‘ঘুরতে যেতে’ রাজি না হওয়ায় শিক্ষিকাকে হয়রানি, শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাকে তলব

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ঢাকার শ্যামপুর সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার মো. শাহেদ আলীর বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটির এক শিক্ষিকাকে হয়রানির  অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী শিক্ষিকার দাবি, তাকে দেশে ও দেশের বাইরে ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন অধ্যক্ষ। কিন্তু তাতে রাজি না হওয়া এক পর্যায়ে হয়রানি শুরু করেছেন। এ অভিযোগে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে শিক্ষা প্রশাসন। এসব অভিযোগের বিষয়ে ব্যক্তিগত শুনানিতে অংশ নিতে আগামী ২৭ জুলাই অভিযুক্ত অধ্যক্ষকে তলব করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে তার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। বিভাগ সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

জানা গেছে, শ্যামপুর সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. শাহেদ আলীর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও মানসিকভাগে হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন প্রতিষ্ঠানটির আরবি বিষয়ের এক শিক্ষিকা। গত ফেব্রুয়ারিতে অভিযোগটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি। 

আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’

অভিযোগে ভুক্তভোগী শিক্ষিকা জানিয়েছেন, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি প্রতিষ্ঠানটিতে যোগদান করেন। এরপর থেকে অধ্যক্ষ তাকে হয়রানি করছেন। প্রথমে অধ্যক্ষ শিক্ষিকাকে দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণের প্রস্তাব দেন অধ্যক্ষ। কিন্তু শিক্ষিকা তা কৌশলে এড়িয়ে যান। অধ্যক্ষের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় শিক্ষিকাকে প্রশাসনিকভাবে চাপের মুখে রাখার চেষ্টা করতে থাকেন অধ্যক্ষ। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষিকা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব পালনেও তাকে চাপ দেয়া হতে থাকে। শিক্ষিকা ছুটি চাইলে তিনি ছুটিও দেন নি। পরে তাকে সিঙ্গাপুরে কোন হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে সাথে যাওয়ার প্রস্তাব দেন অধ্যক্ষ। এসব ঘটনায় মানসিকভাবে আরও ভেঙে পড়েন শিক্ষিকা। অধ্যক্ষের অনুসারীরা শিক্ষিকাকে প্রশাসনিক চাপ এড়াতে মো. শাহেদ আলীর মনোরঞ্জনের পরামর্শও দিয়েছেন। 

শিক্ষিকা আরও অভিযোগ করেন, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে ৩ নভেম্বর ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ কারণে অধ্যক্ষ তাকে শোকজ করেন। শিক্ষিকা জাবাব দিলেও তা প্রত্যাহার করে অধ্যক্ষের মনমত জবাব দাখিল করতে বলা হয়। প্রতিষ্ঠানের একজন প্রভাষক এসব জটিলতা এড়াতে অধ্যক্ষের ‘ডাকে সাড়া’ দিতে শিক্ষিকাকে পরামর্শ দেন। তা ছাড়া শিক্ষিকার এসিআররে নম্বর কম দেয়া, চাকরিচ্যুত করাসহ নানা হুমকি দেয়া হয়। 

শিক্ষিকা অভিযোগে আরও জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানটি সরকারিকরণের বিভিন্নধাপে তথ্য না দিয়ে শিক্ষিকাকে হয়রানি করা হয়েছে। সব শিক্ষক কর্মচারীর তথ্য নেয়া হলেও তাকে কিছুই জানানো হয়নি। এসব অভিযোগের কথা শিক্ষা সচিবকে জানিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষিকার ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন। 

জানা গেছে, শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা মো. শাহেদ আলী ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের  সেপ্টেম্বর মাসে এই প্রতিষ্ঠানটিতে যোগদান করেন। জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৭ তে শ্যামপুর, কদমতলী, গেন্ডারিয়া থানার প্রতিযোগিতায় শ্যামপুর মডেল স্কুল এন্ড কলেজ এবং কলেজের অধ্যক্ষ মো. শাহেদ আলী সেরা অধ্যক্ষও নির্বাচিত হয়েছিলেন।   

মন্ত্রণালয় সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানায়, সেরা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আসা শিক্ষিকাকে হয়রানির অভিযোগটি আমলে নিয়েছে মন্ত্রণালয়। অভিযোগটি তদন্ত শুরু হয়েছে। গত ১ এপ্রিল অভিযোগটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন উপপরিচালককে। এবার অভিযোগের বিষয়ে ব্যক্তিগত শুনানিতে অভিযুক্ত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা মো. শাহেদ আলীকে তলব করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। আগামী ২৭ জুলাই তার ব্যক্তিগত শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। শুনানিতে নিজ বক্তব্য সমর্থনে যাবতীয় তথ্য উপাত্ত নিয়ে মন্ত্রণালয়ে উপস্থিত থাকতে অধ্যক্ষকে বলা হয়েছে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে - dainik shiksha কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা - dainik shiksha ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন - dainik shiksha সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল - dainik shiksha ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে - dainik shiksha নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0047299861907959