‘ধান কাটছিলাম, স্যার বললেন আমি এ প্লাস পেয়েছি’

নীলফামারী প্রতিনিধি |

'আমি জানি না আজ রেজাল্ট হয়েছে। বাবার সাথে অন্যের জমিতে দিন মজুরের কাজ করতে গিয়ে দুপুরে হেড স্যারের ফোনে জানতে পারলাম আমি এ প্লাস পেয়েছি। আমার তো পড়ালেখা বন্ধ হয়েই গিয়েছিল। তারপর আমাদের হেড স্যার আমার বাবাকে ডেকে স্কুল হতে আমার পড়ালেখার যাবতীয় দায়িত্বের ভার নেন। এরপর আমি আবারো স্কুলমুখী হই। যার ফসল আজকের এসএসসির রেজাল্ট'। 

কথাগুলো বলছিল নীলফামারীর জলঢাকা আলহাজ্ব মোবারক হোসেন অনির্বান বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের রবিবার প্রকাশিত ফলাফলে এ প্লাস প্রাপ্ত শিক্ষার্থী জগত চন্দ্র রায়।

জগত চন্দ্রের বাবা চাটি বর্মন উপস্থিত সংবাদকর্মীদের নিকট বলেন, অভাবের কারণে আমি কখনও স্কুলের মুখ দেখি নাই। আমার দুইজন ছেলে সন্তান। বড় ছেলে রতন চন্দ্র তারও পড়ালেখা করার সুযোগ হয় নাই। যদি স্কুলের হেড মাস্টার রোকন চৌধুরী স্যার ছেলেটির দায়িত্ব না নিতেন তাহলে অনেক আগেই তার লেখাপড়ার আশা শেষ হয়ে যেত। বাড়ি থেকে আসার পথে জগতকে বলেছিলাম আমার তো সাধ্য নাই যদি কখনও তোর কেউ পড়ালেখার দায়িত্ব নেয় তাহলে তুই ভবিষ্যতে কি হতে চাস রে বাবা? সে আমাকে বলেছে ডাক্তার হবে।

এ সময় জগত চন্দ্রের মা রতনা রানী বলেন, পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি। তারপর আমার আর পড়া হয়নি অভাবের কারণে। আমরা গরিব মানুষ। আমার সন্তানের পাশে যদি কেউ না দাঁড়ায় তাহলে এই পড়া তার তার শেষ পড়া হবে। তাই ছেলেটা যেন তার ডাক্তার হবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারে এজন্য সবার সহযোগিতা চাই। 

আলহাজ্ব মোবারক হোসেন অনির্বান বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক শাহ মো. রোকনুজ্জামান রোকন চৌধুরী বলেন, দিনাজপুর শিক্ষা বোডের অধীন এই প্রতিষ্ঠান হতে ১১২ জন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। ৮২ জন পাস করেছে। পাশের হার ৭৫%। প্রতিষ্ঠানটিতে যেসব শিক্ষার্থী আছে তারা অধিকাংশই গরিব ঘরের। আর জগত এমন গরিব ঘরের যে কিনা বাবা-মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট এলাকায় পরীক্ষা শেষে দিন মজুরের কাজ করতে গিয়েছিল। আজও তাকে যখন রেজাল্টের কথা অন্যের মোবাইল ফোনে জানাই তখনও সে দিনমজুর হিসেবে মানুষের ধান কাটছে। এমন মেধাবীদের পাশে থাকা সহযোগিতা করা সবার নৈতিক দায়িত্ব বলে আমি মনে করি।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব আমজাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, বিজ্ঞান বিভাগ হতে এবার এসএসসি ফলাফলে জগত চন্দ্র নামে ছেলেটি এ প্লাস পেয়েছে। সে তার স্বপ্ন পূরণে যেন এগিয়ে যেতে পারে। দেশের সেবা করতে পারে। সেজন্য ছেলেটি পাশে এগিয়ে আসতে সবার আন্তরিকতা ও সহযোগিতা কামনা করছি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা চঞ্চল কুমার ভৌমিক বলেন, তার স্বপ্ন পূরণে আমাদের ঘাটতি থাকবে না। পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে আহ্বান করছি। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025238990783691