সরকার দেশে ‘ফেরাউনের রাজত্ব’ কায়েম করেছে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেড় দশকের রাজনৈতিক সংকট এখন এক চূড়ান্ত পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। জনগণই বাংলাদেশের ত্রাণকর্তা।
শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, দেশ এক ভয়ঙ্কর ক্রান্তিকাল অতিবাহিত করছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগোষ্ঠীই এখন শেখ হাসিনার বুলেটের টার্গেট। মূলতঃ বাংলাদেশে গণতন্ত্র এখন মৃত। বারবার গণতন্ত্রকে হত্যা করাই আওয়ামী লীগের নিজস্ব শৈলী। তবে একতরফা নির্বাচনকে প্রতিহত করতে জনগণ প্রাণ হাতে নিয়ে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। জনগণের ক্ষমতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলন সব স্বৈরাচারীর জন্য হবে সতর্কবার্তা। দেড় দশকের রাজনৈতিক সংকট এখন এক চূড়ান্ত পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। জনগণই বাংলাদেশের ত্রাণকর্তা।
রিজভী বলেন, জড়িমাগ্রস্থ সমাজ গড়ে তোলার চেষ্টায় শেখ হাসিনা আওয়ামী ফ্যাসিজম প্রতিষ্ঠার একটি ছক ও বিন্যাস ধরেই এগুচ্ছেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি তোলা মাত্রই রক্ত ঝরানো হচ্ছে গণতন্ত্রকামী মানুষদের। জনগণকে দমানোর জন্যই খালেদা জিয়াসহ হাজার নেতাকর্মীকে বন্দি করেছেন শেখ হাসিনা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শাহজাহার ওমর, মোহাম্মদ শাহজাহানসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি যে ফেরাউনের রাজত্ব কায়েম করেছেন এটাই তার প্রমাণ, তার পতন হবেই।
তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থ রক্ষা না করে শেখ হাসিনার কাছেই আত্মসমর্পণ করেছেন। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আজকে যে ধারাবাহিক আন্দোলন এবং এই আন্দোলন করতে গিয়ে অসংখ্য নেতাকর্মীর যে আত্মদান, রক্তদান এটাকে উপেক্ষা করে কমিশন একতরফাভাবে তফসিল ঘোষণা করেছে। দেশের সুশীল ও নাগরিক সমাজ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বিদেশি কূটনীতিকদের আবেদন অগ্রাহ্য করে তিনি শুধু একনায়ক, গণতন্ত্রবিরোধী ও ভোটারবিহীন সরকারপ্রধানের কথা শুনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন। সিইসি যখন তফসিল ঘোষণা করলেন তখন ভোটের সময়টাও বলে দেওয়া দরকার ছিল যে, সেটা নিশিরাতে হবে নাকি দিনের বেলা হবে নাকি ভোর বেলা হবে, এটা বলে দিতেন কখন হবে।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগকে এখন শনির দশায় পেয়েছে। জনসমর্থন শূন্যের কোঠায় থাকায় ওরা শুধু ক্ষমতার নেশায় বুঁদ হয়ে শুরু করেছে রক্তাক্ত তাণ্ডব। বিএনপি নেতা-কর্মীরা পাইকারিহারে গ্রেফতারের শিকার। তাদের ধরতে না পারলে গ্রেফতার হচ্ছেন বাবা, শ্বশুর, ছোট ভাই এমনকি বাড়ির মেয়েরা পর্যন্ত। যেহেতু আওয়ামী ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তরুণরা সামনের সারিতে সেহেতু তরুণদের ওপর চলছে মরণঘাতী সহিংসতা। সশস্ত্র আওয়ামী লীগ ও পুলিশ বিরোধীদের বাসার গেট, তালা ও জানালা ভেঙে ঘরে ঢুকছে। তল্লাশির নামে পুলিশ গ্রামের পর গ্রাম বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়ির সব ঘর তছনছ করে দিচ্ছে। বাবার মৃত্যুতে জামিন মেলেনি কারাগারে আটক ছাত্রদল নেতার। ছাত্রদল নেতাকে না পেয়ে বাবাকে হত্যা করেছে আওয়ামী ক্যাডাররা। প্রতিদিনের চিত্র এটি। প্রতিদিনে আওয়ামী নৃশংসতার ছবি ও সংবাদ সংবাদপত্রের পাতায় অনেক সেন্সরশিপ, অনেক চাপের পরেও প্রকাশিত হচ্ছে।
রিজভী উল্লেখ করেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে মোট গ্রেফতার ৩৯৫ জনের অধিক, মোট মামলা ৮টি, মোট আসামি ১০৬৫ জনের অধিক, মোট আহত ১৫ জনের অধিক নেতাকর্মী এবং মৃত্যু একজনের। ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের ৪-৫ দিন পূর্ব থেকে আজ পর্যন্ত মোট গ্রেফতার ১২ হাজার ৯০০ জনের অধিক নেতাকর্মী, মোট মামলা ২৮৯টির অধিক, মোট আহত চার হাজার ১২১ জনের অধিক নেতা-কর্মী এবং মৃত্যু ১৪ জনের (সাংবাদিক একজন)। তাছাড়া ১৮টি মিথ্যা মামলায় নয়জনের মৃত্যুদণ্ড এবং প্রায় ১৩৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।