২২ বারের চেষ্টায় মেডিকেলে ভর্তি হলেন প্রদীপ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সুকুমার রায়ের ‘সৎপাত্র’ কবিতার গঙ্গারামকেও হার মানিয়েছে তিনি। গঙ্গারাম ১৯ বার ম্যাট্রিকে ‘ঘায়েল’ হয়ে শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়েছিল। কিন্তু নদিয়ার প্রদীপ হালদারের নামের সঙ্গেই ‘হাল’ শব্দটি যুক্ত! তিনি হাল ছাড়েন কী করে? দীর্ঘ ২২ বারের চেষ্টায় ডাক্তারিতে ভর্তি হয়েই ছেড়েছেন কৃষ্ণগঞ্জ থানার বাংলাদেশ সীমান্ত-সংলগ্ন প্রতাপপুর গ্রামের এই বাসিন্দা।

প্রদীপের এমন সাফল্যের খবর রীতিমতো প্রতাপপুরের আকাশে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। এর ফলে এতদিন প্রদীপের ডাক্তারি পড়া ও ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা নিয়ে যারা মশকরা করতেন তারাও এখন প্রদীপকে কুর্নিশ করতে বাধ্য হচ্ছে। কারণ হার না-মানার মানসিকতা, পাহাড়সম জেদ, অটল সংকল্প ও পরিশ্রমে অসাধ্য সাধন করে দিনমজুর প্রদীপ ৫২ বছর বয়সেও দমে না গিয়ে মেডিকেলে ভর্তি হয়েই ছেড়েছেন। 

অতি দরিদ্র পরিবারের ছেলে প্রদীপ মাধ্যমিকের পর আর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। জীবিকার তাগিদে কাজে যোগ দিতে হয়েছিল তাকে। এরপর বিয়ে করেছেন, সন্তানের বাবাও হয়েছে। তবে মনের গোপন কুঠুরিতে আরও পড়াশোনা করা এবং ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন লালন করে গিয়েছেন নিরন্তর।

এরই ধাবাহিকতায় বহু লড়াই করে ২০০০ সালে বিজ্ঞান শাখায় উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন প্রদীপ। পরে জয়েন্ট এন্ট্রান্সে বসার জন্য কিছু বই কিনে পড়াশোনা শুরু করেন। ভোর থেকে দিন মজুরির কাজে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে বই নিয়ে পড়তে বসে যেতেন। তার সঙ্গে ছেলেমেয়েরাও পড়তে বসত। রাত বাড়লে বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়লেও বইয়ে মুখ গুঁজে থাকতেন প্রদীপ।

এ নিয়ে পাড়ায়, আত্মীয়দের কাছে এমনকি নিজের বাড়িতেও প্রদীপকে এই ‘পাগলামি’ নিয়ে কথা শুনতে হত। তিনি বলেন, ‘রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে অনেকেই ‘এমবিবিএস ডাক্তার যাচ্ছে’ বলে হাসাহাসি করত।’ এমনকি আমার স্ত্রী বাসন্তী হালদারও মনে করতেন, এ সব মাথা খারাপের লক্ষণ। বলতেন, “ছেলেমেয়ের পেটে ভাত দেওয়ার বালাই নেই, উনি ডাক্তার হবেন!’’

এসব তাচ্ছিল্য অবশ্য ৫২ বছর বয়সী এই ব্যক্তিকে তার লক্ষ্য থেকে বিচলিত করতে পারেননি। লক্ষ্য থেকে সরে না গিয়ে ২০২১ সালে নিট পরীক্ষায় বসেন এবং সকলকে চমকে দিয়ে পাশ করেন তিনি। তার র‌্যাঙ্ক হয় ৩,৪৬,২৩৪তম। এমবিবিএস পড়ার সুযোগ না পেলেও সুযোগ পান কলকাতা হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে।

কলেজের অধ্যক্ষ রজত চট্টোপাধ্যায় বলেন, এত বয়সে কাউকে মেডিক্যাল পড়তে ভর্তি হতে দেখিনি। মানুষ চাইলে সব কিছু করতে পারে তার নজির উনি। ওনার লড়াই আর অধ্যবসায় শেখার মতো। 

এমন সাফল্যে উচ্ছ্বসিত প্রদীপ একগাল হেসে বলেন, সবাইকে এবার বলতে হবে, ‘ওই যে প্রদীপ ডাক্তার যাচ্ছে!’ এমবিবিএস না হলেও আমি ডাক্তার তো!


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025861263275146