৯ বাক্যে দশ বানান ভুল, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি |

বানান ভুলের দায়ে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস আরা বেগমের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপপরিচালকের দপ্তরে এই বিভাগীয় মামলা রুজু হয়। 

জানা যায়, নামমাত্র বেতনে কোনো প্রকার নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়াই পটিয়ার প্রত্যন্ত এলাকা লাওয়ারখীল বেসরকারি বানেশ্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ফেরদৌস আরা বেগম শিক্ষকতা শুরু করেন। একসময় এই বিদ্যালয়ে ১০-১৫ জন ছাত্রছাত্রী ছিল। 

হিলচিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস আরা বেগম। ছবি : সংগৃহীত

তখন ৫০০-১০০০ টাকা বেতনে কেউ ১-২ বছরের বেশি এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন না। একটানা ওই স্কুলে থেকে যাওয়ায় কয়েকবার পরীক্ষা দিয়ে কোনো রকমে এইচএসসি পাস করা ফেরদৌস আরা বেগম হয়ে যান এই বিদ্যালয়ের পুরাতন শিক্ষক। সেই সুবাদে কোনো পরীক্ষা ছাড়াই তিনি বনে যান বানেশ্বর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া সরকার ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যে যে অবস্থায় আছে তাকে সে অবস্থায় সরকারীকরণ করলে কপাল খুলে যায় ফেরদৌস আরা বেগমের।

সরকারি প্রধান শিক্ষক হওয়ার পর তিনি রশিদাবাদস্থ এক আওয়ামী লীগ নেতার মাধ্যমে তদবির করে বদলি হয়ে চলে আসেন নিজ গ্রামের হিলচিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

হিলচিয়া স্কুলে যোগদানের পর থেকে তার বিরুদ্ধে একাডেমিক অদক্ষতা, আর্থিক অনিয়ম, অসদাচরণসহ একাধিক অভিযোগ পাওয়া যায়। ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে পাঠদানে অক্ষম ফেরদৌস আরা বেগমের নিজের হাতের ৯ লাইনের একটি বাংলা লেখায় প্রায় ১০টি বানান ভুল করেন। পটিয়ার এমপি ও সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।

বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় বাড়ি হওয়ায় তার স্বামী নুরুল ইসলামের সাথে তিনি সামাজিক বিভিন্ন গ্রুপিংয়ের সাথে নিজেও জড়িয়ে পড়েন। মাঠের মাঝখানে খুঁটি গেড়ে স্কুলের সম্পত্তি বেদখল করার কাজে তিনি তার স্বামীকে সহায়তা করেন। এই ঘটনায় তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু আহমদ তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের ছাদ ঢালাই কাজের দিন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, সভাপতিসহ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সব সদস্য উপস্থিত থাকলেও তিনি উপস্থিত ছিলেন না। সেদিনই উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বিদ্যালয়ের একটি খাতায় বিষয়টি লিপিবদ্ধ করেন।

স্বামীকে সভাপতি করে পছন্দমতো কমিটি গঠনের জন্য তিনি অপতৎপরতা চালান।

প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস আরা বেগমের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিনকে প্রধান করে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি যাচাই-বাছাই করে প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস আরা বেগমের বিরুদ্ধে বিভাগীয় উপপরিচালক ড. মো. শফিকুল ইসলামের দপ্তরে এই বিভাগীয় মামলা রুজু হয়। গত ২৭ আগস্ট তার বিরুদ্ধে রুজুকৃত বিভাগীয় মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে তাকে ব্যক্তিগত শুনানি করার সুযোগ দেয়া হয়।

ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম মিন্টু বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের একটা নাম-ডাক ছিল। ফেরদৌস আরা বেগম আসার পর থেকে স্কুলের লেখাপড়ার মান তলানিতে নেমে এসেছে। যিনি শিক্ষার্থীদের গণিত ও ইংরেজি পড়াতে পারেন না, এমনকি যার বাংলা বানানে অহরহ ভুল থাকে, তার কাছ থেকে ভালো কিছু আসা করা যায় না।’

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস আরা বেগম তার বিরুদ্ধে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনকে মিথ্যা দাবি করে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের খেয়েদেয়ে কোনো কাজ নেই। আমাদের বিরুদ্ধে কোনো কিছু পেলেই দৌড়ে স্কুলে চলে আসে।’

পটিয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) দেবাশীষ বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগের তদন্তে সত্যতা পেয়েছি। আমাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু হয়।’

চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস আরা বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ-পরবর্তী একটি তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে রুজুকৃত বিভাগীয় মামলার শুনানি কার্যক্রম সমাপ্ত হয়েছে। আশা করি, ১০ দিনের মধ্যে রায় দেয়া হবে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023679733276367