তৃনমূলের মানুষের সন্তানদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতকরণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার উষালগ্নে যখন বাংলাদেশ ধ্বংসস্তুপের মাঝে নিমজ্জিত। সে চরম অভাবের সময় ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে বিশাল দুঃসাহসী উদোগ গ্রহণ করেছিলেন। তারই আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে একই ধারাবাহিকতায় শিক্ষাবান্ধব সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৯ জানুয়ারি ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে আরেকটি দুঃসাহসী উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। ৯ জানুয়ারি ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিক শিক্ষকদের মহাসমাবেশে বলেছিলেন, এখন থেকে আর কোনো বিদ্যালয় নতুন করে জাতীয়করণ করা হবে না। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় যাচাই-বাছাইকৃত সকল শর্ত পূরণ করা সত্বেও জাতীয়করণের ২য় ধাপ থেকে বঞ্চিত ৪৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আজও জাতীয়করণ করা হয়নি।
দ্বিতীয় ধাপে বাদ পড়া বিদ্যালয়ের তথ্য প্রেরণ প্রসঙ্গে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষন ইউনিট মহাপরিচালক মুহাম্মদ আব্দুল হালিম ১২/০৫/২০১৬ স্মারক নং ৩৮.২৫.০০১.০০.০০.০১৩৬.০০১.২০১৫/৫৬৫ বলেন, উপযুক্ত বিষয়ের প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১২ মার্চ অনুষ্ঠিত টাস্ক ফোর্সের আলোচনার প্রেক্ষিতে ২য় ধাপে অধিগ্রহণ হতে বাদ পড়া ৭৩ বিদ্যালয়ের তথ্য যাচাই করা হয়েছে। তন্মধ্যে ৪৪টি বিদ্যালয় জাতীয়করণ যোগ্য ১৭টি বিদ্যালয় পরিদর্শনের অপেক্ষায় আছে।
দীর্ঘ সময়ের পরও একদিকে প্রধানমন্ত্রী জাতীয়করণের প্রতিশ্রুতি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়নি। অপরদিকে বেতন বিহীন শিক্ষকেরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তিসহ সরকারের সকল সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। জাতীয়করণ থেকে বাদ পড়ার অন্যতম চ্যালেঞ্জ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও কতিপয় টাউট বাটপারের অনুপ্রবেশ। শিক্ষাক্ষেত্রে বিশাল অর্জনসহ সরকারের বিশাল উন্নয়নে দেশবাসীসহ সারা বিশ্ব বিস্মিত। অথচ ২য় ধাপে ৪৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৭ মে ২০১২ খ্রিষ্টাওব্দের পূর্বে বিদ্যালয়ের নামে রেজিস্ট্রিকৃত দলিল, স্থাপিত, পাঠদানের অনুমতিপ্রাপ্ত অস্থায়ী রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষকসহ সকল শর্ত পূরণ করার পরেও মন্ত্রণালয়ে কার্যক্রম স্থবির হয়ে রয়েছে। এ কার্যক্রম বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকারের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থি।
দ্বিতীয় ধাপে বঞ্চিত ৪৪টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এ বছরের ১১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী বরাবর জাতীয়করণের উদ্দেশে স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারকলিপির অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবকে প্রদান করেন। কবির বিন আনোয়ার আগামী সংসদ নির্বাচনের পর সমাধান করার বিষয়টি শিক্ষক প্রতিনিধিদলকে আশ্বস্ত করেন। সমিতির পক্ষে প্রতিনিধি দলে ৪৪টি বিদ্যালয়ের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলাধীন ত্রিদোনা রেজি. বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক, তালতলী বরগুনা জেলার নায়াভাইজোড়া বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষকসহ ৪ জন শিক্ষক প্রতিনিধি।
স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয়ে যাচাই-বাছাইকৃত ২য় ধাপের ৪৪টি বিদ্যালয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জাতীয়করণে প্রত্যাশা কি যুক্তিসংগত নয়? সবার প্রত্যাশা শিগগির প্রধানমন্ত্রীর পূর্ণাঙ্গ প্রতিশ্রুতি বাস্তাবায়ন হবে।
লেখক: সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