৬ শিক্ষার্থীকে পড়াতে এমপিওভুক্ত ৪ শিক্ষক, পেয়েছেন বকেয়া বেতনও

যশোর প্রতিনিধি |

ঝিনাইদহের মহেশপুরের যাদবপুর কলেজের বিজ্ঞান শাখায় দুই শিক্ষাবর্ষ মিলিয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা মাত্র ছয় জন। এ ছয় শিক্ষার্থীকে পড়াতে কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের চারজন শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তথ্য জালিয়াতি করে ওই ৪ শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। এ কলেজের তিনজন শিক্ষক দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে এমপিওভুক্ত হয়েছেন। এসব অনিয়মে প্রতিমাসে অপচয় হচ্ছে সরকারের লক্ষাধিক টাকা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সম্প্রতি কলেজটি উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে এমপিওভুক্ত হয়েছে। আর কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ৬ জন শিক্ষার্থীকে পড়াতে এমপিওভুক্ত হয়ে বকেয়া বেতন-ভাতা পেয়েছেন চার জন। তারা হলেন, গণিতের প্রভাষক শরিফুল ইসলাম, পদার্থবিজ্ঞানের প্রভাষক হাবিবুর রহমান, রসায়নের প্রভাষক গোলাম আজম ও জীববিজ্ঞানের প্রভাষক রাজিব হোসেন। গণিতের প্রভাষক শরিফুল ইসলাম, পদার্থবিজ্ঞানের হাবিবুর রহমান ও ইসলাম শিক্ষার হাফিজুর রহমান দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ নিয়ে পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকমে ‘তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুই প্রতিষ্ঠান থেকে এমপিও নেয়ার অভিযোগ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে স্থানীয়ভাবে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সাংবাদিক হিসেবে কর্মরত আছেন অধ্যক্ষের ভায়রা ভাই। দৈনিক শিক্ষায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি প্রত্যাহারের জন্য দৈনিক শিক্ষাডটকমের যশোর প্রতিনিধিকে চাপ দিচ্ছেন সেই কথিত সাংবাদিক। 

যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড থেকে জানা যায়, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে যাদবপুর কলেজটির বিজ্ঞান বিভাগের পাঠদান স্বীকৃতি সর্বশেষ নবায়ন করা হয়। চার বছরের জন্য এ স্বীকৃতি দেয়া হয়। তবে এই বিভাগে বর্তমানে শিক্ষার্থী আছে মাত্র ছয়জন। যার মধ্যে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ছয়জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। আর ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে কোনো শিক্ষার্থীই ভর্তি হয়নি। অর্থাৎ কলেজটির বিজ্ঞান বিভাগে বর্তমানে মাত্র ছয়জন শিক্ষার্থীকে পড়াচ্ছেন গণিতের প্রভাষক শরিফুল ইসলাম, পদার্থবিজ্ঞানের প্রভাষক হাবিবুর রহমান, রসায়নের প্রভাষক গোলাম আজম ও জীববিজ্ঞানের প্রভাষক রাজিব হোসেন। চলতি বছরের জুনে যাদের এমপিও হয়েছে। এজন্য তারা সরকার থেকে প্রতিমাসে ২৩ হাজার ৫০০ টাকা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। সেই হিসেবে ছয় শিক্ষার্থীকে পড়াতে প্রতিমাসে সরকারের ব্যয় হচ্ছে ৯৪ হাজার টাকা। এর আগে এই শিক্ষকদের নতুন এমপিও হওয়ায় এরিয়ার হিসেবে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয় প্রায় ১০ লাখ টাকা।

এমপিও নীতিমালায় বলা হয়েছে, কলেজের কোনো বিভাগের শিক্ষক এমপিওভুক্তির জন্য প্রতি শিক্ষাবর্ষে অন্তত ২৫ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। অর্থাৎ দুই শিক্ষাবর্ষে অন্তত ৫০ জন শিক্ষার্থী থাকা আবশ্যক। সেখানে যাদবপুর কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী আছে মাত্র ছয়জন। সংশ্লিষ্ট বিভাগে মিথ্য তথ্য সরবরাহ করে তারা চার শিক্ষকের এমপিওর আবেদন করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

এ ব্যাপারে কলেজটির অধ্যক্ষ মঞ্জুরুল আলম দিনুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক কেএম রব্বানী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ২০১৭ খিষ্টাব্দে সর্বশেষ কলেজটির বিজ্ঞান বিভাগের একাডেমিক স্বীকৃতি নবায়ন করা হয়। তখন আমি দায়িত্বে ছিলাম না। কীভাবে তারা স্বীকৃতি পেল তা তখনকার কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর অমল কুমার বিশ্বাস ভালো বলতে পারবেন। তবে আমার মনে হয় গ্রামের কলেজ হিসেবে মানবিক বিবেচনায় স্বীকৃতি নবায়ন করা হয়েছিল। বর্তমানে ওই কলেজটির বিজ্ঞান বিভাগে ছয়জন শিক্ষার্থী আছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চলের পরিচালক (কলেজ) প্রফেসর হারুন অর রশিদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এমনটা হলে প্রকৃত তথ্য গোপান করেই তারা এমপিওভুক্ত হয়েছেন। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে সত্যতা মিললে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032210350036621