর নোটিশ তার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানায় পাঠানো হয়। ওই কারণ দর্শানো নোটিশ তিনি নিজ হাতে স্বাক্ষর করে গ্রহণ করলেও তার কোন জবাব দাখিল করেন নি। ২য় কারণ দর্শানোর জবাব দাখিল না করায় এবং তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ে মতামতের জন্য চিঠি পাঠানো হয়। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয় তাকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৪(৩)(ঘ) অনুযায়ী 'চাকরি থেকে বরখাস্ত' করার গুরুদণ্ডের পরিবর্তে একই বিধিমালার ৪(৩)(খ) বিধি অনুযায়ী 'বাধ্যতামূলক অবসর' গুরুদণ্ড আরোপের বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে।
তাকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৪(৩)(খ) অনুযায়ী গুরুদণ্ডের আওতায় তাকে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ সাময়িক বরখাস্তের দিন থেকে 'বাধ্যতামূলক অবসর’ দেওয়া করা হলো। জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।