৭৭ নদী হত্যায় জড়িত দীপু মনিসহ ২৫৬ আওয়ামী মাফিয়া

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

নদী একেকটি জনপদের পরিবেশ-প্রতিবেশসহ মানুষের জীবিকার বড় উৎস। সোমেশ্বরী, ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা, মেঘনাসহ আরও অনেক নদী তার চরিত্র হারিয়ে এখন বালুমহালে পরিণত হয়েছে। অনুসন্ধান বলছে, মেঘনা, সোমেশ্বরী, যাদুকাটা ও পদ্মার মতো ৭৭টি নদীর ১৭৬টি স্থানে বালু তোলার সিন্ডিকেটে ছিল ২৫৬ আওয়ামী মাফিয়া। যার প্রধান মাফিয়া ছিলেন সাবেক মন্ত্রী ডা. দীপু মনিসহ অনেক এমপি।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে প্রায় ৭৭টি নদী এখন হুমকির মুখে। প্রতিদিন বালু উত্তোলন থেকে চাঁদাবাজির পরিমাণ ছিল ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। সেই হিসাবে প্রতিদিন এসব নদী থেকে ২৭ কোটি ১৩ লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে দেশের অর্থনীতির। 

মঙ্গলবার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) অডিটোরিয়ামে ‘ফ্যাসিবাদের কবলে নদী’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধে এই তথ্য তুলে ধরেন রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ২০০৯ থেকে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসনামলে অবৈধ বালু উত্তোলন ও দখলের কারণে নদী ও জলাভূমিগুলো ধ্বংস হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতারা নৌপথও নিয়ন্ত্রণ করতেন। ছোট, মাঝারি, বড়– সব নদীই এসব দখলদারের লোভের শিকার হয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে। আবার কোনো কোনো দখলদার সরাসরি নদী দখল না করলেও নদীপাড়ের মাটি ও বালু তুলে এর সর্বনাশ করছেন। সারাদেশে নদী হত্যার দাগ লেগে আছে ১ লাখ ৪০ হাজার ৮৫ প্রভাবশালীর হাতে। উন্নয়ন প্রকল্পও অসংখ্য নদীকে গলাটিপে হত্যা করেছে। বালুখেকো ও নদীখেকোদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ম‌‌ৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘নতুন করে যে সংবিধান লেখা হবে, তাতে পরিবেশ রক্ষায় বিষয়টি গুরুত্বসহকারে উল্লেখ করা হবে। উন্নয়ন ফ্যাসিস্টদের শব্দ। উন্নয়নের কথা বলে তারা আমাদের গণতন্ত্র হরণ করেছে, পরিবেশ ধ্বংস করেছে। আমরা দেখি, হাওরের রাস্তায় আলপনা আঁকা হয়; পরে সেই রং গিয়ে পানিতে পড়ে। এতে অনেক মাছ মারা যায়। পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সে বিষয়ে কথা বলা লোকের সংখ্যা বর্তমান সমাজে একেবারেই কম। তাই নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে নতুন করে আইন করা যায় কিনা, ভেবে দেখা হচ্ছে। নদী যদি রং বদলাতে পারত, তাহলে পানি রক্তের মতো লাল হতো। নদী হত্যার জন্য নদী হত্যাকারীদের বিচার হওয়া উচিত।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আবরার ফাহাদ নদীর কথা বলতে গিয়ে শহীদ হন। ফ্যাসিবাদের কবলে পড়ে বিগত ১৬ বছরে নদীর যে বিপর্যস্ত অবস্থা, তার সমাধান কীভাবে করা যায় সে বিষয়ে ভাবতে হবে। নদী, কৃষি এবং পরিবেশ নিয়ে জাতীয় নীতি গ্রহণ করা হবে। ফ্যাসিবাদী সরকারের উন্নয়নের নামে নদী দখল হয়েছে। যে নীতি বা রাজনীতি এই পর্যন্ত হয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে আলোচনা ও গবেষণা প্রয়োজন। পরিবেশ নদী ও প্রকৃতি নিয়ে দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

দেশের অস্তিত্বের সঙ্গে নদীর সম্পর্ক উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে আমাদের স্লোগান ছিল পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা। ঢাকার চতুর্দিকে চারটা নদী রয়েছে। এই নদীগুলোকে মাথায় রেখে নগর পরিকল্পনা করতে পারলে তা জনবান্ধব হতো। মাফিয়ারা নদী দখল এবং পরিবেশ ধ্বংস করে গোষ্ঠীস্বার্থ হাসিল করেছে। আমরা যাতে দখলদারদের প্রতিহত করতে পারি, সে জন্য রূপরেখা প্রণয়ন হবে।’ দীর্ঘ এবং স্বল্পমেয়াদি রূপরেখা প্রণয়নে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম মোহাম্মদ শামসুদ্দীন, পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ, প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি ইফতেখার মাহমুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! - dainik shiksha মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030100345611572