দেশেই চাষ হচ্ছে সরু-চিকন চালের ধান ‘বিনাধান-২৫’। মূলত বোরো মৌসুমের এ চাল হতে পারে বাসমতীর বিকল্প। উৎপাদন ব্যয় অন্য ধানের মতো হলেও ফলন তুলনামূলক বেশি। ক্রেতাদের কাছে এ চালের বেশ চাহিদাও আছে। মূলত বাড়তি চাহিদার কারণে এর বাজারমূল্য তুলনামূলক বেশি। অনেকের মতে, ‘বিনাধান-২৫’ এখন পর্যন্ত দেশের সেরা জাত। দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় ধানটি বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
চাষাবাদ পদ্ধতিতেও সুবিধা, কৃষক নিজেই এই ধানের বীজ সংগ্রহ করতে পারেন। চালের আকার চিকন ও লম্বা হওয়ায় বাসমতীর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। ফলে বাসমতী চালের আমদানি কমে আসবে।
প্রথমবার চাষেই জাতটি সম্ভাবনাময় হয়ে উঠেছে। কৃষকদের প্রশংসাও মিলছে। কোথাও কোথাও হেক্টরপ্রতি ধানটির ফলন পাওয়া যাচ্ছে ৮ থেকে ৯ টন। চাল চিকন হওয়ায় অন্য ধানের চেয়ে মণপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেশি পাচ্ছেন কৃষক।
ধানটি উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)। এর উদ্ভাবক বিনার উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সাকিনা খানম।
সাকিনা খানম জানান, চাষের ১৩৮ থেকে ১৪৮ দিনেই এ ধান সংগ্রহ করা যায়। হেক্টরপ্রতি ফলন সাড়ে সাত থেকে সাড়ে আট টন। জমিতে পানি জমে থাকা বা বৈরী আবহাওয়ায় ধানগাছ সাধারণত সাময়িক হেলে পড়ে। পরে জমি থেকে পানি সরে গেলে এবং রোদ ফিরলে বিনাধান-২৫ জাতটি ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে ফের আগের অবস্থায় ফিরে আসে। স্বাভাবিক থাকে ফলন। এ ধানের ভাত ঝরঝরে, খেতেও সুস্বাদু। আছে সর্বাধিক পুষ্টিগুণ। এ ধানে রোগ ও পোকার আক্রমণ অনেক কম। ইউরিয়া, পানি ও বালাইনাশকও তুলনামূলক কম লাগে। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে বাণিজ্যিকভাবে কৃষক পর্যায়ে লবণাক্ত এলাকা ব্যতীত সারাদেশে চাষাবাদের জন্য বিনাধান-২৫ অবমুক্ত করা হয়। এটি বোরো ধানের জাত। গাছ লম্বা, কিন্তু শক্ত হওয়ায় সহজে হেলে পড়ে না।
কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২২-২৩ বোরো মৌসুমে সারাদেশের ২২টি জেলা এবং ৩৯৬টি উপজেলায় বিনাধান-২৫ চাষাবাদ করা হয়েছে।
সম্প্রতি মাগুরা জেলা ঘুরে দেখা যায়, সদর উপজেলার অনেক এলাকার জমিতে বিনাধান-২৫ চাষ করা হয়েছে। প্রায় প্রতিটি জমির ফলনই বাম্পার। মঘী গ্রামের কৃষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমি প্রথমবার এই ধান চাষ করেছি। ৫০ শতাংশ জমি আবাদে খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। ধান পেয়েছি ৩৭ মণ। প্রায় ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করা যাবে। সে হিসাবে এই ধান আবাদে বেশ লাভ হয়েছে।’
বিনার মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, ‘বোরো মৌসুমে আগাম, উচ্চফলনশীল, রোগবালাইমুক্ত প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ধান উদ্ভাবনের লক্ষ্য ছিল আমাদের। এটা আমরা বিনাধান-২৫ জাতে পাচ্ছি। এর বাজারমূল্য বেশি। ৪২-৪৩ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কোনো ধান টিকতে পারে না; কিন্তু বিনাধান-২৫ পারে। লবণাক্ত এলাক ছাড়া জাতটি সব অঞ্চলে আবাদ করা যাবে।’
মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, বোরোতে প্রায় ৭০ শতাংশ জমিতে ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ আবাদ হয়। সেই জায়গায় বিনাধান-২৫ কে নেয়া সম্ভব। ৭০ শতাংশ জায়গায় আমরা যদি সঠিকভাবে বীজ দিতে পারি, প্রণোদনা দিতে পারি, সরকারের যদি সর্বাত্মক সহায়তা থাকে, তাহলে আমার ধারণা, এটি তি থেকে চার বছরের মধ্যে বোরোর ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ জায়গা দখল করে নিতে পারবে।’
‘বিনাধান-২৫’ নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) রবীন্দ্র শ্রী বড়–য়া বলেন, ‘জাতটি কৃষকের মাঝে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে আমরা কাজ করছি। কৃষক এই ধানের বীজ নিজেরাই সংগ্রহে রেখে চাষাবাদ করতে পারবে।’
‘বিনাধান-২৫’ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিনাধান-২৫ এখন পর্যন্ত দেশের সেরা জাত। ধান উৎপাদনে এই জাত বিপ্লব ঘটাবে।