নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার শিহাড়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়াডের্র আমন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে ভোট গ্রহণের দায়িত্ব পেয়েছিলেন নজিপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক মো. শামীম ইমতিয়াজ। সে কেন্দ্রে ৪০ জন মৃত ব্যাক্তিসহ প্রায় ৩ শতাধিক ভোট দিতে না আসা ব্যাক্তির ভোট গ্রহণ দেখিয়ে ফল প্রকাশ করেছেন তিনি।
এলাকাবাসীরা জানান, শিহাড়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের আমন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটার তালিকা অনুযায়ী বর্তমান ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৩১৮ জন। পঞ্চম ধাপে গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে ওই এলাকার প্রায় ৪০ জন মৃত ব্যক্তিসহ অনুপস্থিত থাকা প্রায় ৩ শতাধিক ব্যক্তির ভোট গ্রহণ দেখানো হয়েছে।
দৈনিক শিক্ষা ডটকমের হাতে আসা ফলের সিটে দেখা যায়, ওই দিন ভোট গ্রহণ শেষে প্রিজাইডিং অফিসার স্বাক্ষরিত ইউপি সদস্য পদের উল্লিখিত ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৩১৮ টির মধ্যে মোরগ মার্কায় ৭০৩ টি, টিবওয়েল ১টি, ফুটবল মার্কায় ৫৯৩টি,ও বাতিল ভোট ২১ টিসহ মোট ১ হাজার ৩১৮ টি ভোটই কাস্ট দেখানো হয়েছে।
একই গ্রামের সোবাহান আলীর ছেলে অভিনেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এমরান হোসেন (হাসো) মুঠোফোনে দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে জানান আমি ঢাকায় এফডিসিতে কর্মরত আছি। আমি শুটিং ও পরীক্ষার জন্য ভোট দিতে বাড়ি যেতে পারিনি। আমার জানা মতে আমার এলাকার অনেকেই ঢাকাসহ অন্যান্য জায়গায় আছে যারা বাড়িতে যাননি, তাহলে শতভাগ ভোট কিভাবে কাস্ট হয়? তাই এই কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
আমন্ত উত্তর পাড়ার মহিলা ভোটার আবেদা বেগম জানান, তিনি ভোট দেয়ার জন্য গেলে তাকে জানিয়ে দেয়া হয় তার ভোট দেয়া হয়ে গেছে।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, ভোট কেন্দ্রে দায়িত্বে নিয়োজিত জৈনক সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ভোট দিতে আসা অনেক ভোটারকে ব্যালট পেপার নেই বলে ভোট দিতে না দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন। এলাকাবাসী আরও অভিযোগ করেন, ৭ নং ওয়ার্ডের আমন্ত উত্তরপাড়া, মধ্যপাড়া, দক্ষিণপাড়া, বাউস্তাপাড়া, হিন্দুপাড়া ও পরানপুর গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক ভোটার দেশ ও বিদেশে কর্মরত রয়েছেন। ভোটের দিন ওই ভোটাররা অনুপস্থিত থাকার পরেও রহস্যজনকভাবে তাদের ভোট গ্রহণ দেখানো হয়েছে। লাইনে দাড়ানো প্রায় শতাধিক ভোটার ভোট দিতে না পেরে ফিরে গেছেন। ওই ওয়ার্ডে পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
শিহাড়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের (ফুটবল মার্কা) সদস্য পদ প্রার্থী মো. গোলাম রব্বানী অভিযোগ করে বলেন, ওই কেন্দ্রে শতভাগ ভোটার উপস্থিতি দেখিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোশারফ হোসেন দিলিপকে (মোরগ মার্কা) কারচুপির মাধ্যমে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি ওই ঘটনার সঠিক তদন্তসহ ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য পদের ফল প্রত্যাহার করে পুনরায় ভোট গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিশনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে আমন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা প্রিজাইডিং অফিসার নজিপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মো. শামীম ইমতিয়াজ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। যা ভোট পাওয়া গেছে সেটার উপর ফল দেয়া হয়েছে।
৪০ জন মৃত ব্যক্তিরসহ ৩ শতাধিক মানুষ কেন্দ্রে অনুপস্থিত থাকার পরেও কিভাবে ভোট দিলেন জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে না পারেননি প্রভাষক মো. শামীম ইমতিয়াজ। তিনি বলেন, এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারছিনা। সাথে সাথে কল কেটে দেন তিনি।
উপজেলা নির্বাচন অফিসারের মুঠোফোনে দৈনিক শিক্ষাডটকমের পক্ষ থেকে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিটন সরকার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য মতে ওই কেন্দ্রে কিছু জাল ভোট হওয়ার কারণে ব্যালট পেপার শট হতে পারে।