‘দেশে এমন শিক্ষক আরও কোন ছাত্রীর জীবনে না আসুক’

পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি |

চলতে-ফিরতে, উঠতে-বসতে সারাক্ষণ শিক্ষকের দ্বারা ধর্ষিত ও নির্যাতন হওয়ার বিষয়টি বিষিয়ে তুলছিল মাশফি সুমাইয়ার জীবন। নিজের সঙ্গে নিজে লড়াই করে, শেষ পর্যন্ত না পেরে অবশেষে আজ শনিবার আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তিনি। 

আত্মহত্যা করার আগে তিনি লিখে গেছেন, ‘দেশে এমন শিক্ষক আরও কোন ছাত্রীর জীবনে না আসুক। সবাই আমায় মাফ করবেন।’ 

এলাকাবাসী ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, মাশফি সুমাইয়ার বাড়ি পাকুন্দিয়া উপজেলার ষাইটকাহন গ্রামে। তাঁর বাবার নাম শামীম আহমেদ। বাড়িতে থেকেই কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজে পড়াশোনা করতেন তিনি। ওই কলেজে গণিত বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন সুমাইয়া। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে উপজেলার কালিয়াচাপড়া চিনিকল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন তিনি। বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় ওই বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন গণিতের এক শিক্ষক রাসেল আহমেদের কাছে প্রাইভেট পড়তো সুমাইয়া। রাসেল আহমেদ কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার নোয়াবাদ গ্রামের রহমত আলীর ছেলে। প্রাইভেট পড়ার সময় ওই শিক্ষকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে সুমাইয়ার। বিয়ের প্রতিশ্রুতি পাওয়ায় এক পর্যায়ে দৈহিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তারা। কিছুদিন আগে রাসেল গোপনে অন্য মেয়েকে বিয়ে করেন। এমন খবর জানতে পেরে হতাশায় ভুগতে থাকে সুমাইয়া। একপর্যায়ে সইতে না পেরে আজ শনিবার সকাল ৭টার দিকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। খবর পেয়ে সকাল ১০টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর আধুনিক হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।

আত্মহত্যা করার আগে সুমাইয়ার লেখা আট লাইনের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস উদ্ধার করে পুলিশ। এতে তিনি লিখেছেন, ‘বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিন বছর ধরে ছাত্রীকে ধর্ষণের পরে অন্য মেয়েকে বিয়ে করে ছাত্রীকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করায় আমার প্রিয় শিক্ষক। আর সেই ভাগ্যবান ছাত্রী আমি নিজে। আল্লাহ আমায় মাফ করো।’ 

সুমাইয়া আরও লিখেছে, ‘দেশে এমন শিক্ষক আরও কোন ছাত্রীর জীবনে না আসুক। সবাই আমায় মাফ করবেন, সদ্য এসএসসি পাস করা একটা মেয়ে বিয়ের মানে-এসব জানতামই না। ভদ্র স্যারকে বিশ্বাস করতাম, যা বলতো তাই শোনতাম। যাই হোক, ভাল থাক সে....বিদায়’।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিক বার চেষ্টা করেও শিক্ষক রাসেল আহমেদ এর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

পাকুন্দিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শ্যামল মিয়া বলেন, আজ শনিবার সকাল ৭টার দিকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ওই কলেজছাত্রী আত্মহত্যা করেন। ফেসবুকের স্ট্যাটাসটি তাঁর এক আত্মীয়ের নজরে পরার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রীর পরিবারকে জানানো হয়। পরে পরিবারের লোকজন ঘরের দরজা ভেঙে ঘরের ভিতরের আড়ার সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় সুমাইয়াকে দেখতে পান। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। আত্মহত্যার আগে ওই শিক্ষার্থীর লেখা ফেসবুক স্ট্যাটাসটি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এদিকে বিকেল ৪টার দিকে এলাকাবাসীর ব্যানারে উপজেলার পুলেরঘাট বাজারে অভিযুক্ত রাসেল আহমেদকে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। মানববন্ধনে অভিযুক্ত রাসেল আহমেদকে অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান এলাকাবাসী।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই - dainik shiksha একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক - dainik shiksha শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক সাড়ে ৪ মাসে ১৮৮ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয়কে দায়ী করছেন - dainik shiksha সাড়ে ৪ মাসে ১৮৮ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয়কে দায়ী করছেন শতভাগ ফেল স্কুল-মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উদ্যোগ - dainik shiksha শতভাগ ফেল স্কুল-মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উদ্যোগ দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত শিক্ষা কর্মকর্তা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শ্রীপুরে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের প্রার্থিতা বাতিল - dainik shiksha শ্রীপুরে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের প্রার্থিতা বাতিল এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বিএনপি-জামায়াত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দেয় : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha বিএনপি-জামায়াত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দেয় : প্রধানমন্ত্রী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041100978851318