৭২ বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

দৈনিক শিক্ষাডটকম, রাবি |

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ৬ জুলাই যাত্রা শুরু করে। উত্তরাঞ্চলের মানুষের পশ্চাৎপদতা কাটিয়ে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হলেও বর্তমানে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির গৌরব ও ঐতিহ্য বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে। আজ শনিবার ৬ জুলাই, ৭২ বছর বয়সে পা রাখছে দেশের অন্যতম প্রাচীন এই বিদ্যাপিঠ।

তবে প্রতিষ্ঠার শুরুতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানের স্থানে ছিল না। দুইটি অনুষদের (কলা ও আইন) ছয়টি বিভাগ (বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, আইন, দর্শন ও অর্থনীতি) নিয়ে প্রথম যাত্র শুরু হয়। ১৯৫৩-৫৪ সেশনে পোস্ট-গ্রাজুয়েট কোর্সের মাধ্যমে রাজশাহী কলেজে ১৫৬ জন ছাত্র, ৫ জন ছাত্রী ও ২০ জন শিক্ষক নিয়ে শুরু হয়। প্রথম অনার্স কোর্স চালু হয় ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে। কালের বিবর্তনে বর্তমানে বর্তমানে বিদেশি ও সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষার্থী ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত মোট ২৬ হাজার ৩১৫ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এর মধ্যে ছাত্রী রয়েছে ৯ হাজার ৩৪৬ জন ও ছাত্র সংখ্যা ১৬ হাজার ৯৬৯।

প্রতিষ্ঠালগ্নে রাজশাহী কলেজের কাছে পদ্মাপারে অবস্থিত ডাচদের তৈরি বড়কুঠিতে উপাচার্যের প্রথম অফিস বসানো হয়। ছাত্রদের থাকার জন্য শহরের বিভিন্ন ভবন ভাড়া করা হয়। রাজশাহী কলেজ সংলগ্ন ফুলার হোস্টেলকে করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রাবাস। আর ছাত্রী নিবাস করা হয় বড়কুঠি এলাকার লালকুঠি ভবন। প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছর পর ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে শুরু হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান মতিহার ক্যাম্পাসে ভবন নির্মাণের কাজ। ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম বর্তমান ক্যম্পাসে স্থানান্তর করা হয়। সে সময় ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ৫টি হল নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে ছাত্রদের ৪টি (শেরে বাংলা ফজলুল হক হল, শাহ্‌ মখদুম হল, নবাব আব্দুল লতিফ হল ও সৈয়দ আমীর আলী হল) ও ছাত্রীদের ১টি (মন্নুজান হল)। কালের বিবর্তনে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আবাসিক হল রয়েছে ১৭টি। যার মধ্যে ছাত্রী হলের সংখ্যা ৬টি ও ছাত্রদের রয়েছে ১১টি আবাসিক হল। এছাড়া ১০ তালা করে দুটি হল নির্মাণাধীন রয়েছে।

বর্তমানে প্রায় ৭৫৩ একর বা ৩০৪ হেক্টর এলাকাজুড়ে রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ১০টি অনুষদের অধীনে ৫৯ টি বিভাগ ও ৫টি উচ্চতর গবেষণা ইনস্টিটিউট রয়েছে।

তবে দীর্ঘ ৭১ বছরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যায় কলেবর বাড়লেও বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে দেশের শিক্ষা সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, গবেষণা ও অবকাঠামোসহ বিভিন্ন দিকে এখনো কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হয়নি। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপকরা বলছেন, প্রশাসনিক দুর্বলতা, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সমস্যা, রাজনীতিকীকরণ, দুর্নীতি অগ্রগতির পিছে প্রধান অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে।

উপ-উপাচার্য সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়েই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটা সবারই প্রত্যাশা যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা করে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ কিংবা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেককেই নিজ নিজ দায়িত্বটুকু পালন করতে হবে। তবে সার্বিক বিবেচনায় যথেষ্ট উন্নতি হলেও কিছু জায়গায় এখনো আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজের মধ্যে একটি হচ্ছে গবেষণা। এটি ঐচ্ছিক নয়, আবশ্যিক একটি কাজ। আমরা ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরি করেছি। যেখানে প্রতিটি বিভাগের শিক্ষকদের গবেষণা সংযুক্ত করা হয়েছে। গবেষণা বৃদ্ধির জন্য এবার আমরা শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি নীতিমালা পরিবর্তন করে গবেষণার বিষয়টি সংযুক্ত করেছি। এখন সব অনুষদের শিক্ষকদের গবেষণা করতে হবে। এ জন্য প্রতিটি অনুষদের অধিকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সিনেট নির্বাচন করার জন্য ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছি। কারণ সিনেট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন। সিনেটের মাধ্যমে অনেক বিষয় আইনে পরিণত হয় কিংবা আইনসিদ্ধ হয়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেটি চালু করার লক্ষ্যে কাজ করছি। সার্বিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতির লক্ষ্যে সমস্যাগুলো নিয়ে প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবি বিপিসি ও বাকশিস‘র - dainik shiksha শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবি বিপিসি ও বাকশিস‘র শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ ঘোষণার প্রতিশ্রুতি আসছে! - dainik shiksha শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ ঘোষণার প্রতিশ্রুতি আসছে! ‘আমরা রক্ত দিচ্ছি আর ওরা সচিবালয়ে বসে টাকা ভাগ করছে’ - dainik shiksha ‘আমরা রক্ত দিচ্ছি আর ওরা সচিবালয়ে বসে টাকা ভাগ করছে’ ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত ভর্তি কাল, ক্লাস শুরু ২০ অক্টোবর - dainik shiksha ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত ভর্তি কাল, ক্লাস শুরু ২০ অক্টোবর অবশেষে ইএফটিতে এমপিও শিক্ষকদের বেতন দেওয়া শুরু - dainik shiksha অবশেষে ইএফটিতে এমপিও শিক্ষকদের বেতন দেওয়া শুরু দুই শতাধিক জাল শিক্ষকের তালিকা প্রকাশ - dainik shiksha দুই শতাধিক জাল শিক্ষকের তালিকা প্রকাশ কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025360584259033