‘এখানে তো গণতন্ত্রের গ-ও নেই’ বলা খুলনা বিভাগীয় কমিশনার জিল্লুর রহমান চৌধুরীকে বদলি করা হয়েছে। তাঁকে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার তাঁকে বদলির আদেশ দেয়। তবে এই বক্তব্য, নাকি অন্য কোনো কারণে তাঁকে বদলি করা হয়েছে– সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাত্র ৪ দিন আগে তাঁকে বদলি করায় এ নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
এদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হেলাল মাহমুদ শরিফকে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। নবনিযুক্ত বিভাগীয় কমিশনার হেলাল মাহমুদ সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের জামাতা।
গত ৩০ মে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন। ওই সভায় স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এসএম শফিকুর রহমান মুশফিক বলেন, নগরীর মোড়ে মোড়ে নামে-বেনামে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের কার্যালয়ে রাতে অসংখ্য মানুষ থাকে। এ কার্যালয়গুলো বন্ধ করা প্রয়োজন। তখন মিলনায়তনে থাকা ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকরা ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। এর পরও মুশফিক কথা চালিয়ে যাওয়ার সময় ‘কথা সত্য না; মিথ্যা, মিথ্যা’ বলে চিৎকার করতে থাকেন তাঁরা। তাঁদের চেঁচামেচিতে মুশফিকের অভিযোগ অন্যরা ঠিকমতো শুনতে পাচ্ছিলেন না। তখন মুশফিক বলছিলেন, ‘আমাকে বলতে দিন, প্লিজ।’
এ সময় মতবিনিময় সভার সভাপতি খুলনা বিভাগীয় কমিশনার জিল্লুর রহমান চেয়ার ছেড়ে মাইকের সামনে যান। তিনি চিৎকারকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘পেশিশক্তি শো করছেন? আমি তো তা-ই মনে করি। বেশি বাড়বেন না। শোনেন, আইন হাতে নেবেন না। তিনি (স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী) কথা বলছেন, তাঁকে কথা বলতে দেন। নির্বাচন কমিশন সচিবের অনুমতি নিয়ে তিনি কথা বলছেন; প্রধান নির্বাচন কমিশনারের উপস্থিতিতে। আপনি তাঁকে ভুয়া ডাকবেন কেন? এখানে তো গণতন্ত্রের গ-ও নেই। সাবধান করে দিলাম আপনাকে। আমি আপনার ছবি তুলেছি। এখানে রাষ্ট্র বসে আছে। আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করি, যে যাঁর কথা বলেন, শালীনতার সঙ্গে বলেন, নিয়মের সঙ্গে বলেন। নিজেকে মহামহিম মনে করবেন না।’
বিভাগীয় কমিশনার আরও বলেন, ‘এখানে পানি ঘোলা করার চেষ্টা করবেন না। এটা আমরা করতে দেব না। কেউ বেশি বাড়াবাড়ি করলে নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। নির্বাচনের সুন্দর একটি পরিবেশ আছে খুলনায়। নির্বাচনের পরিবেশকে অশান্ত করবেন না। সুন্দর একটি নির্বাচন হবে এখানে।’
এ ব্যাপারে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মুশফিক বলেন, ‘বদলি অর্ডার আগেই হয়েছে। উনি তো সচিব হচ্ছেন। সেদিন সভায় বিভাগীয় কমিশনার যেসব কথা বলেছিলেন, তার কারণে তাঁকে বদলি করা হয়নি।’
তবে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু গতকাল নগরীর বান্দা বাজার এলাকায় গণসংযোগকালে সাংবাদিকদের বলেন, আমি শুনেছি, বিভাগীয় কমিশনারকে বদলি করা হয়েছে। এটা দুঃখজনক ব্যাপার। নির্বাচনের সময় প্রশাসনে রদবদল করা উচিত নয়।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য জিল্লুর রহমান চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের আগে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বদলি করতে গেলে নির্বাচন কমিশনের সম্মতি নিতে হয়। নির্বাচন কমিশনের সম্মতি নিয়েই খুলনা বিভাগীয় কমিশনারকে বদলি করা হয়েছে। নতুন বিভাগীয় কমিশনার আগামী রোববার যোগদান করতে পারেন।