৮১০ কোটি টাকার বাজেটে গবেষণায় বরাদ্দ মাত্র ২%

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের কেন্দ্রীয় বাজেট প্রণয়ন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ বাজেটে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালন বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৮১০ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এর মধ্যে গবেষণায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। আর বিশেষ গবেষণায় অনুদান বাবদ রাখা হয়েছে ৯ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে গবেষণা খাতে বরাদ্দ দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের মাত্র ২ শতাংশ ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স কমিটির সভায় এ বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আগামী সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদনের পর সিনেটের বাজেট অধিবেশনে তা পাস করা হবে। শুক্রবার (৩১ মে) বণিক বার্তা পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সাইফ সুজন।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাজেটে গবেষণা খাতে মাত্র ২ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান কাজ হলো গবেষণা। যদিও গবেষণাকাজে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভূমিকা সন্তোষজনক নয়। এমনকি গবেষণায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদানও অতীতের তুলনায় অনেকটাই ম্লান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গবেষণা হলো প্রাণ। অথচ বাজেটে গবেষণায় মাত্র ২ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। প্রতি বছরের ধারাবাহিকতায় এবারো বাজেটের মোট কলেবর বেড়েছে। কিন্তু এর বড় অংশই যাবে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা বাবদ। আবাসন, পরিবহনসহ ছাত্র স্বার্থসংশ্লিষ্ট খাতগুলোয় প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাসহ ছাত্র স্বার্থসংশ্লিষ্ট খাতে বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আগামী বাজেটে আয়ের উৎস হিসেবে দেখানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) অনুদান ও নিজস্ব আয়। ৮১০ কোটি ৪২ লাখ টাকার এ বাজেটে ইউজিসি দেবে ৬৯৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। আর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি বাবদ, ভর্তি ফরম বিক্রি, বেতন-ভাতাদি থেকে কর্তন, সম্পত্তিসহ নিজস্ব খাতগুলো থেকে আয় হবে ৭০ কোটি টাকা। মোট আয় হবে ৭৬৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। সে হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি থাকবে ৪৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এর সঙ্গে বিদায়ী অর্থবছরের ঘাটতির বোঝা তো আছেই।

এদিকে বছর বছর বাজেট বৃদ্ধি ও ঘাটতি মেটাতে নিজস্ব আয় বাড়াতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নিজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল ৪১ কোটি টাকা। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ খাত আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে নিজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল ৬৬ কোটি টাকা। এ বছর সেটি নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০ কোটি টাকা।

ইউজিসি এ বছর বাজেট নির্দেশনায় বলেছে, সরকারি অর্থ ব্যয়ে সবক্ষেত্রে স্বচ্ছতা অবলম্বন করতে হবে। খাতওয়ারি বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যে ব্যয় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। মূল বরাদ্দের বাইরে বিশেষ প্রয়োজন ও ইউজিসির পূর্বানুমোদন ছাড়া কোনো জনবল নিয়োগ করা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের আয় বাজেটে নিজস্ব আয়ের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিক্রির আয়ের ৪০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলে জমা দিতে হবে।

এছাড়া বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, টেলিফোন, পরিবহন ইত্যাদি ব্যয় ব্যবহারকারী শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে আদায় করে সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধ করতে হবে। এসব ক্ষেত্রে কোনো ভর্তুকি দেয়া যাবে না এবং বিলও বকেয়া রাখা যাবে না। ইউজিসির অনুমোদন ব্যতীত কোনো বিভাগ ও ইনস্টিটিউট খোলা যাবে না। বেতন, পেনশন মঞ্জুরি, অন্যান্য মঞ্জুরি ও মূলধন মঞ্জুরি খাতের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ এক খাত থেকে অন্য খাতে স্থানান্তর করা যাবে না। এছাড়া শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আয়করের অর্থ বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে পরিশোধ না করতে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বাজেট প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোপাচার্য (প্রশাসন) ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, বাজেটে গবেষণায় বরাদ্দটা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুলই। গবেষণায় অনুদান বাবদ শিক্ষকরা যে অর্থ পান, তা বেতনের অংশ হিসেবেই দেয়া হয়। তবে মূল বাজেটে বরাদ্দ বাড়লে গবেষণায় ব্যয় বাড়ানো সম্ভব হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে - dainik shiksha কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা - dainik shiksha ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন - dainik shiksha সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল - dainik shiksha ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে - dainik shiksha নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0065560340881348