‘চলে যাওয়ার ৬ মাস পর বুঝবেন কেমন ছিলাম’

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আলোচিত-সমালোচিত এক নাম অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ। গতকাল  (২৭ মার্চ) বিদায়ী এই উপাচার্যের শেষ কর্মদিবস ছিলো।

গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ কার্যালয়ে গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদায়ী সব ভিসিকেই পালাতে হয়েছে। আমি সঠিক ছিলাম বলেই শেষ দিনও অফিস করছি। একসময় সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হবে। আমাকে জড়িয়ে যেসব উল্টাপাল্টা কথাবার্তা বলা হচ্ছে সেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। আমি বিশ্বাস করি, আমি চলে যাওয়ার ৬ মাস পর আপনারা বুঝতে পারবেন আমি কেমন ছিলাম এবং আমি কী কী করেছি। এমনকি যারা এখন আমার নামে উল্টাপাল্টা কথাবার্তা বলছে, তারা একসময় মিথ্যা প্রমাণিত হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভিসি কাদরী (অধ্যাপক ডা. কাদরী) স্যারকে চেয়ার ভেঙে বের করে দিয়েছিল মেডিক্যাল অফিসাররা। তাদের অনেকেই এখনও বিএসএমএমইউয়ে আছে। এই জায়গাটা থেকে কেউই শান্তিতে এখন পর্যন্ত বের হয়ে যেতে পারেননি। যেকোনো ভিসির শেষ সময়ে এখানে এ রকম ঘটনা ঘটে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সেই কাদরী স্যার থেকে শুরু। সর্বশেষ কনক বাবুও (অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া) বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ব্লক দিয়ে পালিয়েছিলেন। এর আগে কামরুল স্যার (অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান) প্যাথলজি থেকে সোজা বের হয়ে গিয়েছিলেন। আমি কিন্তু শেষ দিনে এসেও অফিস করছি, যা অন্য কোনো ভিসি পারেননি। সুতরাং আমি কোনো কিছুতেই ভীত নই।’

অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ভালো ভালো কাজ করেছি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ক্যাডাভেরিক লিভার ট্রান্সপ্লান্ট, জোড়া শিশু আলাদা করার কাজ হয়, এগুলো আমি করেছি। এখানে এসে শুরুতেই আমি জার্নালকে ইনডেক্স করেছি, ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি করেছি, পোস্ট গ্রাজুয়েট চিকিৎসকের সংখ্যা যেন আরও বাড়ে সে ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু আমি রোবটিক ট্রিটমেন্টটা এখনও আনতে পারিনি। বায়ো ব্যাংকটাও আনার চেষ্টা করেছি, পারিনি। আমি বিশ্ববিদ্যালয় গেটের কাজ শুরু করেছি। আমি বিশ্ববিদ্যালয়কে ইন্টারকানেকটেড করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারিনি। গবেষণায় বিএসএমএমইউর বাজেট ছিল ৪ কোটি টাকা, সেটিকে আমি ৩২ কোটিতে উন্নীত করেছি। আমি এখানে অনেক কাজ করেছি, যা অতীতের কেউ করতে পারেনি।’

বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমার তেমন কোনো আক্ষেপ নেই। তবে কিছু মানুষ এত তাড়াতাড়ি চোখ উল্টে ফেলতে পারে তা আমার জানা ছিল না। সত্যি বলতে কী, দেশের জন্য যারা ভালো কাজ করে তাদের শত্রুর সংখ্যা বেড়ে যায়। এটাই হলো মূল কথা। প্রধানমন্ত্রীর মতো ভালো কাজ তো এই পৃথিবীতে আর কেউ করে না, তারপরও ওনার বিরুদ্ধে শত্রুতার শেষ নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ভালো ভালো কাজ করেছি। বেশি ভালো কাজ করলে অবশ্য কারো কারো কাছে হিংসার পাত্র হতে হয়। মিডিয়াতে আমার যেসব বক্তব্য এসেছে, সেগুলো নিয়ে অনেকে আমার ওপর খ্যাপা। তাদের সমস্যা হলো, আমি এত ভালো কথা বলি কেন? সবকিছু নিয়েই আমার ওপর তাদের ক্ষোভ। আমার আক্ষেপ হলো, এই যে আমি যাদের এত উপকার করলাম, তারা হঠাৎ করে চোখ উল্টে ফেলল। নতুন ভিসিকে ফুল দিতে গিয়ে তারা নতুন একটা গ্রুপ তৈরি করে ফেলল। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’

নতুন ভিসির প্রতি পরামর্শ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি যে কাজগুলো শেষ করতে পারিনি, সেগুলো যেন তিনি দায়িত্ব নিয়ে করেন। বিশেষ করে রোবট, বায়ো ব্যাংক করতে চেয়েছিলাম, একটা প্রেস করতে চেয়েছিলাম, ইন্টারকানেকশন করতে চেয়েছিলাম-- এগুলো যদি তিনি করতে পারেন তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাবে।’

নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন বলেন, ‘সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এখানে যারা সামনে উপস্থিত আছেন, তাদের একটা লোকও বলতে পারবে না তাদের থেকে কোনো টাকা নিয়েছি। আমার সময় যত নিয়োগ ও প্রমোশন হয়েছে, একটা লোকও বলতে পারবে না তাদের থেকে আমি টাকা নিয়েছি। যারা বলছে আমি টাকা নিয়ে চাকরি-প্রমোশন দিয়েছি, তারা নিজেরাই প্রমোশন নিয়েছে। তাদের বউ, তাদের ভাই, তাদের পরিবারের সদস্যরা প্রমোশন নিয়েছে। জাকির সুমন নামে একজন তো অভিযোগ করে বলছে, গত তিন বছরের সকল নিয়োগ বাদ দিয়ে দিতে। আমার কথা হলো, সে নিজেও তো আমার হাতে নিয়োগ পেয়েছে। তাকেই বরং জিজ্ঞেস করুন সে কত টাকা দিয়েছে।’

সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি সরকারের কাছে জনবল চেয়েছিলাম কিন্তু সরকার দেয়নি। সরকারের কাছে টাকা চেয়েছি, দেওয়া হয়নি। অর্থ না পেলে কীভাবে আমি কাজ করব? আমি এখন আমার বিএসএমএমইউয়ের ডাক্তারদের দিয়ে ওখানে কাজ করাচ্ছি। যখনই আমি জনবল পেয়ে যাব, তখনই আমি ফুল ফেজে কার্যক্রম শুরু করে দিতে পারব। যেহেতু টাকা পাইনি, যেহেতু জনবল নিয়োগ দিতে পারিনি, সে কারণেই আমি হাসপাতালটি শতভাগ চালু করতে পারিনি। কিছুদিনের মধ্যে সরকার যদি আমাকে অর্থ এবং জনবল দেয়, তাহলে শতভাগ কার্যক্রম আমি চালাতে পারব।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও - dainik shiksha ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল - dainik shiksha বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক - dainik shiksha এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028290748596191