ডায়াবেটিস সম্পর্কে স্কুল শিক্ষার্থীদের অজ্ঞতার কথা চট্টগ্রামে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। ডায়াবেটিস যে একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ এই কথাটাই জানেন না ৬০ ভাগ শিক্ষার্থী।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আদনান মান্নান এবং চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ডায়াবেটিস ও হরমোন বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারহানা আকতারের নেতৃত্বে সম্প্রতি চট্টগ্রামে দুটি গবেষণা পরিচালিত হয়। অন্য গবেষণায় দেখা গেছে, চট্টগ্রামের ডায়বেটিস রোগীদের মাঝে জিনগত পরিবর্তন হচ্ছে। একটি গবেষণা পত্র ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন মেডিসিন’ জার্নাল এবং অন্যটি যুক্তরাষ্ট্রের ‘মলিকুলার বায়োলজি রিপোর্টস’ শীর্ষক জার্নালে প্রকাশিত হয়।
গবেষণা পত্রে বলা হয়, ডায়াবেটিস সম্পর্কে কিছুই জানেন না চট্টগ্রামের প্রতি দু’জনের মধ্যে একজন স্কুলগামী কিশোর-কিশোরী। এমনকি ডায়াবেটিস শব্দটির নামও শোনেননি তারা। ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ তার সম্পর্কে জানেন না ৬০ ভাগ শিক্ষার্থী। আর ৫০ ভাগ শিক্ষার্থী কখনো শোনেননি ইনসুলিন শব্দটি। গবেষণায় ওঠে আসে, ইনসুলিন কিংবা ডায়াবেটিসের চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে ৬০ ভাগ শিশু কিছুই শোনেননি। ৭০ ভাগ ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের হার দেখা যাচ্ছে।
এছাড়া, ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে স্নায়ু দুর্বলতা, চোখের সমস্যা, ডায়াবেটিক ফুট, কিডনি সমস্যা, হতাশা দেখা যাচ্ছে। যা আশঙ্কাজনক বলে মনে করেন গবেষকরা।
এদিকে অপর গবেষণায় উঠে আসে চট্টগ্রামের ডায়বেটিস রোগীদের জিনগত পরিবর্তনের বিষয়টি। ইতোপূর্বে টিসিএফ৭এল২ নামক একটি জিনের সঙ্গে ডায়বেটিসের সম্পর্ক আছে এমন ধারণা করছিলেন বিভিন্ন দেশের গবেষকেরা। এবার চট্টগ্রামের গবেষকরাও ধারণা করছেন তার সঙ্গে ডায়বেটিস হওয়ার সম্পর্ক থাকতে পারে। গবেষণায় ওঠে আসে- প্রতি ৩ জন ডায়বেটিস রোগীর মাঝে একজনের মধ্যে পাওয়া গেছে এই জিনের মিউটেশন বা বিন্যাসগত পরিবর্তন। এই মিউটেশন থাকা অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে মেটফরমিন এবং ইনসুলিনের মত বহুল প্রচলিত ওষুধ নেয়ার উপদেশ দেননি চিকিৎসকেরা। এর অর্থ এই জিনগত পরিবর্তন থাকলে ভিন্ন প্রকারের চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করতে হতে পারে। শুধু তাই নয় এই জিনগত পরিবর্তন পিসি আর পদ্ধতির মাধ্যমে অল্প বয়সেই ডায়বেটিস হওয়ার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে ভবিষ্যতে।
গবেষণায় চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালের ডা. নওশাদ আজগর চৌধুরী, ডা. সুমন রহমান, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর ওমেনের জনস্বাস্থ্য বিভাগের ড. নাজমুল আলম সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গবেষকদলের কয়েকজন জানান, মূলত ভৌগলিক কারণে জিনগত পরিবর্তনের দিকটি উঠে এলেও ভবিষ্যতে এই বিষয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।