‘মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত সরকারি কলেজ’ নামকরণের দাবিতে সমাবেশ

বরিশাল প্রতিনিধি |

সরকারি বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তন করে ‘মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত সরকারি কলেজ’’ নামকরণ বাস্তবায়নের পক্ষে আজ বুধবার সমাবেশ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। তবে, সিটি মেয়রের পরোক্ষ নির্দেশে বিভিন্ন ব্যানারে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীও নামকরণের বিরোধিতা করে পাল্টা সমাবেশ করেছেন। বুধবার নগরীর প্রাণকেন্দ্র সদর রোড অশ্বিনী কুমার হলের সামনে বেলা ১১টা থেকে ১২ পর্যন্ত মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়।

সরকারি বরিশাল কলেজের নাম ‘মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত সরকারি কলেজ’ নামকরণ বাস্তবায়নের দাবিতে সমাবেশ করে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। কয়েকটি প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের নেতারা এ কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বক্তৃতা করেন। অপরদিকে নাম পরিবর্তনের বিরোধিতা করে বরিশাল সিটি মেয়রের উসকানিতে কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ব্যানারে গণস্বাক্ষর গ্রহণ ও সমাবেশ করা হয়। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বরিশাল কলেজের সাবেক ভিপি অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর এ সমাবেশে বক্তৃতা করেন।

এর আগে সরকারি বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তনের বিরোধিতা করে শনিবার কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ব্যানারে নগর আওয়ামী লীগের একাংশ সমাবেশ করে। মঙ্গলবার দুপুরে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রতিনিধিদের সভায় ১০১ সদস্যের মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের নামকরণ বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়।

বুধবার সকালে বাসদ অশ্বিনী কুমার হলের সামনে নামকরণ বাস্তবায়নের দাবিতে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছিল মঙ্গলবার বিকেলে। অপরদিকে নামকরণের বিরোধিতা মঙ্গলবার রাতে একই স্থানে একই সময়ে গণস্বাক্ষর গ্রহণ কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেয়।

সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকন ও আওয়ামী লীগ নেতা হাসান আহমেদ বাবু, জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব খানের নের্তৃত্বে কয়েকশত নেতাকর্মী সকাল ১০টার আগে অশ্বিনী কুমার হল সংলগ্ন সদর রোডের পূর্ব পার্শ্বে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ শুরু করেন।

বাসদ নেত্রী ডা. মণীষা চক্রবর্তীর নেতৃত্বে কয়েকশত নেতাকর্মী সকাল সাড়ে ১০টায় ফকির বাড়ি সড়কের কার্যালয় থেকে তাদের  দাবির পক্ষে মিছিল বের করেন। মিছিলটি সদর রোড অশ্বিনী কুমার হল অতিক্রম করে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আবার অশ্বিনী কুমার হল এলাকায় ফিরে আসে। তারা নাম বিরোধি অবস্থানের ঠিক বিপরীত মুখে সদর রোডের পশ্চিম পাশে দাঁড়িয়ে সমাবেশ শুরু করেন। মাইকে উভয়পক্ষের উত্তেজিত বক্তব্যে সেখানে ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর সেখানে এসে নাম বিরোধিদের সমাবেশে বক্তৃতা করে চলে যান।

বেলা ১২টায় সমাবেশ শেষ করে বাসদ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয় গিয়ে স্মারকলিপি দেয়। তারা চলে যাওয়ার পর নাম বিরোধিতাকারী সামাবেশ শেষ করলেও স্বাক্ষর গ্রহণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখে।

নাম পরিবর্তনের সূত্রপাত: 

জান যায়, মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের বাড়িতে এ কলেজটি প্রতিষ্ঠিত। বিভিন্ন সময়ে অশ্বিনী কুমারে নামে কলেজটি নামকরণের দাবি ওঠে কিছুদিন পরে আবার তা থেমেওে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালের সংসদ সদস্য ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস জাতীয় সংসদে সরকারি বরিশাল কলেজকে ‘মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত সরকারি কলেজ’ নামকরণের প্রস্তাব করেন। তারই ধারাবাহিকতায় বরিশালের জেলা প্রশাসক গত ২৯ ফেব্রুয়ারি সরকারি বরিশাল কলেজকে ‘মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত সরকারি কলেজ’ নামকরণের প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। একাধিক সূত্রমতে, মেয়র ও ডিসির বিরোধিতায় ঘি ঢেলেছেন মেয়রের কতিপয় পরামর্শদাতা। 

