৬০ শিক্ষার্থী নিয়ে দেড় হাজার এসএসসি পরীক্ষার্থীর ফরম পূরণ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি |

চট্টগ্রাম নগরের ষোলশহর পাবলিক স্কুলের দশম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী রয়েছে ৬০ জন। কিন্তু এ বছরের এসএসসি পরীক্ষার জন্য তারা ১ হাজার ৪০০ শিক্ষার্থীর ফরম পূরণের জন্য বোর্ডে আবেদন করেছে। অতিরিক্ত এ শিক্ষার্থীদের পাঠদান হয়েছে অনুমোদনহীন বিদ্যালয়ে। কিন্তু তথ্য গোপন করে বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ করে। এ জন্য অভিভাবকদের বাড়তি টাকা গুনতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। 

অবৈধভাবে শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন করানোর এ প্রক্রিয়া ধরেছে শিক্ষা বোর্ড। পাশাপাশি গত ২২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক বিপ্লব গাঙ্গুলী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কিছু কিছু অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠান নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। কিন্তু নবম শ্রেণিতে নিবন্ধন ও এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে গিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। এ কারণে অনুমোদন নেই, এমন বিদ্যালয় ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণিতে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে না। ভর্তি হওয়ার আগে অভিভাবকদের খোঁজ নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

অননুমোদিত বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণের বিষয়ে ষোলশহর পাবলিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ভূপাল দাশ গুপ্তের দাবি, শিক্ষা বোর্ডের অনুমতি নিয়েই এত দিন তারা অনুমোদনহীন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন ও ফরম পূরণ করিয়েছে। এ জন্য শিক্ষার্থীপ্রতি বাড়তি মাত্র ১০০ টাকা করে নেয়া হতো। এর বেশি নেয়া হয়নি।

অনুমোদনহীন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শুধু ষোলশহর পাবলিক স্কুলে নয়, নগরের আরও বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী দেখিয়ে নিবন্ধন করায়। এ জন্য বিভিন্ন খাতে শিক্ষার্থীপ্রতি চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা বাড়তি নেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এত বছর ধরে শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ কোনো বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এ বিষয়ে শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক বিপ্লব গাঙ্গুলী বলেন, 'এত দিন তথ্য গোপন করে বিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী নিবন্ধন করাত। বোর্ড নানা সময় বিভিন্ন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছে। কিন্তু কাজ হয়নি। এ কারণে আবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।'

পাঁচ বিদ্যালয়ের চিত্র

শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, শর্ত পূরণ না করার কারণে চট্টগ্রাম নগরের শতাধিক বিদ্যালয়ের পাঠদান করার অনুমতি নেই। তবে এসব প্রতিষ্ঠান ঠিকই শিক্ষার্থী ভর্তি করে। পরে অনুমোদন আছে, এমন বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নবম শ্রেণিতে নিবন্ধন ও এসএসসি পর্যায়ে ফরম পূরণ করানো হয়। আর এই সুযোগ নিচ্ছে বেশি কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ষোলশহর পাবলিক স্কুল ছাড়াও এ তালিকায় আছে পতেঙ্গা আইডিয়াল স্কুল, আলহাজ্ব তাজুল ইসলাম উচ্চবিদ্যালয়, ছাফা মোতালেব হাইস্কুল, বাকলিয়া উচ্চবিদ্যালয়, হাস্‌নে হেনা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়।

জানা গেছে, চলতি বছরের এসএসসি বা মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় ফরম পূরণ শুরু হয় গত বছরের ডিসেম্বরের দিকে। শেষ হয় চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে। আগামী এপ্রিলে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এসএসসিতে ফরম পূরণের জন্য পতেঙ্গা আইডিয়াল স্কুলের নিজস্ব শিক্ষার্থী ছিল ৫১৫ জন। তারা অন্য ৭ বিদ্যালয়ের আরও ২৯২ সহ মোট ৮০৭ শিক্ষার্থীর নিবন্ধনের জন্য শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করেছে। আলহাজ্ব তাজুল ইসলাম উচ্চবিদ্যালয়ের নিজস্ব শিক্ষার্থী ৮৬ জন, তারা আরও ৫টি বিদ্যালয়ের ৩৪৩ সহ ৪২৯ শিক্ষার্থীর নিবন্ধন জন্য আবেদন করে। ছাফা মোতালেব হাইস্কুলের নিজস্ব শিক্ষার্থী ৯৯ জন, প্রতিষ্ঠানটি অন্য ৯টি বিদ্যালয়ের ৪১২ জনসহ ৫১১ শিক্ষার্থীর নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। অন্যদিকে বাকলিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের নিজস্ব শিক্ষার্থী ২৪৯ জন, তারা ১০টি বিদ্যালয়ের ৫০২ জন শিক্ষার্থীর নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে।

বাকলিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকের হোসেন বলেন, 'অনুমোদনহীন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর কথা চিন্তা করে তারা নিবন্ধন ও ফরম পূরণ করিয়েছে। এ জন্য শিক্ষার্থীপ্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বাড়তি নেন। চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা বাড়তি নেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়। তবে এখন বোর্ডের সিদ্ধান্ত মেনে আর এ কাজ করবেন না। অনুমোদনহীন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ ও নিবন্ধনের এ কার্যক্রম অবৈধ বলে স্বীকার করেছেন ছাফা মোতালেব হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন।' তিনি বলেন, 'অনেক প্রতিষ্ঠান এ কাজ করে আসছিল, এ জন্য তারাও নিবন্ধন ও ফরম পূরণ করেছেন। তবে এখন থেকে আর করবেন না।'

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামরুল আখতার বলেন, 'অনুমোদিত নয়, এমন বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে না। পাশাপাশি তথ্য গোপন করে অননুমোদিত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন ও ফরম পূরণের সুযোগ নেই। বিষয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।'


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে - dainik shiksha ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! - dainik shiksha ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! যৌন হয়রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি - dainik shiksha যৌন হয়রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল - dainik shiksha জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল অভিযুক্ত শিক্ষা সাংবাদিকদের পক্ষে জোর তদবির - dainik shiksha অভিযুক্ত শিক্ষা সাংবাদিকদের পক্ষে জোর তদবির কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে যৌ*ন হয়*রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি - dainik shiksha যৌ*ন হয়*রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002716064453125