৭ বছর ধরে বন্ধ ছাত্রাবাস: শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি

রাজশাহী প্রতিনিধি |

রাখতে রাখতে আর খোলাই যাচ্ছে না রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্রাবাসগুলো। কর্তৃপক্ষ বলছে, পড়ে থাকার কারণে ছাত্রাবাসের অনেক কিছুই নষ্ট হয়ে গেছে। মেরামত না করলে আর বাসযোগ্য করা যাবে না। এর জন্য যা বরাদ্দের প্রয়োজন তা পাওয়া যাচ্ছে না।

একজন ছাত্র হত্যার পর পাল্টা হত্যা ও নৈরাজ্যের ভয়ে সাত বছর ধরে ছাত্রাবাসগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি ছাত্র মৈত্রীর পলিটেকনিক শাখার সহসভাপতি রেজওয়ানুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে সানিকে কুপিয়ে জখম করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ওই দিন বিকেলেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ হামলায় আরও কয়েকজন ছাত্র মৈত্রীর নেতা গুরুতর আহত হন। ওই দিনই কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য পলিটেকনিক ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করেন এবং শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাস ত্যাগের নির্দেশ দেন। এর প্রায় সাড়ে চার মাস পর ২০১০ সালের ২৬ মে ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া হলেও আর ছাত্রাবাস খুলে দেওয়া হয়নি। এখনো সেই অবস্থা চলছে।

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ক্যাম্পাসে তিনটি ছাত্রাবাস রয়েছে। এগুলো হচ্ছে শাহ্ নেয়ামতুল্লাহ (রহ.) ছাত্রাবাস, শহীদ মনোয়ার ছাত্রাবাস ও আক্তারুন্নেসা ছাত্রীনিবাস। তিনটি ছাত্রাবাসে প্রায় ২৫০ শিক্ষার্থীর আবাসনব্যবস্থা ছিল। ছাত্রাবাস খোলা থাকা অবস্থায় এই এলাকা শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর থাকত। কিন্তু এখন সেখানে ভুতুড়ে পরিবেশ। চারদিকে সুনসান নীরবতা। যাতায়াতের রাস্তাগুলো ঝোপঝাড়ে ভরে গেছে। দেয়াল থেকে পলেস্তারা খসে পড়েছে। ছাত্রাবাসের বারান্দার গ্রিল বেয়ে উঠেছে লতাপাতা। গেটের তালায় মরিচা ধরেছে।

গত মঙ্গলবার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে গিয়ে কথা হয় পাওয়ার টেকনোলজি বিভাগের শেষ পর্বের শিক্ষার্থী ও পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠান দুই বছর থেকে চলছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে। স্থায়ী অধ্যক্ষ না থাকায় ছাত্রাবাস খোলার ব্যাপারে এই অধ্যক্ষ কোনো উদ্যোগ নিতে পারছেন না। তিনি আরও বলেন, গত ডিসেম্বরে এই ক্যাম্পাসে একটি অনুষ্ঠানে এসেছিলেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। তাঁর কাছে সবাই ছাত্রাবাস খোলার দাবি জানালে তিনি বলেছিলেন, তাঁরা ছাত্রাবাস খুলে দেওয়ার পক্ষে। যোগাযোগ করলে সংস্কারের বরাদ্দের জন্য যে সহযোগিতার প্রয়োজন তিনি করবেন।

ইলেকট্রিক্যাল পঞ্চম পর্বের শিক্ষার্থী আল আমিন বলেন, মেসে এক-দেড় হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে একটি ছোট্ট কক্ষে কয়েকজন গাদাগাদি করে থাকতে হয়। ছাত্রাবাস খুলে দেওয়ার জন্য আন্দোলন হচ্ছে, কিন্তু মেরামত না করলে সেখানে ওঠার পরিবেশও নেই।

জানতে চাইলে ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আলী আকবর খান বলেন, ছাত্রাবাসগুলো দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় বৈদ্যুতিক লাইনসহ অনেক কিছু নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক কক্ষের জানালা-দরজা, গ্রিল নেই। এগুলো ঠিক করতেও অনেক টাকা লাগবে। গত বছর এ জন্য ৮ লাখ টাকার বরাদ্দ পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছে, অন্তত ২০ লাখ টাকা ছাড়া এই তিন ছাত্রাবাস ঠিকমতো মেরামত করা যাবে না।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আরও বলেন, মেয়েদের ছাত্রাবাসটি অপেক্ষাকৃত ভালো। কিন্তু ছেলেদের দুটি বেশি নষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, ছাত্রদের নিজ দায়িত্বে মেরামত করে ছাত্রাবাসে উঠতে বললে তাঁরা বলেছেন, কর্তৃপক্ষ মেরামত করে দিক। ওরা (শিক্ষার্থী) বাইরে কত বেশি টাকা খরচ করে থাকছে, কিন্তু ছোটখাটো মেরামতি কাজগুলো নিজেরা করলে ওরা উঠতে পারে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির বেশি হলে স্থানীয়ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে পারে - dainik shiksha তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির বেশি হলে স্থানীয়ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে পারে বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাখাত - dainik shiksha বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাখাত আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054049491882324