মন্ত্রণালয় সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানায়, গত ২৯ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডকে সরকারি বরিশাল কলেজকে ‘মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত সরকারি কলেজ’ নামকরণের যৌক্তিকতা উল্লেখ করে সুপারিশ পাঠাতে বলা হয়েছে। সুপারিশের প্রেক্ষিতে সার্বিক বিবেচনায় পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আন্দোলনকারী নেতারা বরিশাল শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানকে নাম পরিবর্তনের পক্ষে অবস্থা না নেওয়ার জন্য বলেন। একই দাবিতে তারা তার কাছে একটি স্মরকলিপি দেন। এছাড়া জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কলেজের নাম পরিবর্তন না করার জন্যও স্মারকলিপিও দিয়েছেন। অথচ যারা আজ এই দাবির পক্ষে নেমেছেন, তারাই কিন্তু একদিন অশ্বিনী কুমারের নামে নাম পরিবর্তনের পক্ষে ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অর্থাৎ ২০১২ সালে আওয়ামী লীগের সাংসদ অ্যাড. তালুকদার মো. ইউনুস জাতীয় সংসদেও বরিশালবাসীর পক্ষে অশ্বিনী কুমারের নামে কলেজের নাম পরিবর্তনের দাবি তোলেন।

জানা যায়, ১৯২৩ সালে অশ্বিনী কুমার দত্তের মৃত্যু হয়। ১৯৫৫ সালে তাঁর একমাত্র ভাতিজা সরল দত্ত দেশত্যাগ করলে অশ্বিনী কুমার দত্তের বাসভবনটি বরিশাল ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের ‘অশ্বিনী কুমার কসমোপলিটন (সব ধর্মের ছাত্রদের জন্য) ছাত্রাবাস’ হিসেবে পরিচিতি পায়। ১৯৬২ সালে কয়েকজন শিক্ষানুরাগীর সহযোগিতায় অশ্বিনী কুমার দত্তের বাসভবনে প্রতিষ্ঠা করা হয় নৈশ কলেজ। স্বাধীনতার পরে কলেজটি অশ্বিনী কুমারের নামে করার দাবি উঠলেও নামকরণ করা হয় বরিশাল কলেজ নামে।

বরিশালের প্রবীণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক এসএম ইকবাল জানান, ১৯২৩ সালে অশ্বিনী কুমার দত্তের মৃত্যু হয়। ১৯৫৫ সালে অশ্বিনী কুমার দত্তের বাসভবনটি বরিশাল ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের ‘অশ্বিনী কুমার কসমোপলিটন ছাত্রাবাস’ হিসেবে পরিচিতি পায়। এই ছাত্রাবাসে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহম্মেদসহ বর্তমানের অনেক আওয়ামী লীগ নেতারা এখানে ছিলেন বলেও দাবি করেন তিনি। ১৯৬২ সালে এখানে গড়ে তোলা হয় বরিশাল নৈশ কলেজ। স্বাধীনতার পর কলেজটি অশ্বিনী কুমারের নামে নামকরণের দাবি উঠলেও সে দাবি পূরণ হয়নি। অশ্বিনী কুমার দত্তের বাসভবনে বর্তমান সরকারি বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তন করে তাঁর নামে করলে এমন কোন ক্ষতি নেই। এই দাবির পক্ষে বরিশালের সর্বস্তরের মানুষ ছিল। এখন যারা আন্দোলনে নেমেছে তাদের মধ্যে অনেকেই অশি^নী কুমারের নামে নামকরণের পক্ষেই ছিলেন। কি কারণে তারা এর বিরোধিতা করছেন জানি না। সবাই মিলে উদ্যোগ নিয়ে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করা উচিত।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029489994049072