‘পাওনা টাকা চাওয়ায়’ বাল্যবন্ধুর হাতে প্রাণ গেল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের

নিজস্ব প্রতিবেদক |

রাজধানীর হাতিরঝিল থেকে দুদিন আগে মৃত উদ্ধার চট্টগ্রামের বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আজিজুল ইসলাম মেহেদীকে পাওনা টাকা চাওয়ায় তারই এক বাল্যবন্ধু হত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এঘটনায় চারজনকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তারের পর তেজগাঁও বিভাগের (শিল্পাঞ্চল) অতিরিক্ত উপ কমিশনার হাফিজ আল ফারুক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

এরা হলেন- মেহেদীর বাল্যবন্ধু সন্দ্বীপের বাউনিয়া গ্রামের আহসান উল্লাহ (৩০), আলাউদ্দীন (৪৬), তামিম ইসলাম (২৭) ও আব্দুর রহিম(৩৫)।

এদের মধ্যে আহসান ও তামিম গুলশানের একটি রেস্তোরাঁর কর্মী; আলাউদ্দিন আহসানের স্ত্রীর পরিচিত, তিনি পরিবহন পুলের গাড়ি কেনাবেচা ছাড়াও পাসপোর্টের দালালি করে থাকেন; আর রহিম মাইক্রোবাসের চালক।

পুলিশ কর্মকর্তা হাফিজ বলেন, তিনটি পাসপোর্ট সংশোধনের কাজ করে দেওয়ার জন্য আহসান বাল্যবন্ধু মেহেদীর কাছ থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিলেও নির্ধারিত সময়ে কাজটা হয়নি।

তখন পাসপোর্ট ও টাকা বার বার ফেরত চেয়েও না পেয়ে মেহেদী তার বন্ধুর রেস্তোরাঁ মালিকের কাছে অভিযোগ করার হমকি দেয়। তখন আহসান ও আলাউদ্দিন তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। প্রথমে আহ্সান নিজ ঘরে মেহেদীকে অচেতন করে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। বাকিরা লাশ হাতিরঝিলে ফেলে দেওয়ায় সহায়তা করে।
সোমবার সকালে হাতিরঝিল লেকের মেরুল বাড্ডা প্রান্ত থেকে এক অজ্ঞাতনামা অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। রশি দিয়ে হাত-পা বাঁধা লাশটি বিছানার চাদর- মশারি এবং পলিথিন দিয়ে মোড়ানো ছিল।

পুরো শরীর বিকৃত হওয়ায় তার তার আঙ্গুলের ছাপ নেওয়াও সম্ভব হয়নি। পরে লাশের একটু দূরে এক টুকরো ছেঁড়া কাগজে থাকা ফোন নম্বরের সূত্র ধরে পরদিন লাশের পরিচয় মেলে।

অতিরিক্ত উপ কমিশনার হাফিজ বলেন, আমেরিকাপ্রবাসীর বাবার একমাত্র সন্তান মেহেদীর (২৪) বাড়ী সন্দ্বীপের বাউনিয়া গ্রামে। কয়েকবছর ধরে মাকে নিয়ে চট্টগ্রামের ফিরোজ শাহ এলাকায় থাকেন। চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের ছাত্র মেহেদীর লেখাপড়া শেষ করে কানাডায় যাওয়ার ইচ্ছা ছিল।

তিনি বলেন, আহসান বেশ কিছুদিন দেশের বাইরে মালয়েশিয়ায় ছিল। গত বছর দেশে ফিরে গুলশানের ‘দ্য গ্রোভ’ নামের একটি রেস্তোরাঁয় ৬৫ হাজার টাকার বেতনে চাকরি নেন। কিন্তু চাকরি শুরুর পরপরই মহামারী শুরু হওয়ায় রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকায় অর্থ সংকটে পড়েন।

“পরে সে তার স্ত্রীর আত্মীয় আলাউদ্দিনের কাছে কিছু টাকা ধার চায়। আলাউদ্দীন টাকা ধার না দিয়ে পাসপোর্টের নাম, বয়স সংশোধন কাজ নিয়ে আসতে বলে আহসানকে। পরে আহসান তার বন্ধু মেহেদীকে ফোন দিয়ে পাসপোর্টের কোনো কাজ থাকলে দিতে বলে। মেহেদী তিনটি পাসপোর্টের নাম বয়স সংশোধনের জন্য ১২ অগাস্ট ঢাকায় আহসানের কাছে আসে। পরে আহসান বন্ধু মেহেদীকে নিয়ে আলাউদ্দিনের কাছে যায়।

“মেহেদীর এই কাজের জন্য তাদেরকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট না দেওয়ায় মেহেদী পাসপোর্ট এবং টাকা ফেরত চায়। কিন্তু তারা শুধু সময় চায়। এক পর্যায়ে পাসপোর্ট ও টাকা ফেরত না দিলে রেস্তোরাঁয় মালিক পক্ষের কাছে অভিযোগ করবে বলে হুমকি দেয় মেহেদী।”
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তখন আহসান ও আলাউদ্দিন তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী পাসপোর্ট দেওয়ার কথা বলে ১০ অক্টোবর মেহেদীকে ঢাকায় আসতে বলেন আহসান। ওই রাতেই মেহেদী ঢাকায় এসে তার খিলক্ষেত উত্তর পাড়ার ভাড়া বাসায় উঠে।

“সেখানে ওই রাতেই মেহেদীর খাবারের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে তাকে খেতে দেয়। এতে সে ঘুমিয়ে পড়লে রাত দেড়টটায় একাই গলা টিপে তাকে হত্যা করে আহসান।

“তাকে হত্যার পর বিছানার চাদর, মশারী দিয়ে মোড়ানোর সময় একই রেস্টুরেন্টের কর্মচারি পাশের রুমের ভাড়াটিয়া তামিম দেখে ফেলে। এক পর্যায়ে তামিমের কাছে লাশ গুম করার বিষয়ে সহযোগিতা চায় আহসান। রাতেই গাড়ি ভাড়া করলেও চালক মালামাল বহনে অস্বীকৃতি জানায়। পরে লাশটি খোটের নীচে রেখে দেয় তারা।”

তিনি বলেন, ওই সময় সিলেটে অবস্থানরত আলাউদ্দিনকে হত্যার কথা ফোন করে জানিয়েছিল আহসান। লাশ সরাতে না পেরে পরদিন তারা রাতে তারা আলাউদ্দিনের কাছে সহযোগিতার চায়। আলাউদ্দিন তার পরিচিত রহিমকে মাইক্রোবাস দিয়ে পাঠায়।

“পরে রাত একটার দিকে চাদর, মশারি, পলিথিনে মোড়ানো লাশটি মাইক্রোবাসে তুলে তারা সায়েদাবাদের দিকে যায়। সেখান পথে তামিম নেমে যায়। আহসান লাশ নিয়ে পরে হাতিরঝিল আসে এবং নিরিবিলি স্থান খুঁজে সেখানে ফেলে যায়।”

তাদের কাছ থেকে তিনটি পাসপোর্ট এবং লাশ বহনের কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটিও জব্দ করেছে পুলিশ।

পুলিশ কর্মকর্তা হাফিজ বলেন, এঘটনায় হাতিরঝিল থানায় দায়ের হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বুধবার চারজনকে আদালতে নেওয়া হয়।

“আসামি আহসান ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারাক্তিমূলক জবানবনদি দিয়েছে। আর আলাউদ্দিন, তামিম ও রহিমকে ২ দিনের রিমান্ড হয়েছে।”


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003777027130127