সুইস ব্যাংকে টাকা জমানোর জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন করার জন্য ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন, কেউ দুর্নীতি করবে সেজন্য দেশ স্বাধীন হয়নি।
শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে রাজাধানীর শিল্পকালা একাডেমি মিলনায়তনে ২০তম আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, এ দেশ স্বাধীন হয়েছে একটি সুখী সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে, কেউ দুর্নীতি করবে, দেশের টাকা পাচার করে সুইস ব্যাংকে জমাবে, সেজন্য স্বাধীন হয়নি।
নিজের শৈশবের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, আমরা যারা ষাটোর্ধ্ব তারা জানি, আগে বর্ষাকালে কাঁদার মধ্যে যখন গরু বেঁধে রাখা হতো, তখন সেগুলোর পায়ে পোকা জন্মাতো। আমাদের মামা দাদিরা তখন কাগজে দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোরদের নাম লিখে গরুর গলায় ঝুঁলিয়ে দিতেন। তখন ঘৃণা ভরে পোকা গরুর পা থেকে চলে যেত।
মানুষ দুর্নীতিবাজদের ঘৃণা করতেও ভুলে গেছে জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আসুন আমরা দুর্নীতিবাজদের ঘৃণা করি। কারণ দুর্নীতিবাজরা জাতি বিরোধী, রাষ্ট্র বিরোধী এবং রাষ্ট্রের উন্নয়ন বিরোধী। আসুন আমরা তাদের (দুর্নীতিবাজ) ঘৃণা করতে শিখি।
তিনি বলেন, স্বাধীনতাই বংলাদেশের সবচেয়ে বড় গর্ব, দুর্নীতি এই গর্বের জায়গাকে আঘাত করে। দুর্নীতি মানুষের সেবার মান ভঙ্গুর করে দেয়। আবার অর্থের প্রতি লোভ-লালসা মানুষকে অমানুষে পরিণত করে।
তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি হচ্ছে সামগ্রিক উন্নয়নের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ, যা একটি জাতির আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ অন্যান্য ক্ষেত্রকে ব্যাহত করে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, কোনো মানুষই দুর্নীতিবাজ হয়ে জন্মায় না। তারা জন্মের পর দুর্নীতিগ্রস্ত হয়। ধন সম্পদ অর্জনের লোভ-লালসা মানুষকে অমানুষে পরিণত করে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে পারে যুব সমাজ, দুর্নীতিবাজদের বিবেক আর দুর্নীতিবিরোধী আইনের যথাযথ ও নিরপেক্ষ ব্যবহার। এছাড়া আইনের প্রয়োগ এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধমূলক সময়োপযোগী আইনি ব্যবস্থা।
দুর্নীতি এক ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি উল্লেখ করে হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, এই ব্যাধি থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি যতই শক্তিশালী হোক, তার দুর্নীতি শনাক্ত এবং প্রতিরোধ করতে হবে।
দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর সভাপতিতে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে রেকর্ড করা বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রপতি আবুদল হামিদ। আরও বক্তব্য রাখেন দুদক কমিশনার জহুরুল হক ও ড. মোজাম্মেল হক খান এবং সচিব মো. মাহবুব হোসেন প্রমুখ।