৩৫ বছর ধরে কলেজে উর্দু শিক্ষার্থী নেই, তবু নিয়োগ হচ্ছে শিক্ষা ক্যাডার

নিজস্ব প্রতিবেদক |

 শিক্ষাখাতে প্রশাসনিক অদক্ষতা চরমে রয়েছে। আমলাদের ভুল সিদ্ধান্তে সরকারি-বেসরকারি স্কুুল-কলেজ নিয়োগ ও এমপিওভুক্তিতে প্রতিবছর সরকারে গচ্চা যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা। অর্থ অপচয়ের আরেকটি দৃষ্টান্ত হলো দেশের ছয়টি সরকারি কলেজে উর্দু বিভাগে ৩৫ বছর ধরে কোনো শিক্ষার্থী না থাকলে বিভিন্ন সময় বিসিএসের মাধ্যমে এসব বিভাগের জন্য শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে। এইসব ক্যাডার কর্মকর্তারা সরকারের বিরুদ্ধে নানাভাবে অপপ্রচারে লিপ্ত থাকার অভিযোগও রয়েছে। বছরের পর বছর সহকর্মীদের এসব অপকর্মের তথ্য গোপন করে আসছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। 

দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমানে তিনটি সরকারি কলেজ ও দুই অধিদপ্তরে পাঁচজন কর্মরত রয়েছেন, যাঁদের একজন ২৬তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার ও চারজন ৩৩তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা। তবে, কেউ কেউ বলছেন সংখ্যা আরো বেশি। শিক্ষা ক্যাডার সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়ার মতো কোনে পদ্ধতি এখন চাল হয়নি। 

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, রংপুরের কারমাইকেল কলেজ, রাজশাহী কলেজ, সিলেট এমসি কলেজ, সিলেট আলিয়া মাদরাসা, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ও চট্টগ্রাম কলেজে উর্দু বিভাগ আছে।

এর মধ্যে কারমাইকেল কলেজ, রাজশাহী কলেজ ও সিলেট আলিয়া মাদরাসায় একজন করে উর্দু শিক্ষক আছেন। আর মাউশি অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখা এবং মাদরাসা অধিদপ্তরে কর্মরত আছেন একজন করে।

উর্দু বিভাগের একজন শিক্ষক জানান, ঢাকা কলেজে বাস্তবে উর্দু বিভাগ নেই। কিন্তু কাগজে-কলমে রয়েছে। কারণ তাঁরা যখন অনলাইনে বদলির জন্য আবেদন করেন, তখন ঢাকা কলেজে উর্দু বিভাগে পদ খালি দেখান।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থী যদি নাই থাকে তাহলে সেই বিভাগের প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমার মনে হয় না। ব্যাপারটি আমরা বিস্তারিত জেনে এ ব্যাপারে করণীয় ঠিক করব।’

রাজশাহী কলেজের সাবেক একজন অধ্যক্ষ বলেন, ‘এই বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে সিলেবাস বন্ধ রয়েছে। সিলেবাস না থাকলে শিক্ষার্থী কিভাবে ভর্তি হবে? এই কলেজেই সর্বশেষ ১৯৮৬ সালে ছাত্র ছিল। পাকিস্তানিদের প্রধান ভাষা উর্দু।’

বাংলা বিষয়ের একজন শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যাপক বলেন, ‘উর্দু বিষয়টাই আমাদের জন্য অন্য কিছু। পাকিস্তানি আমলে এটাকে আমাদের দেশে জোর করে চালানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উর্দু বিভাগ রয়েছে। সেখানেও বেশিরভাগ মাদরাসা থেকে আসা শিবিরপন্থীরা ভর্তি হয়। সরকারি কলেজে এই বিভাগের কোনো কার্যক্রম থাকা উচিত নয়।’

শিক্ষা ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ১৯৮৬ সাল থেকেই কোনো কলেজের উর্দু বিভাগে শিক্ষার্থী নেই। আর ২৬তম বিসিএস মানে ২০০০ সালের পরে এসে এই বিভাগে একজন শিক্ষক নেওয়া হয়েছে। ৩৩তম বিসিএস অর্থাৎ ২০১৪ সালে এসে চারজন শিক্ষক নেওয়া হয়েছে। এই নিয়োগের মাধ্যমে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের শিক্ষা নিয়ে তাদের অদক্ষতাকে প্রকটভাবে সামনে এনেছে।’

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক  সিরাজুল  ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘যেই ভাষায় কোনো শিক্ষার্থী নেই, সেখানে শিক্ষক থাকার কোনো মানে হয় না। বিশেষ করে কলেজগুলোতে যদি শিক্ষার্থী না থেকে শিক্ষক থাকেন, বা নিয়োগ দেওয়া হয় সেটা অদক্ষতা, অপচয়।’

শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘পালি, সংস্কৃতি, উর্দুর মতো বিষয়গুলো দেশের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকলেই যথেষ্ট। কলেজ পর্যায়ে এই ভাষার প্রয়োজনীতা আছে বলে আমি মনে করি না। আমরা যে আরবি শিখাচ্ছি, সেটাও যেন আধুনিক শিক্ষা হয়। যাদের এসব বিষয় নিয়ে আগ্রহ আছে, তাদেরই তা পড়া উচিত। তবে ভাষা শিক্ষা নিয়ে আমাদের নতুন চিন্তার অবকাশ আছে। বিশেষ করে কোরিয়ান ভাষা, চায়না ভাষার ব্যাপক চাহিদা আছে। এসব ভাষা শিখতে পারলে একজন শিক্ষার্থী ভালো চাকরি পাবে। প্রয়োজনে কলেজগুলোতে চাহিদাসম্পন্ন এসব ভাষার একটি কোর্স থাকতে পারে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে - dainik shiksha ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! - dainik shiksha ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! যৌন হয়রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি - dainik shiksha যৌন হয়রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল - dainik shiksha জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল অভিযুক্ত শিক্ষা সাংবাদিকদের পক্ষে জোর তদবির - dainik shiksha অভিযুক্ত শিক্ষা সাংবাদিকদের পক্ষে জোর তদবির কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে যৌ*ন হয়*রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি - dainik shiksha যৌ*ন হয়*রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024051666259766