৪২ ফুট লম্বা নখ রেখে বিশ্বরেকর্ড

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটার বাসিন্দা ডায়ানা আর্মস্ট্রং, গত ২৫ বছর ধরে তিনি নিজের হাতের নখ লম্বা রেখে আসছেন। ২০২২ সালের ১৩ মার্চ পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, তার দুই হাতের নখের সম্মিলিত দৈর্ঘ্য ৪২ ফুট ১০.৪ ইঞ্চি, যা একটা স্ট্যান্ডার্ড স্কুলবাসের চেয়েও লম্বা! হাতের এই লম্বা নখ রেখে নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন তিনি।

ডায়ানার ২ হাতের সবগুলো নখের নধ্যে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলের নখই সবচেয়ে বড়। এটির দৈর্ঘ্য ৪ ফুট ৬.৭ ইঞ্চি। অন্যদিকে, তার হাতের সবচেয়ে ছোট নখের দৈর্ঘ্য ৩ ফুট ৭ ইঞ্চি।

এর আগে বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা নখের অধিকারী নারী ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের আয়ানা উইলিয়ামস। কিন্তু পরে তিনি তার নখ কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। আয়ানার নখ ছিল ১৮ ফুট ৮ ইঞ্চি! সেই রেকর্ড ভেঙে সবচেয়ে লম্বা নখের নারীর রেকর্ড নিজের নামে লিখিয়েছেন ডায়ানা। 

যে কারণে ২৫ বছর ধরে নখ কাটেন না ডায়ানা

সর্বশেষ ১৯৯৭ সালে নিজের নখ কেটেছিলেন ডায়ানা। কিন্তু এর কিছুদিন পরেই ডায়ানা তার মেয়েকে হারান। এরপর তিনি প্রতিজ্ঞা করেন, আর কোনোদিন নখ কাটবেন না। সেদিন ডায়ানার দিন শুরু হয়েছিল সন্তানদের ঘুম থেকে উঠিয়ে এবং মুদি দোকানে কেনাকাটা করতে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। দোকানে গিয়ে তিনি তার ছোট মেয়ের ফোন কল পান, সে আতঙ্কিত সুরে বলে ওঠে- ‘মা, তিশা আর ঘুম থেকে উঠছে না।’

মেয়ের কথা শুনে ভীত হয়ে বাড়িতে ছুটে যান ডায়ানা এবং দেখেন, তার ১৬ বছরের মেয়ে লাতিশা অ্যাজমা অ্যাটাকে ঘুমের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করেছে। সেই দিনটা ছিল ডায়ানার জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিন।

ডায়ানা বরাবরই নিজের নখ কিছুটা লম্বা রাখতে পছন্দ করতেন, আর সেগুলো প্রতি সপ্তাহে ম্যানিকিওর করে দিত তার মেয়ে লাতিশা। ‘সে ই আমার নখের যত্ন নিতো, পলিশ এবং ফিলিং করে দিত’, বলেন ডায়ানা। 

এরপর পুরো বছরজুড়ে নিজের নখ কাটেননি ডায়ানা। ছেলেমেয়েরা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও কোনো কথা না বলে চুপ করে থাকতেন তিনি। অবশেষে যেদিন সন্তানদের কাছে নিজের উদ্দেশ্য প্রকাশ করলেন, সেদিন তারা এ বিষয়টি মেনে নেন।

সন্তানের স্মৃতি ভেবেই নখ কাটেননি ডায়ানা। তার ছোট মেয়ে রানিয়া বলেন, ‘মা আমাদের নখ না কাটার কারণ জানান, তখন আমি তার আবেগটা বুঝতে পারি। মা তার মেয়েকে যতটা মিস করে, আমিও বোনকে অনেক মিস করি। তাই এভাবে যদি আমার মা শান্তি খুঁজে পান, তাহলে তাই হোক।’

রানিয়া আরো জানান, প্রায় এক দশক ধরে হতাশার মধ্যে ছিলেন তার মা। মেয়ের স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতেই তিনি নখ বড় করতে শুরু করেছিলেন। আগে হেয়ারস্টাইলিস্ট হিসেবে কাজ করলেও, মেয়ের মৃত্যুর পর ডায়ানা ঘরেই থাকতে শুরু করেন এবং নখের প্রতি মনোযোগী হন।

কিন্তু এখন ডায়ানার হাতের নখ এতটাই বড় যে সেগুলো পেইন্ট করতে ৪-৫ ঘণ্টা লেগে যায়। ডায়ানা জানালেন, গত ২২ বছর যাবত তিনি সেলুনে যান না, কর্মীরা তাকে দেখলেই ভয় পেয়ে যায়! শুধু যে সময়সাপেক্ষ তা নয়, ডায়ানার নখে পেইন্ট করা কষ্টসাধ্যও বটে! তাই ৪-৫ বছরে একবার তিনি নখে পেইন্ট করান। তার নখে ফিলিং করাতে একটি কাঠের তৈরি যন্ত্র এবং পেইন্ট করাতে ১৫-২০ বোতল রঙ দরকার হয়।

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে স্বীকৃতির সনদ গ্রহণের সময় ভীষণ আবেগী হয়ে পড়েন ডায়ানা। নিজের মৃত মেয়ের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘সে (তিশা) হয়তো এখন খুব গর্ব বোধ করছে, কারণ সে ই শেষবার আমার নখ সাজিয়ে দিয়েছিল। আমি যখন নখ লম্বা করি, তখন তার কথাই আমার মনে পড়ে।’

ডায়ানাকে সনদ প্রদানের অনুষ্ঠানে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’র এডিটর-ইন-চিফ ক্রেইগ গ্লেনডে বলেন, ‘ডায়ানার এই রেকর্ডের পেছনের গল্পটা খুবই মর্মস্পর্শী এবং একইসঙ্গে চমৎকারও বটে। মেয়ের সম্মানে তিনি যা করেছেন তা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক।

সূত্র : গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0069270133972168