৯২ শতাংশ আওয়ামী লীগ প্রার্থী কোটিপতি

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক:  দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া আওয়ামী লীগের ২৬৫ প্রার্থীর বার্ষিক গড় আয় ২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। তাদের গড় সম্পদমূল্য সাড়ে ২৮ কোটি টাকার বেশি। আর মোট প্রার্থীর ৯২ দশমিক ৮৩ শতাংশই কোটিপতি বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। গতকাল অনলাইন প্ল্যাটফরম জুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে সুজন।

প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, নির্বাচনে ২৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। স্বতন্ত্রসহ মোট প্রার্থী ১ হাজার ৯৪৫ জন। এরমধ্যে ১৪ জন ২টি করে এবং একজন ৩টি আসনে প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া ১ হাজার ৯৪৫ জনের মোট বার্ষিক আয় ১ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। মোট সম্পদমূল্য ১৩ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি আয় ও সম্পদ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের প্রায় ৫৯ শতাংশের পেশা ব্যবসা।

আওয়ামী লীগের ২৬৫ প্রার্থীর মধ্যে ১৭০ জন (৬৪ দশমিক ১৫ শতাংশ) পেশায় ব্যবসায়ী। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তুলনায় এবার ব্যবসায়ী প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। গত নির্বাচনে ব্যবসায়ী প্রার্থী ছিলেন প্রায় ৫২ শতাংশ। প্রার্থীদের মধ্যে স্নাতকোত্তর পাস ৩২ দশমিক ৪৯ শতাংশ। স্নাতক পাস প্রার্থী ২৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ। প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের মধ্যে ৯ দশমিক ৫১ শতাংশের বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা আছে। প্রার্থীদের মধ্যে ৯১৫ জন (৪৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ) আয়কর দেন। এরমধ্যে লাখ টাকার ওপরে আয়কর দেন ৩৫২ জন।

সুজন বলছে, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন হলেও এই নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ হচ্ছে না। কিন্তু নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীরা ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগের আহ্বান জানাচ্ছে এবং নির্বাচন বর্জনকারীরা ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার আহ্বান জানানোর কারণে একটি পাল্টাপাল্টি অবস্থা তৈরি হয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বেশকিছু সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। এরমধ্যে আছে- নির্বাচনের পর দ্রুত সরকারের উদ্যোগে সব দলের মধ্যে সংলাপ, রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে সমঝোতায় আসা, নির্বাচনের গেজেট প্রকাশের আগেই হলফনামায় দেয়া তথ্য যাচাই করা এবং ভুল তথ্য দানকারীদের ফল বাতিল করা, নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীন ও দলীয় প্রভাবমুক্ত করা ইত্যাদি।

সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। এ সময় সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ক্ষমতার সঙ্গে জাদুর কাঠি জড়িত। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচন ছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। পরের নির্বাচন একতরফা। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক না। কিন্তু এবারের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলকও না প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলকও না। তিনি আরও বলেন, ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে উভয় দলের প্রার্থীদের গড় আয় কাছাকাছি ছিল। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে ২২৫ শতাংশ বেড়েছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের আয়। এবারের একতরফা নির্বাচনে আরও বেড়েছে।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সুজনের নির্বাহী সদস্য শাহদীন মালিক বলেন, আমাদের রাজনৈতিক দলের নেতাদের কার্যকলাপে মগের মুল্লুকও লজ্জা পাবে। এই নির্বাচন হচ্ছে আওয়ামী লীগ বনাম স্বতন্ত্র লীগের। নির্বাচনে জিতলে অধিকাংশ স্বতন্ত্র প্রার্থীই আওয়ামী লীগে যোগ দেবেন। ফলে আগামী সংসদে ২৮০ জনই সরকারি দলের হলে আশ্চর্য হবো না। গণতন্ত্রের যে ‘গ’ আছে, সেটাও আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে থাকবে না।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করা সাবেক বিচারপতি এম এ মতিন বলেন, জনগণ এখন সংসদ থেকে কিছু আশা করে না। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তো জিতেই গেল। তবে এই নির্বাচন কেউ মেনে নেবে না। আইনের শাসন কতোটুকু হচ্ছে এটা দেখতে হবে। আইনের শাসন তো আমরা এখন আর আশাই করি না। টানেলের শেষে নিশ্চয়ই আলো আসবে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ভালো নির্বাচন হবে, এই আশা করি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সরকার পরিচালনায় ভুলত্রুটি থাকলে ধরিয়ে দিন, সম্পাদকদের ড. ইউনূস - dainik shiksha সরকার পরিচালনায় ভুলত্রুটি থাকলে ধরিয়ে দিন, সম্পাদকদের ড. ইউনূস এইচএসসি ফল তৈরি: পরীক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়েছে বোর্ড - dainik shiksha এইচএসসি ফল তৈরি: পরীক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়েছে বোর্ড শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য ও হেনস্তা নয়: শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য ও হেনস্তা নয়: শিক্ষা উপদেষ্টা স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের আগস্ট মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের আগস্ট মাসের এমপিওর চেক ছাড় এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ডিজি হলেন - dainik shiksha এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ডিজি হলেন ছাত্রী হয়রানির অভিযোগ, উত্তরা ইউনিভার্সিটি উত্তপ্ত - dainik shiksha ছাত্রী হয়রানির অভিযোগ, উত্তরা ইউনিভার্সিটি উত্তপ্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের হাত ভাঙলেন বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক - dainik shiksha ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের হাত ভাঙলেন বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক সাংবাদিক নিপীড়নের আইনগুলো এখনই বাদ দেয়ার প্রস্তাব - dainik shiksha সাংবাদিক নিপীড়নের আইনগুলো এখনই বাদ দেয়ার প্রস্তাব মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব দিতে আবেদন আহ্বান - dainik shiksha মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব দিতে আবেদন আহ্বান শিরীন শারমিনের পদত্যাগে স্পিকার পদে কি শূন্যতা তৈরি হলো - dainik shiksha শিরীন শারমিনের পদত্যাগে স্পিকার পদে কি শূন্যতা তৈরি হলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028550624847412